ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

গরমে দুর্ঘটনা এড়াতে গতি কমিয়ে চলছে ট্রেন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০২৪
গরমে দুর্ঘটনা এড়াতে গতি কমিয়ে চলছে ট্রেন

ঢাকা: চলমান তাপদাহে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এজন্য দুর্ঘটনা রোধে যাত্রীবাহী আন্তঃনগর ট্রেনসহ সব ধরনের ট্রেন গতি কমিয়ে চালাতে বলেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

২০২২ সালে ব্রিটেনে গরমের কারণে রেল চলাচল বিঘ্নিত হয়েছিল। এছাড়া পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও রেললাইন বেঁকে যাওয়ার ঘটনা আছে। বাংলাদেশেও গত বছর তাপদাহে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছিল।

সূত্র জানিয়েছে, এ বিষয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন সেকশনের লোকোমাস্টারদের নির্দেশনা দিয়েছেন রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার।

বিভিন্ন সেকশনের লোকোমাস্টাররা জানিয়েছেন, তাদের গতি কমিয়ে ট্রেন চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাপমাত্রার কারণে রেললাইন বেঁকে যায়। মূলত সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এই নির্দেশনা চলমান থাকে। তারপরও এটি তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে। তাপমাত্রা যখন থেকেই প্রতিকূল অবস্থায় থাকে তখনই এই নির্দেশনা কার্যকর হয়।

বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি নির্দেশনায় দেখা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের একটি সেকশনের একটি ট্রেনকে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চালাতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত বছর এই সময়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। সে সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনে পরপর দুই দিন পাত বেঁকে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এর ফলে  কয়েক ঘণ্টার জন্য রেল চলাচল বন্ধ করা হয়েছিল।

গত বছর ২৭ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দাড়িয়াপুর এলাকায় রেললাইন বেঁকে গিয়েছিল। সেসময় একটি মালবাহী ট্রেনের সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এরপর ২৯ এপ্রিল আবার একইস্থানে রেললাইন বেঁকে যায়। গরমে রেললাইন যাতে বেঁকে না যায়, সেজন্য রেললাইনে কচুরিপানা দিয়ে রাখা হয়েছিল। আবার ২০২২ সালে ২৯ আগস্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলার ছোটহরণ এলাকায় অতিরিক্ত গরমে রেললাইন বেঁকে ব্যাহত হয় ট্রেন চলাচল।

রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, এটার জন্য একটা স্ট্যান্ডিং অর্ডার রয়েছে। তবে এটা স্থান-কাল-পাত্রের ওপর নির্ভর করে নির্দেশনা কার্যকর হবে। কোনো সেকশনের পরিবেশ, ট্র্যাকের কন্ডিশন— এই সবকিছু বিবেচনা করে এটি কার্যকর হয়। আমাদের কর্মকর্তারা দেখেন ট্র্যাকের টেম্পারেচার কেমন, পরিবেশ কেমন, তারপর নির্দেশনা দেন।

তিনি আরও বলেন, এটা ৩০ ডিগ্রি বা ৪০ ডিগ্রির কোনো বিষয় না। কারণ যেখানে নতুন ট্র্যাক রয়েছে সেখানে ৬০ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা নিতে পারে। আবার পুরনো ট্র্যাগগুলোতে অত বেশি তাপমাত্রা নিতে পারে না। অর্থাৎ স্থানীয় তাপমাত্রার কন্ডিশনের ওপর ভিত্তি করে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাপমাত্রা যদি ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে তাহলে রেললাইনের ওপরে সূর্যের তাপ ৫০ ডিগ্রি পর্যন্ত হতে পারে। যেহেতু রেলের পাত লোহা দিয়ে তৈরি এবং সূর্যের তাপে লোহা অতিরিক্ত গরম হয়।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান বলেন, বর্তমান রেলের যে লাইন দেখা গেছে, বেশির ভাগ জায়গায় নতুন লাইন করা হয়েছে। আর এসব নতুন লাইন সহজে বাঁকার কথা না। দেশের বাইরেও এমন ঘটনা আছে।

তিনি আরও বলেন, সাধারণত তাপমাত্রা যদি ৩৫ ডিগ্রি হয়ে থাকে তবে রেললাইনের জন্য সেটি ছয় ডিগ্রি বেড়ে যায়। এখন তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি হলে সেট রেললাইনের জন্য ৪৫ থেকে ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে পারে।

এই অধ্যাপক আরও বলেন, যেগুলো পুরাতন লাইন সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। যদি সাদা রং করে দেওয়া হয় তাহলে তাপ কমিয়ে আনা যাবে লাইনে। আবার সেন্সর লাগানো যেতে পারে। এতে করে আগে থেকেই তাপমাত্রা কত সেটা বোঝা যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০২৪
এনবি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।