ঢাকা, সোমবার, ২৯ পৌষ ১৪৩১, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

পদ্মা-আড়িয়াল খাঁর বালু তোলা থামেনি, বদলেছে চক্র

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২৫
পদ্মা-আড়িয়াল খাঁর বালু তোলা থামেনি, বদলেছে চক্র নদীর পাড়।

মাদারীপুর: মাদারীপুর জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত প্রধান দুই নদীর একটি পদ্মা অন্যটি আড়িয়াল খাঁ। জেলার শিবচর, মাদারীপুর, কালকিনিসহ বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে এই দুই নদ-নদীতে চলছে বালু হরিলুটের কারবার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিবচরের পদ্মানদী এবং আড়িয়াল খাঁ নদের বিভিন্ন স্থানে সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত চলে অবৈধ ড্রেজার। স্থানীয় প্রভাবশালীরা এই বালু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। পদ্মার বালু বাল্কহেডে ভরে নিয়ে যাওয়া হয় দূরদূরান্তে। আর আড়িয়াল খাঁর বালু বাল্কহেডে ভরে নদের পাড়ে জড়ো করা হয়। পরে ট্রাকে করে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করা হয়। এছাড়া নদ-নদীর চরাঞ্চলের মাটি কেটেও বিক্রি করছে ওই মহল।

শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী, চরচান্দ্র এলাকার কাওলিপাড়াসহ পদ্মাসেতুর দুই থেকে তিন কিলোমিটার মধ্যেই দিনরাত চলছে এই অবৈধ বালু উত্তোলন। এছাড়া কাঁঠালবাড়ী, চরজানাজাত ইউনিয়নের পদ্মার চর এলাকার নদীবর্তী চর কেটেও মাটি নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে।

অন্যদিকে পদ্মানদীর মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং এবং শিবচর সীমান্ত এলাকাতেও ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এছাড়া আড়িয়াল খাঁ নদ থেকে বালু উত্তোলনের ফলে শিবচরের কলাতলা এলাকার নদী শাসন বাঁধের ২ শত মিটার ধসে গেছে। স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল এই বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বালু ব্যবসায়ী জানান, পদ্মা নদীতে বালু উত্তোলনের জন্য ভুয়া কাজগপত্র তৈরি করেছে চরজানাজাত, কাঁঠালবাড়ী এলাকার একটি চক্র। ওই ভুয়া কাগজ দিয়েই বালু তুলছে।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে শিবচরের স্থানীয় প্রভাবশালী কতিপয় ব্যক্তি পদ্মানদী থেকে বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত ছিল। সে সময়ও একই প্রক্রিয়ায় রাতের বেলা ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হতো। বিশেষ করে পদ্মানদীবর্তী এলাকার আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এই কাজে জড়িত ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর ব্যক্তি বিশেষের পরিবর্তন ঘটলেও নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি। বর্তমানে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা আত্মগোপনে থাকলেও আরেকটি মহল বালু উত্তোলনের মহোৎসবে যুক্ত হয়েছে।

পদ্মায় ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন এক ব্যক্তি বলেন, প্রতি ঘনফুট বালু পাইকারী বিক্রি করা হয় ৮০/৯০ পয়সা দরে। আর খননের জন্য ড্রেজার মালিক প্রতি ঘনফুটে পান ৬০ পয়সা। খুচরা বাজারে এই বালু বিক্রি হয় প্রতি ঘনফুট ১০/১২ টাকা দরে! স্থানীয়রা ঘনফুট চুক্তিতে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করে। এসব বালু উত্তোলনের আগেই বিক্রি হয়ে যায়। এখানে বিভিন্ন জনকে টাকা-পয়সা দিয়ে ব্যবসা করতে হয়। নৌ-পুলিশকেও ম্যানেজ করতে হয়।

শিবচরের কাঁঠালবাড়ী এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য তোতা মিয়া হাওলাদার নামের এক ব্যক্তি বলেন, কিছু অসাধু চক্র পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। আর সেই বালু উত্তোলনকারীদের সহযোগিতা করছে এলাকার অনেক প্রভাবশালী লোক। নৌ পুলিশের চোখের সামনেই ঘটছে এমনটা। কিন্তু দেখে মনে হয় নৌপুলিশ কিছুই জানে না! তাহলে নৌপুলিশের কাজটা কি? আমরা এই অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে মানববন্ধনও করেছি।

শিবচরের চরজানাজাত নৌ পুলিশের দাবি, শিবচরের পদ্মায় বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের চরচান্দ্রা এলাকার পদ্মা নদী থেকে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছিলো একটি চক্র। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) বিকেলে সেখানে অভিযানে চালিয়ে ড্রেজারসহ দুইজনকে আটক করা হয়েছে।

চরজানাজাত নৌ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক শহিদুল ইসলাম খান বলেন, আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। বালু উত্তোলনের বিষয়টি জেনেছি। আমরা নিয়মিত অভিযান চালাবো, যাতে করে অবৈধ ড্রেজার এখানে বালু উত্তোলন করতে না পারে।

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভীন খানম বলেন, আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গভীর রাতে শিবচরের বিভিন্ন স্থানে বালু উত্তোলন করা হয় বলে আমাদের কাছে তথ্য এসেছে। আমরা ব্যবস্থা নেবো। তাছাড়া সার্বক্ষণিক আমরা বিষয়টি নজরদারিতে রেখেছি।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নাজমুল হোসেন জানান, মাদারীপুরে কাউকে বালু উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হয়নি। অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২৫
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।