ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

প্রতারণার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বে যুবককে ৮ টুকরো করে খুন, আটক ৪

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৪
প্রতারণার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বে যুবককে ৮ টুকরো করে খুন, আটক ৪

কুষ্টিয়া: জেলা সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নে পদ্মা নদীর চর থেকে মিলন হোসেন (২৭) নামে এক যুবকের খণ্ড খণ্ড মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

শনিবার (০২ ফেব্রুয়ারি) রাত ২টায় শুরু করে রোববার (০৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন স্থান থেকে মিলনের ৮ টুকরো দেহাংশ উদ্ধার করা হয়।

পরে সেগুলো কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায় কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ।

এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে চারজনকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন- এক্স ছাত্রলীগ নেতা সজিব আহমেদ (২৫), জনি আহমেদ (২২) ও সজল আহমেদসহ (২৪) চার যুবককে আটক করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে সজিব কুষ্টিয়া শহরে এক দশক ধরে কিশোর গ্যাং তাণ্ডবের মূলহোতা হত্যাসহ নানা অপরাধে কুষ্টিয়া মডেল থানার প্রায় ডজনাধিক মামলার আসামি।

নিহত মিলন দৌলতপুর উপজেলার বাহিরমাদি গ্রামের বাসিন্দা মওলা বক্সের ছেলে। তিনি কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং ই-ব্লকের একটি ভাড়া বাসায় স্ত্রী মিমি খাতুনসহ থাকতেন ও আউট সোর্সিং করতেন। এছাড়া অভিযুক্তদের সঙ্গে চলাফেরা করতেন তিনি।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ কান্তি বাংলানিউজকে জানান, এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে সাজিব, সজল ও জনিসহ চারজনকে আটক করা হয়েছে। তারা সবাই নিহত মিলনের পূর্ব পরিচিতি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটকদের কাছে পাওয়া তথ্য থেকে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তাদের মধ্যে টাকা ভাগাভাগির দ্বন্দ্বের জেরে এই হত্যাকাণ্ড হতে পারে।

এখনই এর বেশি বলা যাচ্ছে না। আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কিনা তা বিস্তারিত জানা যাবে বলেও জানান তিনি।

নিহত মিলনের স্ত্রী মিমি খাতুন (২৫) বলেন, বুধবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় বাসা থেকে বের হওয়ার পর বেলা সাড়ে ১১টা থেকে মিলনের ফোন বন্ধ পাই। তখন থেকেই আমি ও আমার পরিবারের লোকজন তাকে খোঁজাখুজি শুরু করি। সম্ভাব্য সবখানেই খুঁজে তার কোনো সন্ধান না পেয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি। যার ডায়েরি নম্বর ২৩২৮, তারিখ ৩১ জানুয়ারি, ২০২৪।

মিমির অভিযোগ, মিলনের ব্যবসায়িক পার্টনার সজল ওইদিন সকালে তাকে ফোন করে ডেকে নিয়ে যান। তারপর থেকেই মিলনের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

তিনি আরও বলেন, আমি আগে জানতাম না যে সজল একজন অস্ত্রধারী ও মাদক সম্পৃক্ত ব্যক্তি। জানলে আমি মিলনকে ওর সঙ্গে মিশতে দিতাম না। সজল খুব ভয়ংকর লোক। ওর একটা গ্যাং আছে। ওরাই মিলনকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে। আমি এ হত্যার বিচার চাই। তাদের ফাঁসি চাই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুষ্টিয়া মডেল থানার এক উপ-পুলিশ পরিদর্শক জানান, আটক সজিব, জনি ও সজল ওরা তো কিশোর বয়স থেকেই অপরাধ জগতে ঢুকে পড়েছে। তারা হত্যা, ব্লাকমেইল (কৌশলে জিম্মি), ফোন নম্বর ক্লোন বা হ্যাক করে বিকাশের টাকা প্রতারণা, অস্ত্র, মাদকসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জতিড় একটি চক্র। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে নিহত মিলনও এই চক্রের সঙ্গে জড়িত। কিশোর গ্যাং লিডার খ্যাত সজিবের বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা এখন আদালতে বিচারাধীন আছে।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, পুলিশ পরিদর্শক) শেখ মো. সোহেল রানা বাংলানিউজকে জানান, বুধবার নিহত মিলনের স্ত্রী মিমি খাতুনের করা সাধারণ ডায়েরির সূত্র ধরে সজল ও সজিব নামে দুই যুবককে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে স্বীকার করেছেন। তারা কীভাবে এবং কেনো এ মিলনকে হত্যা করেছেন সে বিষয়েও একটি প্রাথমিক ধারণা পাওয়া গেছে। আটক যুবকদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতেই শনিবার মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করে পদ্মা নদীর চর থেকে মিলনের খণ্ড খণ্ড মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে সেগুলো মর্গে পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২৪
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।