ঢাকা, রবিবার, ২৪ ফাল্গুন ১৪৩১, ০৯ মার্চ ২০২৫, ০৮ রমজান ১৪৪৬

জাতীয়

নিউমার্কেটে র‌্যাব পরিচয়ে ডাকাতি, গ্রেপ্তার ৮ 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০২৫
নিউমার্কেটে র‌্যাব পরিচয়ে ডাকাতি, গ্রেপ্তার ৮ 

ঢাকা: রাজধানীতে র‌্যাব পরিচয়ে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় মাইক্রোবাসসহ সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের আট সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির নিউমার্কেট থানা পুলিশ।

গ্রেপ্তার হলেন-মো. আল আমিন হাওলাদার (৪০) মো. ওমর ফারুক (৩৪) মো. ফারুক বেপারী (৩৯) মো. শহিদুল ইসলাম শেখ (৪১) মো. মানিক (২৭) জহিরুল ইসলাম জহির (৪৮) আল-আমিন আহম্মেদ (৪০) ও  মো. বারেক (৪৪)।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাস, র‍্যাবের জ্যাকেট, হাতকড়া, হকিস্টিক, বেতের লাঠি, নগদ ৩০ হাজার টাকা, একটি মোবাইল ফোন ও কিছু প্রসাধনী সামগ্রী উদ্ধার করা হয়।

শনিবার (৮ মার্চ) ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নিউমার্কেট থানা সূত্রে জানা যায়, ভিকটিম মো. ফারুক মিয়া (৫৫) গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে দুবাই থেকে ঢাকা এয়ারপোর্টে পৌঁছেন। তিনি এয়ারপোর্ট থেকে বাসার উদ্দেশে একটি প্রাইভেটকারে করে রওনা করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিল দুবাই থেকে আনা ১০০ গ্রাম স্বর্ণের কয়েকটি চুড়ি, দুটি স্যামস্যাং এস-২৫ আল্ট্রা মোবাইল ফোন, একটি আইফোন-১২, একটি অ্যাপল ম্যাকবুক, একটি আইপ্যাড, একটি অ্যাপল ওয়াচ, তিনটি কম্বল ও বিভিন্ন ধরনের মালামাল। যার আনুমানিক মূল্য ১৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

তিনি রাত ৩টার দিকে নিউমার্কেট থানাধীন হাতিরপুল রোডে অবস্থিত তার বাসার সামনে উপস্থিত হলে তাকে অনুসরণ করা একটি কালো রঙের নোহা গাড়ি তার গাড়ির পথরোধ করে। পথরোধ করা গাড়ি থেকে র‍্যাবের পোশাক পরিহিত ৫-৬ জন লোক নেমে নিজেদের র‍্যাব সদস্য পরিচয় দিয়ে ফারুক মিয়াকে জোর করে গাড়ি থেকে টেনে নামায় এবং তার সঙ্গে থাকা ওই মালামাল তাদের গাড়িতে নিয়ে চলে যায়। তারা ভিকটিম ফারুককে গাড়িতে করে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে শারীরিক নির্যাতন করে এবং ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে। পরবর্তীতে ভোরে ভিকটিমের মালামাল ছিনিয়ে নিয়ে তাকে হাতিরঝিল এলাকায় তাদের গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়। এ ঘটনায় গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ভিকটিম মো. ফারুক মিয়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে ডিএমপির নিউমার্কেট থানায় একটি মামলা করা হয়।

থানা সূত্রে আরও জানা যায়, তদন্তাধীন এ মামলায় সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় ২৩ ফেব্রুয়ারি নিউমার্কেট থানাধীন এলিফ্যান্ট রোড বাটা সিগন্যাল মোড়ের পাকা রাস্তা থেকে মানিককে গ্রেপ্তার করা হয়।  

তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানাধীন কাছিপাড়া গ্রামের নিজ বাড়ি হতে আল আমিন হাওলাদারকে এবং বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি মডেল থানাধীন দপদপিয়া সেতুর টোল প্লাজা থেকে ওমর ফারুককে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে আল আমিন ও ওমর ফারুককে দুই দিনের পুলিশি রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাদের দেওয়া তথ্যমতে ২ মার্চ ঢাকার রামপুরা থানাধীন পূর্ব রামপুর এলাকা থেকে রামপুরা থানা পুলিশের সহায়তায় অভিযান পরিচালনা করে মো. ফারুক বেপারী ও মো. শহিদুল ইসলাম শেখকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পরবর্তীতে পুলিশি রিমান্ডে ফারুক ও শহিদুলকে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেওয়া তথ্য মতে ৭ মার্চ বংশাল থানা পুলিশের সহায়তায়  ইংলিশ রোডের বাউফল স্টিল ফার্নিচারের সামনে পাকা রাস্তা থেকে জহিরুল ইসলাম জহিরকে, দক্ষিণখানের কাওলা নামাপাড়া হাজীবাড়ী এলাকা থেকে আল-আমিন আহম্মেদকে এবং সবুজবাগ থানাধীন দক্ষিণ মাদারটেক এলাকা থেকে মো. বারেককে গ্রেপ্তার করা হয়।

থানা সূত্রে আরও জানা যায়, গ্রেপ্তাররা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা বিদেশ থেকে স্বর্ণালংকার ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে আসা যাত্রীদের বিমান বন্দর থেকে অনুসরণ করে রাজধানীতে তাদের সুবিধাজনক স্থানে পথরোধ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথা র‍্যাব, ডিবি ইত্যাদি পরিচয় দিয়ে সর্বস্ব ডাকাতি করে নেয়। এভাবে ওই ডাকাত চক্রটি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আনুমানিক ১২-১৩টি ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে মর্মে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়।

রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় জানা যায়, দেশের বিভিন্ন থানায় গ্রেপ্তার মো. ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে ছিনতাই ও ডাকাতিসহ মোট চারটি, মো. ফারুক বেপারীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও ডাকাতির মোট দুটি,  মো. শহিদুল ইসলাম শেখের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে ও ডাকাতিসহ মোট সাতটি, মো. মানিকের বিরুদ্ধে  ছিনতাই, দস্যুতা, ডাকাতি ও মাদকসহ মোট নয়টি, জহিরুল ইসলাম জহিরের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে ও ডাকাতিসহ মোট বারোটি, আল-আমিন আহম্মেদের বিরুদ্ধে চুরি, ডাকাতি ও মাদকসহ মোট পাঁচটি, মো. বারেকের বিরুদ্ধে চুরি, ডাকাতি, ধর্ষণ ও অস্ত্র আইনসহ মোট ১৪টি মামলা রয়েছে।

গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত, অন্যান্য লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধারের চেষ্টা ও ডাকাত দলের পলাতক অন্যান্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০২৫
এজেডএস/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।