ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘তামাকমুক্ত দেশ গড়াতে প্রয়োজন রাজনৈতিক অঙ্গীকার’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০২৩
‘তামাকমুক্ত দেশ গড়াতে প্রয়োজন রাজনৈতিক অঙ্গীকার’ কথা বলছেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত।

ঢাকা: ‘আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। তবে এখনো তামাক আইন ও তার প্রয়োগিক দিকের বাস্তবায়ন সেভাবে হয়নি।

তামাক আইন সম্পর্কে বেশিরভাগ লোকই জানেন না। আইন প্রয়োগের বিষয়ে উদাসীনতা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তামাকমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে সচেতনতা তৈরিসহ রাজনৈতিক অঙ্গীকার দরকার। ’

মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রয়োগ ও বাস্তবতা’ শীর্ষ এক আলোচনায় এসব কথা উঠে আসে।

আলোচনা অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে ভাইটাল স্ট্রাটেজিস এবং মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা (মানস)।

আলোচনা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, আজ দেশের মধ্যে ইয়াবা আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও এর থাবায় আক্রান্ত হচ্ছে। ধূমপানের সঙ্গে সব মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এই আইনের প্রয়োগ করতে। এজন্য আমাদের আরও সচেতনতা প্রয়োজন। অফিস বা অন্য কোথাও খোলা স্থানে ধূমপানের পরিবর্তে একটি নির্দিষ্ট জোন করতে হবে, যেখানে তারা ধূমপান করবে। এর বাইরে কোথাও করা যাবে না।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, তামাকবিরোধী আইন আছে আবার নেই। আইনে আছে শিশুদের কাছে তামাক বিক্রি করা যাবে না, কিন্তু বিক্রি হচ্ছে। আইনে বলা আছে, প্রকাশ্যে পাবলিক প্লেসে ধূমপান করা যাবে না কিন্তু করা হচ্ছে। এর কারণ হলো আইন আছে কিন্তু এর প্রয়োগ নেই। আমাদের এই দ্বৈত আচারণ বন্ধ করতে হবে। সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করতে হবে, এটার জন্য সামাজিক আন্দোলন দরকার।

তিনি বলেন, উন্নত দেশে তামাক খাওয়া বন্ধ করেছে, উৎপাদনও নেই। তবে উন্নয়নশীল বা অনুন্নত দেশের উৎপাদন ও তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার বাড়ছে। আমরা তামাকের বিরুদ্ধে কথা বলছি আবার তামাক উৎপাদনকারীকে সংবর্ধনা দিচ্ছি। এভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। আমি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর অনেক তামাক কোম্পানি এসেছেন স্পন্সর নিয়ে আমি নেইনি। তামাক নিয়ন্ত্রণ করতে আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গীকার দরকার, সামাজিক আন্দোলন দরকার।

ডিআরইউ সভাপতি মুরসালিন নোমানী বলেন, ১৮ বছরের নিচে কারো কাছে তামাকজাত পণ্য বিক্রি করা যাবে না এটা আমরা কতজন জানি। অনেকেই জানি না। আইন প্রয়োগ করবে যারা তাদেরও অনেকে জানেন না। আমাদের এসব বিষয়ে আরও সচেতন করতে হবে। ২০৪০ সালের মধ্যে তামাক নির্মূলের যে কমিটমেন্ট সেটা আর ১৭ বছর সময় আছে। আমাদের এখনই রাষ্ট্র ও প্রশাসনের দিক থেকে গুরুত্ব দিতে হবে।

সমাপনী বক্তব্যে, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মানসের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী বলেন, প্রতিবছর দেশে তিন কোটি ৭৮ লাখ মানুষ তামাকজাত পণ্য ব্যবহার করে থাকেন। গণপরিবহনসহ জনসমাগম স্থলে প্রায় আট কোটি মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়ে থাকেন। দেশের প্রায় এক লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে তামাক পণ্যের কারণে। বছরের ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে চিকিৎসার জন্য।  

ড. অরূপরতন চৌধুরী আরও বলেন, ধূমপান ও তামাকজাতদ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ প্রণয়ন করে সরকার। এর ফলে ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৮ শতাংশ ব্যবহার কমে আসে। ২০৪০ সালের মধ্যে তামাক ব্যবহার নির্মূলে পাঁচ শতাংশে নামিয়ে আনতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি যুগোপযোগী করা প্রয়োজন।

উম্মে জান্নাতের পরিচালনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ভাইটাল স্ট্রাটেজিসের কনসালটেন্ট মো. ফাহিমুল ইসলাম ও হেড অব প্রোগ্রামস মো. শফিকুল ইসলামসহ প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০২৩
টিএ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।