ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কর্তাদের লালফিতায় বন্দি মেট্রোর যাত্রীসেবা

নিশাত বিজয়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০২৩
কর্তাদের লালফিতায় বন্দি মেট্রোর যাত্রীসেবা

ঢাকা: যানজটের নগরী ঢাকায় স্বস্তির বার্তা নিয়ে এসেছিল মেট্রোরেল প্রকল্প। সে স্বস্তি এখন কেবল অস্বস্তি আর অপেক্ষার প্রহর বাড়াচ্ছে সাধারণের সেবা প্রাপ্তির প্রত্যাশায়।

২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের লাইন-৬ এর প্রথমাংশ উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চালু হয়। রেল চলে সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত। এরপর এ অংশে ধীরে ধীরে সময় বাড়িয়ে সকাল সাড়ে সাতটা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলাচল চালু করা হয়।

মেট্রোর উত্তরা-আগারগাঁও অংশ চালুর ১০ মাস সাত দিনের মাথায় গত ৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের উদ্বোধন করেন। পরদিন থেকে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল চালু হয়। একই সঙ্গে চালু হয় ফার্মগেট, সচিবলায় ও মতিঝিল স্টেশন।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) এমডি এম এ এন ছিদ্দিক সে সময় জানিয়েছিলেন, আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশে ধীরে ধীরে সময় বাড়বে। এক মাস হয়ে হলেও সে আশায় এখন গুঁড়ে বালি।

সময় না বাড়ায় যাত্রীদের ফেরার যাত্রায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সকালে অফিস বা স্কুলগামীরা সুবিধা পেলেও দুপুরের পর থেকে ফিরতি কোনো সুবিধা না থাকায় (নির্ধারিত সময় ব্যতীত) বাসায় ফেরার সময় নানা সমস্যায় পড়ছেন সাধারণ যাত্রীরা।

মতিঝিল থেকে মিরপুরে অফিস করেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী ফজলেহ রাব্বি পিউল। মতিঝিল থেকে সকালে রওনা করে ১০ মিনিটের মাথায় অফিস পৌঁছান। কিন্তু বিকেলে অফিস শেষ করে বাসায় ফিরতে ভোগ করেন নানা ভোগান্তি। কারণ, সে সময় মেট্রো মতিঝিল যায় না। তিনি বলেন, যদি আমাদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে এত বড় প্রকল্প দীর্ঘসময় ধরে তৈরি করা হয়ে থাকে, তবে সেটি সামগ্রিক হওয়া প্রয়োজন। অফিসে আসতে সময় লাগে ১০ মিনিট, যেতে লাগে দেড়-দুই ঘণ্টা। এভাবে তো চলতে পারে না। মেট্রোর যুগে অন্তত নয়।

সদ্য সমাপ্ত হওয়া ক্রিকেট ওয়ানডে বিশ্বকাপের খবর সংগ্রহ ও পরিবেশনের কাজে গিয়েছিলেন সংবাদকর্মী একুশ তাপাদার। মেট্রো নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। বাংলানিউজকে বলেছেন, বাংলাদেশে মেট্রোর ভাড়া কলকাতার তুলনায় তিনগুণ, দিল্লির তুলনায় দ্বিগুণ। কলকাতা, দিল্লির নতুন রুটগুলোর ভাড়াও ঢাকার তুলনায় অনেক কম। আমাদের মেট্রোর ভাড়া অবশ্যই কম হতে পারত।

তিনি বলেন, এখনও কলকাতায় ৫ রুপি সর্বনিম্ন ভাড়া আছে। এসপ্ল্যানেড থেকে পার্ক স্ট্রিট একটা স্টেশন ৫ রুপিতে যাওয়া যায়। ১৫ রুপিতে ৯টা স্টেশন মানে সাড়ে ১০ কিলোমিটার যাওয়া যায়। দিল্লিতেও সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ রুপি। ২০ রুপিতে ঢাকার চেয়ে ডাবল দূরত্বে যাওয়া যায়। ঢাকায় ভাড়া অনেক বেশি। উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ভাড়া ১০ টাকা থেকে শুরু হয়েছে সর্বোচ্চ ৭০ টাকা হতে পারত।

উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোর চলাচল গত জুলাই মাসেই মধ্যরাত করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন না হওয়া ক্ষোভ প্রকাশ করেন একুশ। তিনি বলেন, সেবার মান বাড়াতে প্রয়োজন আন্তরিকতা৷ দ্রুত পুরো রুট ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চালু করা উচিত। রাত ৮টা পর্যন্ত চালু থাকা মানে মানুষকে ফেরার পথ না দেওয়া৷ এটা গণপরিবহনের সুবিধা হতে পারে না।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) মোহাম্মদ ইফতিখার হোসেন বলেন, মেট্রোরেল মতিঝিল পর্যন্ত চালু করার পর থেকে ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। যাত্রীদের মাঝে মেট্রোর সময় বাড়ানোর দাবি রয়েছে। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণসহ কিছু কাজ বাকি। সেগুলো শেষ হলে মেট্রোর সময় বাড়ানো হবে।

এসব ব্যাপারে কথা বলতে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এমএএন সিদ্দিকের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হয়। তিনি রিসিভ করেননি। পরে তাকে ক্ষুদেবার্তাও পাঠানো হয়। তারপরও তিনি কোনো সাড়া দেননি।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০২৩
এনবি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।