ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘একজনের কথায় দল চলতো, নেতৃত্বের দায় দলের ওপর চাপানো ঠিক না’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৬, ২০২৪
‘একজনের কথায় দল চলতো, নেতৃত্বের দায় দলের ওপর চাপানো ঠিক না’

বরিশাল: সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের প্রধান সমন্বয়কারী দিলিপ কুমার সরকার বলেছেন, বিগত দিনে সারা দেশ ও দলের মধ্যে যেমন একটা কর্তৃত্ববাদী শাসন ছিল। ফলে একজনের কথায় দল চলতো, এ কারণে নেতৃত্বের দায় দলের ওপর চাপানো ঠিক না।

বুধবার (৬ নভেম্বর) বরিশালে ভোটার সচেতনতা ও নাগরিক সক্রিয়তা কার্যক্রম, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টিসহ সংস্কার কমিশনের কাছে জনআকাঙ্ক্ষাভিত্তিক সুপারিশমালা প্রণয়নের দাবিতে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। বেলা ১১টায় সুজনের সহযোগিতায় বরিশাল নগরের সদর রোডের আর্যলক্ষ্মী মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দিলিপ কুমার সরকার বলেন, ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পলায়নের মধ্য দিয়ে যখন আওয়ামী সরকারের পতন হলো, তার পরদিন আমরা ঢাকায় একটা প্রেস কনফারেন্স করেছি। সারাদেশে তাৎক্ষণিকভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ বিশেষ করে আওয়ামী ঘরানার  যারা ছিল, তাদের ওপর যে হামলা-নির্যাতন হচ্ছিল তা নিয়ে ওই প্রেস কনফারেন্স করেছি এবং সবাইকে বলেছি এটা বন্ধ করতে হবে। সেই সঙ্গে আমাদের সুজনের মানুষদের বলেছি আপনারা সতর্ক থাকবেন, এরকম কেউ আক্রান্ত হলে তার পাশে দাঁড়াবেন। প্রয়োজনে সমাজের মানুষ নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন।

তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে সারা দেশের মানুষের একটি অসন্তুষ্টি আছে। ২০১৪ সাল, ২০১৮ সাল, ২০২৪ সালের নির্বাচন একেকটা একেক ধরনের হলেও সবগুলি নিয়েই মানুষের মাঝে অসন্তুষ্টি আছে। সারাদেশের মানুষ চায় একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। আর সেজন্যই কিন্তু নির্বাচনী আইন করা, সঠিক মানুষদের নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব দেওয়া এবং নির্বাচনটা সঠিকভাবে দেওয়ার কথা।  

সুজনের এ প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, যখন নির্বাচন হবে, সেটা যেন অংশগ্রহণমূলক হয় এটা আমরা চাই। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গ আসছে। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে লক্ষ লক্ষ মানুষ আছে। কিন্তু তাদের মধ্যে গত ১৫ বছরে অনেকে অপরাধকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে, আন্দোলনের সময় অনেকে অন্যায় করে থাকতে পারেন, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে, অনেকে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। এক কথায় যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তাদের শাস্তির আওতায় আনা হোক, তাদের বিচার করা হোকে।  

তিনি বলেন, বিগত দিনে আমরা মনে করি সারাদেশ ও দলের মধ্যে যেমন একটা কর্তৃত্ববাদী শাসন ছিল। ফলে একজনের কথায় দল চলতো, এ কারণে নেতৃত্বের দায় দলের ওপর চাপানো ঠিক না।  

দিলিপ কুমার সরকার বলেন, বাংলাদেশে বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন যেমন গ্রহণযোগ্য হয়নি, যদি আমরা ওই দোহাই দিয়ে আওয়ামী লীগকে নির্বাচন থেকে বাইরে রাখতে চাই তখন দেখবেন যে বড় অংশের একটা ভোটার হয়তো ভোটকেন্দ্রে যাবে না। একটা নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য আন্তর্জাতিক নির্দেশকগুলোকে যদি আমরা দেখি, সেখানে মানুষের অংশগ্রহণের কথা যেমন বলা আছে, তেমনি মানুষের সামনে অনেক বিকল্প থাকতে হবে। মানুষ যাকে যাকে দেখতে চায় ওই তালিকায় সবার উপস্থিতি থাকতে হবে। সেজন্য আমরা মনে করি- যারা অন্যায় করেছে তাদের বিচার হোক, কিন্তু কোনো দল নিষিদ্ধ করা বা দলকে নির্বাচনে অংশ না দেওয়ার স্ট্যান্ড থাকা উচিত নয়। যারা অন্যায়কারী ছিল এবং যে ফেসগুলো আমরা দেখেছি অন্যায়কে উসকে দিতে, সংঘর্ষকে উসকে দিতে তারা যদি রাজনীতির অঙ্গনে আসে এবং তারা যদি সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে, সেটা হয়তো মানুষ ভালোভাবে নেবে না। এখন সৎ মানুষ, ভালো মানুষ, নতুন নেতৃত্ব, নতুন আওয়াজ তুলে এ জায়গায় আসতে হবে। অতএব পরিশুদ্ধ হয়ে সেইরকম নেতৃত্ব নির্বাচন করে দলকে এগিয়ে নিলে তখন একটা ইতিবাচক সাড়া মানুষের দিক থেকেও হয়ত পাবে।

সংবাদ সম্মেলনে সুজনের ধারণাপত্রে ১১টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের অগ্রাধিকারসমূহের মধ্যে বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন বাতিল করে নতুন করে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন প্রণয়ন করা, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে সৎ যোগ্য নিরপেক্ষ ও সাহসী ব্যক্তিদের স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ প্রদান করার কথা বলা হয়। সংবিধানের মধ্য এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুইবার প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন না, এমন বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংস্কার করার প্রস্তাবও করা হয়।
 
এছাড়া জনপ্রশাসন সংস্কারের ক্ষেত্রে ছয়টি, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনে পাঁচটি, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের অগ্রাধিকারে ছয়টি, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনে ১০টি, স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশনে সাতটি, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনে ছয়টি, শ্রমিক অধিকার বিষয়ক সংস্কার কমিশনে ১০টি, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনে ছয়টি এবং স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনে নয়টি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।

সুজন বরিশাল জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ গাজী জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্ব এসময় উপস্থিত ছিলেন মহানগরের সভাপতি অধ্যাপক মোতালেব হাওলাদার, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম, জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রনজিৎ দত্ত এবং দি হাঙ্গার প্রজেক্টের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী (বরিশাল অঞ্চল) মেহের আফরোজ মিতা।  

বাংলাদেশ সময়: ২০২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০২৪
এমএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।