ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

তোফাজ্জলকে পেটানোর পর মামা-ভাবির কাছে মুক্তিপণ চায় ঘাতকরা

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪
তোফাজ্জলকে পেটানোর পর মামা-ভাবির কাছে মুক্তিপণ চায় ঘাতকরা নিহত তোফাজ্জলের ভাবি লতিফা বেগম

পাথরঘাটা (বরগুনা): ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে আটক মেধাবী ছাত্র তোফাজ্জল হোসেন (৩০) নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার আগে ঘাতকরা মুক্তিপণের জন্য তোফাজ্জেলের ভাবি ও মামার কাছে মুক্তিপণ দাবি করেছিল বলে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন তোফাজ্জলের ভাবি লতিফা বেগম ও মামা আব্দুর রব।

লতিফা বেগম বলেন, প্রথমে বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টা ২ মিনিটের আমার মোবাইলফোন নম্বরে কল দিয়ে তোফাজ্জেলের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয় ঘাতকরা। তোফাজ্জেল বলে, ‘আমাকে বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্ররা ধরে মারধর করছে, টাকা চায়’ -এতটুকু বলার পরই ফোনটি কেটে যায়। এরপর ১০টা ২৮ মিনিটে আরেকটি কল আসে। তখন ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।

তিনি বলেন, বুধবার রাতে টাকা চেয়েছিল দিতে পারিনি বলেই আমার দেবরকে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে ঘাতকরা। আমার স্বামী মারা গেছেন, বাবা থেকেও নেই, পুরুষ বলতে আমাদের কেউ নেই। বর্তমানে আমার দুই সন্তান ও মাকে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় আছি।  

এদিকে তোফাজ্জেলের মামা আব্দুর রব জানান, বুধবার রাতে তার কাছেও ৩৫ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে। টাকা না দিলে তোফাজ্জেলকে মেরে ফেলবে বলে জানানো হয়েছিল। খবর শুনে আমার মেয়ে তানিয়া ঢাকায় থাকায় ওর সঙ্গে বিষয়টি আলাপ করি। পরে বৃহস্পতিবার সকালে খবর পেলাম তোফাজ্জেলকে হত্যা করা হয়েছে। আমার মেয়ে খবর শুনেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ছুটে যায়।

পাথরঘাটা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আল-মামুন বলেন, আমাকে ঢাকা থেকে কল দিয়ে জানানো হয়েছে তোফাজ্জেল নামে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে ঢাবিতে চোর সন্দেহে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। পরে আমি নাম-ঠিকানা যাচাই করে জানতে পারি তার বাড়ি কাঁঠালতলী এলাকার তালুক চরদুয়ানী গ্রামে। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল। তার পরিবারকে সংবাদ দিয়েছি। তারা ঢাকাতে যোগাযোগ করেছেন, সেখান থেকে তারা লাশ নিয়ে আসবেন। লাশের আইনি প্রক্রিয়া সেখান থেকেই শেষ করে পাঠাবেন তারা। এছাড়া তোফাজ্জলের ভাবি লতিফা থানায় এসেছিলে তাদের কাছ থেকেও তথ্য নিয়েছি।

প্রসঙ্গত, বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার দিকে ফজলুল হক হলে তোফাজ্জলকে চোর সন্দেহে আটক করেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। পরে চোর গ্যাংয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে তাকে জেরা করা হয়। একপর্যায়ে তিনি কয়েকটি নম্বর মুখস্ত বলেন, যেগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়। এতে তাকে চোর হিসেবে 'শনাক্ত' করে গণপিটুনি দেন শিক্ষার্থীরা।  
গণপিটুনির পর ক্যান্টিনে নিয়ে খাবার খাওয়ানো হয় তোফাজ্জলকে। এরপর চলে দীর্ঘ জেরা। পরে তার অবস্থার অবনতি ঘটলে রাত ১২টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।