ঢাকা: স্বৈরাচার শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়ে বিপন্ন হওয়া দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য জাতীয় ঐক্য গড়ে ওঠায় ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সম্ভব হয়েছিল। ১৯৭১ সালের চেতনা ও ২০২৪’র অনুপ্রেরণাকে ধারণ করে ফ্যাসিবাদ-দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ঐক্য পার্টির ৫ম বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন।
বক্তারা বলেন, শেখ হাসিনার পতনের আন্দোলনে দল, মত, ধর্ম নির্বিশেষে মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে সেই ঐক্য আর নেই। বরং রাজনৈতিক দলের বাইরেও আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রাখা নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে অনৈক্যের সূর বাজতে শুরু করেছে। যা ভবিষ্যতে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। তাই এখনই সবার মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলার শ্রেষ্ঠ সময়। অন্যথায় সবাইকে এর খেসারত দিতে হবে।
৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব, কর্মীদের অন্যায়-অপকর্মে জড়িয়ে পড়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বক্তারা বলেন, রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব ও নেতাকর্মীরা যদি সৎ, দেশপ্রেম নিয়ে সামনে চলেন তখন পুরো জাতি সে পথে পরিচালিত হবে। কিন্তু অসৎ ও দুর্নীতিপরায়ণরা দায়িত্বে থাকলে দেশও সেই পথে হাঁটবে। আর সততা ও দেশপ্রেম নিয়ে চলতে পারলে জাপান, নরওয়ে, সুইডেন কিংবা ডেনমার্কের মত বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।
বক্তারা আরও বলেন, জাতিগত ঐক্য অর্জনে আমাদের প্রয়োজন এ ধরনের নেতৃত্ব কিংবা দল যারা জাতিকে সত্যিকার অর্থেই উন্নয়নের দিকে ধাবিত করবে। চলমান অসুস্থ উন্নয়ন যা কি না পরাধীনতাকে আহ্বান করে। ঋণের বোঝায় জাতিকে মাথানত করে থাকতে বাধ্য করে বছরের পর বছর।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকা রাজনৈতিকদলগুলোর কড়া সমালোচনা করে বক্তারা বলেন, এক এক করে তিনটি দল ও মঈন-ফখরুদ্দিনের নেতৃত্বে সেনা সমর্থিত সরকার গত ৫৪ বৎসর রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসেছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও আলোচিত এক এগারোর সময়ের সরকার কেউই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো সফলতা দেখাতে পারেনি। বরং দুর্নীতি আরও জেঁকে বসেছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনের দাবির প্রসঙ্গে বক্তারা বলেন, কোনো দলই ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে নিজেদের ব্যর্থতা যাচাই-বাছাই করে না। এমনকি সফলতা অর্জনের জন্য কোনো পরিকল্পনাও করে না। এদের সবার ভাবনা দেশি-বিদেশি শক্তির সহায়তায় ক্ষমতায় যাওয়া। এ ধরনের আত্মঘাতী মানসিকতা পরিহার করা না গেলে জাতি হিসেবে আমরা বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবো না। আর লুটপাটের রাজনীতি চলতে থাকলে অচিরেই হয়ত বাংলাদেশকে সিকিমের মতো ভাগ্য বরণ করতে হবে।
বাংলাদেশ ঐক্য পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও মুখপাত্র মুহাম্মদ আবদুর রহীম চৌধুরীর সঞ্চালনায় ও দলের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) আবু ইউসুফ যোবায়ের উল্লাহর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন মুসলিম লীগের সভাপতি জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, গণফ্রন্টের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আকমল হোসেন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ডা. ওয়ালিউর রহমান, বিআইআইটির মহাপরিচালক ড. এম আবদুল আজিজ, হিন্দু মহাজোটের যুগ্ম মহাসচিব নরেন্দ্রনাথ মজুমদার, ড. জিন বোধি ভিক্ষু, জাতীয় কবিতা মঞ্চের সভাপতি কবি মাহমুদুল হাসান নিজামী, সাইফুদ্দিন মুহাম্মদ এমদাদ, সানজিদা আনোয়ার চৌধুরী প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২৫
টিএ/এএটি