ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

৭ কেজির সোনার বার বের করতে পারলেই মিলবে পুরস্কার

সুব্রত চন্দ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৪
৭ কেজির সোনার বার বের করতে পারলেই মিলবে পুরস্কার ছোট ছিদ্র দিয়ে ৭ কেজি ওজনের স্বর্ণের বার তোলার চেষ্টা করছেন বাজুস ফেয়ারে আসা একজন ক্রেতা

ঢাকা: কাচের বাক্সের মধ্যে রয়েছে ৭ কেজি ওজনের সোনার বার। ছোট ছিদ্র দিয়ে হাত ঢুকিয়ে চাইলেই ছুঁয়ে স্পর্শ নেওয়া যায় সেই বারের।

আর সেই ছিদ্র দিয়ে যদি কেউ সোনার বারটি বাইরে বের করতে পারেন, তাহলে মিলবে আকর্ষণীয় পুরস্কার।

রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি, বসুন্ধরার (আইসিসিবি) নবরাত্রি হলে চলা তিন দিনব্যাপী বাজুস ফেয়ারে এমনই গেম খেলার সুযোগ দিচ্ছে জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান রয়েল মালাবার জুয়েলার্স লিমিটেড।

শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বাজুস ফেয়ারে গিয়ে দেখা যায়, মেলায় আগত ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের অনেকেই রয়েল মালাবার জুয়েলার্স লিমিটেডের প্যাভিলিয়নের সামনে জড়ো হচ্ছেন। প্রায় সবাই একবার করে চেষ্টা করছেন সোনার বারটি কাচের বাক্স থেকে বের করতে। তবে এবারের মেলায় এখন পর্যন্ত কাউকেই সেই বার বের করায় সফল হতে দেখা যায়নি।

সাধারণত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমন কাচের বাক্সে হাত ঢুকিয়ে সোনার বার বের করার গেম খেলার আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশেও গত বছর থেকে বাজুস ফেয়ারে এমন আয়োজন রাখছে রয়েল মালাবার জুয়েলার্স লিমিটেড।

তবে যে কেউ সোনার বারটি কাচের বাক্স থেকে বের করতে পারলে পুরস্কার মিলবে না। এর জন্য কিছু শর্ত মেনে চলতে হবে।

প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার আশরাফ খান অপু বাংলানিউজকে বলেন, গত বছর থেকে আমরা বাজুস ফেয়ারে আগতদের জন্য এমন আয়োজন করছি। মেলায় আগতরা যে কেউ চাইলেই এই বার বের করার চেষ্টা করতে পারবেন। তবে তারা পুরস্কার পাবেন না। শুধু আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে জুয়েলারি কিনেছেন এমন কেউ ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে সোনার বারটি কাচের বাক্স থেকে বের করতে পারলে তাকে ৫০ হাজার টাকার গিফট ভাউচার পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হবে।

তিনি আরও জানান, সোনার বারটির ওজন ৭ কেজি। গত বছর তিনজন ক্রেতা এই পুরস্কার জিতেছিলেন। তবে এই বছর মেলার প্রথম দিন এবং দ্বিতীয় দিন দুপুর পর্যন্ত কেউ বারটি বের করতে পারেননি।

তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক মার্কেটে এমন গেম খেলার সুযোগ রয়েছে। তাই বাজুস ফেয়ারে জুয়েলারি প্রদর্শনী ও বিক্রির পাশাপাশি আমরা বিনোদনের অংশ হিসেবে এই ব্যবস্থা রেখেছি। এবার মেলায় ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে বাজুস ফেয়ারে পরিবার নিয়ে এসেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. হোসাইন আহমেদ অন্তিম। মেলায় ঘোরার পাশাপাশি জুয়েলারি কেনার ইচ্ছাও আছে তার পরিবারের। মেলায় ঘুরতে ঘুরতে সোনার বার বের করার চেষ্টা করেন তার পরিবারের প্রায় প্রত্যেক সদস্য।

অন্তিম বলেন, ইউটিউবে দেখেছি, বাজুস ফেয়ারে এমন গেমের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তাই মেলায় ঘুরতে এসে একবার বারটি বের করার চেষ্টা করেছি। বারটি হাত দিয়ে তুলতে পারলেও ছিদ্রটি ছোট হওয়ায় বের করতে পারিনি। তবে ব্যাপারটি ইন্টারেস্টিং লেগেছে।

অন্তিমের ছোট ভাই মো. তানভীর হোসাইন সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সোনার বার বের করার খেলায় অংশ নিয়ে তানভীর বলে, স্যোশাল মিডিয়ায় এই খেলা দেখেছি। আজ নিজেও খেলেছি। তবে বারটি বের করতে পারলাম না। তবে খেলতে ভালোই লেগেছে। নতুন কিছু এক্সপেরিয়েন্স করতে পারলাম।

বিজয় সরণি থেকে থেকে বন্ধুদের নিয়ে বাজুস ফেয়ারে এসেছেন রিসাদ। তিনি বলেন, খেলাটা খুবই ইন্টারেস্টিং। তাই আগ্রহ থেকে খেলাটা খেলতে এসেছি। পারব কিনা জানি না। বারের যে ওজন, পারব বলে মনেও হয় না।

মেলায় বার বের করার চেষ্টা করলেও বেশিরভাগই শর্ত সম্পর্কে জানেন না অনেকে। যদিও কাচের বাক্সে শর্তের কথা উল্লেখ আছে।

রয়েল মালাবার জুয়েলার্স লিমিটেড ছাড়াও আরও অনেক জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের অফার ও উপহার দিচ্ছে ক্রেতাদের।

কুঞ্জ জুয়েলার্স থেকে ২০ লাখ টাকার জুয়েলারি কিনলে উপহার হিসেবে মিলবে একটি আইফোন ১৫ প্রো ম্যাক্স, ১৫ লাখ টাকার কেনাকাটা করলে মিলবে ওয়ালটনের একটি ডবল ডোর ফ্রিজ, ১০ লাখ টাকার কেনাকাটা করল মিলবে সনি ব্র্যান্ডের ৪২ ইঞ্চি এলইডি টিভি, ৫ লাখ টাকার কেনাকাটা করলে মিলবে একটি মাইক্রোওভেন।

গৌরব জুয়েলার্সও কেনাকাটায় উপহার দিচ্ছে ক্রেতাদের। ২-৪ লাখ টাকার কেনাকাটা করলে একটি স্মার্টফোন দেবে প্রতিষ্ঠানটি। ২০ লাখ টাকার ওপর কেনাকাটা করলে ঢাকা-থাইল্যান্ডের তিন রাত, তিন দিনের কাপল ট্যুরে প্যাকেজ দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়াও প্রতিটি কেনাকাটায় একটি গিফট বক্স পাবেন ক্রেতারা।

এর আগে বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকারে আইসিসিবিতে ‘সোনায় বিনিয়োগ, ভবিষ্যতের সঞ্চয়’ শীর্ষক প্রতিপাদ্য নিয়ে শুরু হয় তিন দিনের বাজুস ফেয়ার-২০২৪। মেলার উদ্বোধন করেন বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর।  

বিশ্ববাজারে দেশের স্বর্ণশিল্পীদের হাতে গড়া অলংকারের পরিচিতি বাড়াতে এই মেলার আয়োজন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন-২০৪১ সফল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীরের পরিকল্পনায় দেশের ইতিহাসে তৃতীয়বারের মতো এ মেলার আয়োজন করছে বাজুস।  

বাজুস মনে করে, বাজুস ফেয়ার-২০২৪ দেশীয় জুয়েলারি শিল্পকে সমৃদ্ধশালী করার পাশাপাশি বিশ্ববাজারে একটি নতুন অবস্থান তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। দেশের স্বর্ণশিল্পীদের হাতে গড়া নিত্যনতুন আধুনিক ডিজাইনের অলংকারের পরিচিতি বাড়বে।

এই লক্ষ্যে ‘বাজুস ফেয়ার-২০২৪’-এসব ক্রেতা ও দর্শনার্থীকে সাদর আমন্ত্রণ জানিয়েছেন আয়োজকরা। তারা বলছেন, আমরা আশা করছি- বাংলাদেশের জুয়েলারি শিল্পের বিদ্যমান অবস্থা এবং এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সম্পর্কে দেশের ১৮ কোটি মানুষ অবগত হবে।

দেশের অর্থনীতিতে অনবদ্য ভূমিকা রাখা বাংলাদেশের জুয়েলারি শিল্পের সবচেয়ে বড় আয়োজন বাজুস ফেয়ার-২০২৪ চলবে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। আইসিসিবির নবরাত্রি হলে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে মেলা।  

বাজুস ফেয়ারে প্রবেশ টিকিটের মূল্য জনপ্রতি ১০০ টাকা। পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের টিকিট লাগবে না। এছাড়াও জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণে বিশেষ অফার দিচ্ছে।

এবার বাজুস ফেয়ারে নয়টি প্যাভিলিয়ন, ১৭টি মিনি প্যাভিলিয়ন ও ১৫টি স্টলে দেশের স্বনামধন্য ৪১টি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে।

ফেয়ারে প্যাভিলিয়নে অংশ নেওয়া নয়টি প্রতিষ্ঠান হলো ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেড, অলংকার নিকেতন (প্রা.) লিমিটেড, আমিন জুয়েলার্স লিমিটেড, ভেনাস জুয়েলার্স লিমিটেড, কুঞ্জ জুয়েলার্স, রয়েল মালাবার জুয়েলার্স (বিডি) লিমিটেড, আপন জুয়েলার্স, জড়োয়া হাউজ (প্রা.) লিমিটেড ও রিজভী জুয়েলার্স।  

মিনি প্যাভিলিয়নে অংশ নেওয়া ১৭টি প্রতিষ্ঠান হলো ডায়মন্ড বাজার অ্যান্ড গোল্ড, গৌরব জুয়েলার্স, আলভী জুয়েলার্স, আই কে জুয়েলার্স লিমিটেড, চৌধুরী গোল্ড, রিয়া জুয়েলার্স, আফতাব জুয়েলার্স, ডায়মন্ড হাউজ, রয়েল ডায়মন্ড, দি ডায়মন্ড স্টোর, ড্রিমজ ইন্সট্রুমেন্ট টেকনোলজি, রাজ জুয়েলার্স লিমিটেড, জারা গোল্ড, জায়া গোল্ড অ্যান্ড ডায়মন্ড, সাস ইন্টারন্যাশনাল, দি পার্ল ওয়েসিস জুয়েলার্স ও ডি ডামাস দি আর্ট অব জুয়েলারি।

স্টলে অংশ নেওয়া ১৫টি প্রতিষ্ঠান হলো: গোল্ডেন ওয়ার্ল্ড জুয়েলার্স, দি আই কে জুয়েলার্স, গীতাঞ্জলি জুয়েলার্স, আয়াত ডায়মন্ডস, সিরাজ জুয়েলার্স, পাপড়ি জুয়েলার্স, ডায়মন্ড প্যালেস, ডায়মন্ড স্কয়ার, নিউ বসুন্ধরা জুয়েলার্স, রাজঐশ্বরী, ডি গোল্ড প্যাশন, বাংলাদেশ সায়েন্টিফিক ইন্সট্রুমেন্ট কোম্পানি, জেমস গ্যালারি অ্যান্ড ডায়মন্ড, খোকন জুয়েলার্স ও আরএন মাইক্রোটেক।

আরও পড়ুন >> ছুটির দিন সকালেই জমজমাট বাজুস ফেয়ার

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৪
এসসি/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।