ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে আবারও ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়বে ফেনী’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪
‘কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে আবারও ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়বে ফেনী’

ফেনী: ফেনীসহ দেশের ১১ জেলায় সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে স্বল্প, দীর্ঘ ও মধ্যমেয়াদি পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।  

রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ফেনী সাংবাদিক ফোরাম ও ঢাকার আয়োজনে ‘সাম্প্রতিক বন্যা: কারণ ও করণীয়’ শিরোনামের এই গোলটেবিল বৈঠকে পুনর্বাসনসহ নানা সুপারিশ উঠে আসে।

এতে বলা হয়, কার্যকর পদক্ষেপ না নিতে পারলে আবারও বড় ধরনের বন্যার মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশ।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও সাবেক রাষ্ট্রদূত অধ্যাপক ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী গোলটেবিলে প্রধান অতিথি ছিলেন।  

ফেনী সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ ভুইয়ার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আদিত্য আরাফাতের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র- ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার এবং রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ।  

বক্তব্য দেন ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ- আইসিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি এম আব্দুল্লাহ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. নাজিম উদ্দিন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সেক্রেটারি আইয়ূব ভুইয়া, সিনিয়র সাংবাদিক মোতাহের হোসেন মাসুম, ফেনী সমিতির সহ সভাপতি মেসবাহ উদ্দিন সাঈদ, রোম কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান দিদারুল আলম মজুমদার, কানাডার মানবাধিকার আন্দোলনের নেতা হুমায়ুন কবির পাটোয়ারি প্রমুখ।  

প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমার ৮০ বছরের জীবনে এতো পানি কখনও দেখিনি। সরকারি-বেসরকারি নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া নাহলে ফেনীসহ দেশের বেশিরভাগ অঞ্চল আবারও হয়ত ডুবে যাবে। ’ 

বাংলাদেশকে না জানিয়ে নদীর পানি ছেড়ে দেওয়ায় ভারতের সমালোচনা করেন তিনি।  

যৌথ নদী কমিশনে ভালো খাওয়া-দাওয়া ছাড়া তেমন কিছুই হয় না বলে মন্তব্য করেন তিনি।  

অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, প্রতিবেশী দেশ অনেক বছর ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করে আসছে। তবে স্বৈরাচারের বিদায়ের পর দেশপ্রেমিক জনগণ নিজেদের হিস্যা আদায় করবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।  

বন্যার্ত মানুষের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, নতুন সরকারের আমলে সব দাতা সংস্থা এবং দেশ বাংলাদেশকে সহায়তার হাত বাড়াচ্ছে, তাই আর্থিক কোনো সংকট হবে না। সরকারের প্রতি আস্থা রেখে সহযোগিতার আহ্বান জানান জ্যেষ্ঠ এই অর্থনীতিবিদ।  

অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দীর্ঘমেয়াদে সহযোগিতার প্রয়োজন হবে।  

সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি এবং মৎস্য ও পশু খাতে মারাত্মক ক্ষতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুঁজি হারানো কৃষক ও খামারিদের টেনে তুলতে না পারলে সংকট ঘনীভূত হবে। এই খাতে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।  

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, এবারের বন্যা শুধু বৃষ্টি বা উজানের ঢল থেকে হয়নি। ভারত পানি নিয়ে যে আচরণ করেছে তা রীতিমতো পানি আগ্রাসনের পর্যায়ে পড়ে।  

আরও বলা হয়, এবারের বন্যায় মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ১৪ হাজার কোটি টাকা। আর জেলা হিসেবে ফেনীর ক্ষতি ২ হাজার ৬শ ৮৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে কৃষিতে ১২শ কোটি, শিক্ষায় ৩৮ কোটি, সড়ক অবকাঠামো ১শ ৪০ কোটি, মোটরযানে ৬১ কোটি, ঘরবাড়িতে ৬শ ৯২ কোটি এবং ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে ৫শ ৫৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।  

এছাড়া বন্যার জন্য দায়ী দেশকে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করা, পরশুরামে বিএসএফের কেটে দেওয়া বাধ দ্রুত মেরামত, ফেনী নদী থেকে অবৈধভাবে পনি উত্তোলন বন্ধ করা, আন্তর্জাতিক পানি প্রবাহ আইনে সই নিশ্চিত করা, বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণার মাধ্যমে বন্যা থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করা, কৃষি ও মৎস্য সকল খাতের ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া, সকল নদী থেকে বাধ ও ব্যারাজ তুলে দেওয়া এবং বন্যার আগাম তথ্য আদান-প্রদানসহ ১৫ দফা করণীয় তুলে ধরা হয় মূল প্রবন্ধে।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪
এসএইচডি/এসএএইচ 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।