ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মুক্তিপণের টাকা না দেওয়ায় হাসিবকে খুন করে কিশোর গ্যাং

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২৩
মুক্তিপণের টাকা না দেওয়ায় হাসিবকে খুন করে কিশোর গ্যাং

পাথরঘাটা (বরগুনা): মুক্তিপণের তিন লাখ টাকা না দেওয়ায় অপহৃত হাসিবকে (১৩) হত্যা করেছে সাতজনের একটি কিশোর গ্যাং। অপহরণের তিনদিন পর ওই কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

রোববার (২২ অক্টোবর) রাতে পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ বাইনচটকি বিষখালী নদী সংলগ্ন স্লুইজ এলাকা থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।

হাসিব পাথরঘাটার সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ পাথরঘাটা গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে।

জানা গেছে, গত শুক্রবার (২০ অক্টোবর) সকালে পূজা দেখাতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে অপহরণ করা হয় হাসিব (১৩) নামে এক কিশোরকে। অপহরণকারীরা টাকা চেয়ে পরিবারের কাছে নির্যাতনের একটি ভিডিও বার্তা পাঠায়। এবং তারা হাসিবের ব্যবহৃত মোবাইল থেকে পরিবারের কাছে মুক্তিপণের তিন লাখ টাকা চেয়ে বারবার কল দেয়।  

এ ঘটনায় হাসিবের বাবা শফিকুল ইসলাম পাথরঘাটা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

পরে অভিযানে অপহরণকারী সাতজনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে ওই অপহরণকারী দলের প্রধান আবদুল্লাহ আল নোমানের নাম বললেও ন্যায় বিচার এবং তদন্তের স্বার্থে বাকিদের নাম বলেনি। আবদুল্লাহ আল নোমান উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাদুরতলা গ্রামের মহিবুল্লাহর ছেলে।

পাথরঘাটা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আলী হোসেন বলেন, অপহরণের পর থেকেই আমাদের অনুসন্ধান অব্যাহত ছিল। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে দেখা যায় অপহরণকারীরাা বারবার স্থান পরিবর্তন করে, যার কারণে তাদের ধরতে বিলম্ব হয়। পরে বিষখালী নদী সংলগ্ন কাকচিড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ বাইনচটকি স্লুইজ এলাকা থেকে মাটিতে পুঁতে রাখা ড্রামের ভেতরে অর্ধগলিত মরদেহ পাওয়া যায়।

তিনি আরও বলেন, অপহরণকারীরা সাতজনের একটি সংঘবদ্ধ দল ছিল। তিন‌ লাখ টাকার জন্য হাসিবকে অপহরণ করে প্রথমে পাথরঘাটা পৌর শহরের ঈমান আলী সড়কের একটি বাসায় নির্যাতন করে এবং ওই নির্যাতনের ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে ওই বাসায় বসেই হাসিবকে হত্যা করে ডামে ভরে ইজিবাইকে করে দক্ষিণ বাইনচটকি এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে মাটিতে পুঁতে রাখা হয়।

তথ্যপ্রযুক্তি মাধ্যমে চরদুয়ানি ইউনিয়নের হোগলাপাশা গ্রামে শ্বশুর বাড়ি ইউনুস মুন্সির ঘরে অভিযান চালিয়ে করে আসামি আব্দুল্লাহ আল নোমান ওরফে তানভীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি জানায়, হাসিবকে কৌশলে আসামির ভাড়া বাসায় নিয়ে যায়। তাকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ায়ে রাতে ঘুমিয়ে রাখে। শনিবার (২১ অক্টোবর) সকালে হাসিবের হাত, পা, মুখ বেঁধে ভিডিও করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না পেয়ে তাকে গলায় রশি দিয়ে হত্যা করে। পরে রোববার (২২ অক্টোবর) তারিখ সকালে মৃত্যু অবস্থায় আসামি নোমানের শ্বশুর বাড়ি নিয়ে ঘরের মধ্যে লুকিয়ে রাখে। সন্ধ্যায় আসামি নোমানের সুমন্দি আব্দুর রহিম মুন্সির সহযোগিতায় ইজিবাইক চালক আব্দুর রহিম কাজির গাড়িতে করে দক্ষিণ বানচটকি মজিদ খার বাড়ির সামনের রাস্তার গর্তে করে পুঁতে রাখে। পরে আসামির দেখানো মতে হাসিবের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- গহরপুর গ্রামের মহিউদ্দিনের ছেলে মূল হোতা আব্দুল্লাহ আল নোমান ওরফে তানভির ওরফে শিশু ফকির (১৯), তার সম্বন্ধী ইউনুসের ছেলে সম্বন্ধী আ. রহিম মুন্সি, শ্বশুর মো. ইউনুস (৬৫), ফুফাত ভাই সৈয়দ আলী মাঝির ছেলে মো. জসিম (৩০), ইউনুসের মেয়ে তানজিলা (২৩), স্ত্রী তাহিরা (১৯), শাশুড়ি রহিমা (৫৫), ইজিবাইক চালক আব্দুর রহিম কাজি (৪৫)।

পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম হাওলাদার জানান, আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এর সঙ্গে আরও কেউ আছে কিনা এবং কোনো রহস্য আছে কিনা তা অনুসন্ধান চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২৩
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।