ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ফাঁস দিল আইএইচটি শিক্ষার্থী!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৪
ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ফাঁস দিল আইএইচটি শিক্ষার্থী!

বরিশাল: বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের তৃতীয় শ্রেণির স্টাফ কোয়ার্টারের একটি ভবন থেকে ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) শিক্ষার্থী অন্তরা পানুয়ার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ফাঁস দিয়ে সে আত্মহত্যা করেছে।

তবে আত্মহত্যার সঠিক কারণ না জানা গেলেও মৃত্যুর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসের সূত্র বলছে কারও সঙ্গে সম্পর্কের সূত্র ধরে সে আত্মহনন করে থাকতে পারে।  

এদিকে আইএইচটি’র শিক্ষার্থী হয়ে তার মরদেহ শেবাচিম হাসপাতালের স্টাফ কোয়ার্টার থেকে উদ্ধার হওয়ায় রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। যদিও মৃতের রুমমেট সুমাইয়া জানান, কলেজের শিক্ষক তাহেরুল ইসলাম সুমনের মাধ্যমে তারা একদিন আগে এ কোয়ার্টারের পেছনের ব্লকের ভবনের তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটে ওঠেন।

মৃত অন্তরা পানুয়া পটুয়াখালী জেলা সদরের খলিসাখালী এলাকার অনুকুল চন্দ্র পানুয়ার মেয়ে এবং বরিশাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজ ‘র ডেন্টাল অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ ডা. মানষ কৃষ্ণ কুন্ডু।

তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষার্থী যাদের বিয়ে হয়েছে তারা অনেকেই বাইরে থাকেন। অন্তরাও হোস্টেলে না থেকে বাইরে থাকতো। তবে সে কোথায় থাকতো সেটি আমরা জানতাম না। সকালে তার আত্মহত্যার খবর শুনে ঘটনাস্থলে যাই। মৃত্যুর কারণও আমি বলতে পারবো না।

অন্তরার মরদেহ যেখান থেকে উদ্ধার হয়েছে সেটি আমাদের আওতাভুক্ত এলাকা না, সেটি শেবাচিম হাসপাতালের কোয়ার্টার এলাকা। তাই সে কীভাবে সেখানে থাকতো তাও জানি না বলেও জানান তিনি।

যদিও অন্তরার পাশের রুমে বসবাসকারী আইএইচটি’র অপর শিক্ষার্থী সুমাইয়া জানান, তারা আগে যেখানে থাকতেন সেখান থেকে মাত্র একদিন আগে শেবাচিম হাসপাতালের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের এ কোয়ার্টারের তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটে ওঠেন। দোতলায় তাদের শিক্ষক তাহেরুল ইসলাম সুমন থাকেন এবং তার মাধ্যমেই তৃতীয় তলায় তারা উঠেছেন।

শিক্ষক সুমন সম্পর্কে মামা হন জানিয়ে সুমাইয়া বলেন, আমরা এখানে অল্প কয়েকদিনের জন্য থাকতে এসেছিলাম, নতুন বাসা নিয়ে সেখানে যাব। কিন্তু তার আগেই অন্তরা আজ আত্মহত্যা করলো।

আত্মহত্যার কারণ জানা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে অন্তরার রুমের জানালা দিয়ে দেখতে পাই সে ফ্যনের সঙ্গে ফাঁস দিয়ে ঝুলে আছে।

এদিকে ঘটনার পর থেকে তাহেরুল ইসলাম সুমনকে ওই ভবনে পাওয়া যায়নি। তার ফ্ল্যাটে অবস্থান নেওয়া জেলা আনসার অফিসের এক কর্মকর্তা নিজেকে সুমনের মামা দাবি করে জানান, সুমনের বদলি হয়েছে, আর সে কারণে সুমন বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছে। তবে সে আইএইচটি’র শিক্ষক হয়ে কীভাবে শেবাচিম হাসপাতালের কোয়ার্টারে থাকছে সে বিষয়ে তিনি কিছুই জানাতে পারেননি।

অপরদিকে মোবাইল ফোনে তাহেরুল ইসলাম সুমন জানান, তৃতীয় তলার ফ্ল্যাট খালি থাকায় সেখানে ওই দুই শিক্ষার্থীকে থাকতে বলেছিলেন, কিন্তু উপকার করতে গিয়ে এমন ঘটনা ঘটবে তা তিনি জানতেন না। আর শিক্ষার্থীর বাইরে এ মেয়েদের সঙ্গে তার কোনো ব্যক্তিগত পরিচয়ও নেই, কারও সঙ্গে কোনো সম্পর্কও নেই। তবে সুমাইয়া যে মামা দাবি করেছে সেটা জানালে তিনি সেটিকেও সমর্থন করেন।

আর ফ্ল্যাটের অবৈধ বাসিন্দা হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সবাই বিষয়টি জানেন হাসপাতালের কোয়ার্টার যাদের নামে বরাদ্দ, তারা সেখানে থাকেন না। ভাড়া দিয়ে দেন, তিনিও দোতলার ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছেন মেডিকেল কলেজের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী (ক্যাশ পিয়ন) আবিদ হাসানের কাছ থেকে। কিন্তু এ বিষয়ে আবিদ হাসানের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে আবিদ হাসান সম্পর্কে ভাই হয় দাবি করে তিনি বলেন, তৃতীয় তলার ফ্ল্যাট খালি থাকায় সেখানে ওই মেয়েদের থাকতে বলা হয়েছিল। আর শেবাচিম হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার আবুল কালাম জানান, সম্প্রতি তারা কর্তৃপক্ষকে নিয়ে হাসপাতালের কোয়ার্টারগুলো পরিদর্শন করেছেন। তখন তারা তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটে কাউকে পাননি, বাইরে থেকে তালাবদ্ধ পেয়েছেন। সকালেই শুনতে পেয়েছেন সে ফ্ল্যাটে এক মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

তবে শেবাচিম হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মনিরুজ্জামান শাহীন জানিয়েছেন, কীভাবে মেডিকেলে কলেজ থেকে একজন কর্মচারীর নামে ওই ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা আমরা জানি না। তবে সম্প্রতি আমরা খতিয়ে দেখেছি কোয়র্টারগুলোর অনেক ফ্ল্যাট খালি ও পরিত্যক্ত রয়েছে। আবার কিছু বরাদ্দ হলেও সেখানে যথাযথ লোক থাকছেন না। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আর তৃতীয় শ্রেণির কোয়ার্টারে আইএইচটির ছাত্রীর অবস্থান এবং আত্মহত্যার বিষয়টি পুলিশের পাশাপাশি আমরাও খতিয়ে দেখবো এবং নিয়মানুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।

আর আইএইচটির শিক্ষক হয়ে সুমন কীভাবে মেডিকেলের কোয়ার্টারে থাকছেন সেটি জানেন না জানিয়ে অধ্যক্ষ ডা. মানষ কৃষ্ণ কুন্ডু বলেন, গত ১ তারিখে ইন্সট্রাক্টর তাহেরুল ইসলাম সুমনের রংপুরে বদলি হয়েছে। তাকে এখনো ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি, তবে বদলিজনিত কারণে তিনি ঢাকায় আছেন বর্তমানে এমনটাই আমি জানি।

এদিকে মরদেহ উদ্ধারকারী কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের এসআই রেজাউল ইসলাম রেজা বলেন, আত্মহত্যার বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। অন্তরার মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল শেষে মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। তার কোনো অভিভাবক বা স্বজন এখনও ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায়নি, তাদের অভিযোগ থাকলে লিখিত দিলে আমরা খতিয়ে দেখবো।

এদিকে অন্তরার ৪ বছর আগে তাপস নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হয়, চাকরির কারণে সেও বরিশালে থাকেন না জানিয়ে সহপাঠীরা বলছেন, স্বামীর সঙ্গে কিংবা অন্য কোনো কারণে অন্তরা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যা করতে পারেন। তবে সম্প্রতি অন্তরা মানসিক চাপে ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৪
এমএস/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।