ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের দুরবস্থা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৩
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের দুরবস্থা

ঢাকা: রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে আগুনের ঘটনায় সর্বস্ব হারিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছেন ব্যবসায়ীরা। নিজেদের ও পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কায় তারা।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভোরে আগুনে পুড়েছে কৃষি মার্কেটের ২১৭টি দোকান। ঘটনার ১০ দিন পার হয়েছে; ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার মতো কিছু পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। নিজেদের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে নিরুপায়; চোখের পানি ফেলে নীরব আহাজারি করছেন তারা।

ঘটনার সময় যারা কাছাকাছি ছিলেন তারা কিছু মালামাল বের করতে পারলেও বাকিদের সব শেষ হয়ে গেছে ১৪ সেপ্টেম্বর ভোরে। রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) মার্কেটের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হয়। বাংলানিউজকে তারা বলেন, সেদিন ভোরের আগুন ঘটনায় তাদের অনেকের জীবন সংসার আজ অন্ধকারে নিমজ্জিত। তারা এখন নিঃস্ব। যারা ঋণ করে ব্যবসা শুরু করেছিলেন তাদের মাথায় এখন পাহাড়সম বোঝা। কী করবেন, কিছুই ভেবে পাচ্ছেন না।

ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম শরীফ বলেন, মার্কেটে আমার দুটি দোকান ছিল। এর মধ্যে একটি ভাড়ায়, অন্যটি ছিল নিজস্ব। যেদিন আগুন লাগে, সেদিন ঘটনাস্থলে পৌঁছেও কিছু করতে পারিনি। আমার দোকানগুলো ছাই হয়ে গেছে। আমার দোকানে এক কোটি টাকার কাপড় ছিল। দোকানের ক্যাশ বাক্সে প্রায় ৬ লাখ টাকা রেখে গিয়েছিলাম। সে টাকাও আগুনে পুড়ে গেছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, অনেকের হিসাবের খাতাটাও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। বেশিরভাগ ব্যবসায়ীরই ঋণ করে কৃষি মার্কেটে দোকান করেন। নতুন করে আবার শুরু করা নিয়েও তাদের রয়েছে নানা শঙ্কা।

তামিম ফ্যাশন নামে একটি শপ ছিল ব্যবসায়ী মো. শহিদুল ইসলামের। এটি করতে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন তিনি। তার দোকানের সব মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। হিসাবের খাতাটাও পুড়ে গেছে। এখন কী করবেন, তার কোনো ধারণা নেই শহিদুলের মাথায়।

পোড়া দোকানের সামনে টুল পেতে বসেছিলেন মো. শওকত আলী। তার দোকানের নাম শওকত জেনারেল স্টোর। প্রায় দেড় কোটি টাকার মালামাল পুড়ে গেছে বলে দাবি এ ব্যবসায়ীর। সব হারিয়ে প্রায় নির্বাক তিনি। তবুও কথা হলে বললেন, মার্কেটে আমার চারটি দোকান, সবগুলো দোকানের মালামালই পুড়ে গেছে। যখন আগুন লাগে, তখন আগুনের তাপে ঢুকতে পারিনি। ডিপ্লোমা ও ডানো গুঁড়া দুধ, হরলিকস, রূপচাঁদা ও তীর সয়াবিন তেল, ময়দা, আটা, চিনি ও ডিটারজেন্টসহ ১৩৬টি আইটেম ছিল। আমি ডিলার হিসেবে মালামাল বিক্রি করি। সব মালামাল পুড়ে গেছে, দোকানে ছাই ছাড়া কিছু নেই। আগুনে পুড়ে দোকানের দেওয়ালও নষ্ট হয়ে গেছে। এসব দোকান এক মাসেও ঠিক করা সম্ভব না।

এদিকে সর্বশেষ কর্তৃপক্ষ কোনোরকম ছাই পরিষ্কার করে দিলে মার্কেটের সামনে অস্থায়ীভাবে ভ্যান বসিয়েছেন ব্যবসায়ীদের কয়েকজন। কিছু মালামাল নিয়ে আবার শুরু করেছেন। তারা জানালেন, গত দুদিন ধরে শুধু বিকেলের দিকে মালামালগুলো বেচাকেনা করতে পারেন তারা।

কৃষি মার্কেটে চারটি দোকান ছিল নজরুল ইসলামের। এখন কিছুই নেই। তিনি বলেন, গোডাউনে কিছু পণ্য ছিল, সেগুলোই এনে ভ্যানে করে বিক্রি করছি। পেট তো চালাতে হবে। কোথাও থেকে সেভাবে সাহায্যও পাইনি। কয়েকদিন আগে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের কিছু চাল দেওয়া হয়েছিল এই যা। এখন ঘুরে দাঁড়াতে চাই; তবে তা অনেক কঠিন।

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে উত্তর সিটি করপোরেশনের বরাদ্দ করা দোকানের সংখ্যা ছিল ৩৪৩টি; পুড়ে গেছে ২১৭টি। এসব দোকানের মালিকরা কেউ কেউ নিজেরাই ব্যবসা করতেন। আবার অনেকে দোকান ভাড়া দিয়েছেন। যারা ভাড়া দোকান করছিলেন; এই অবস্থায় তাদের যেমন দোকান ভাড়া দেওয়া সম্ভব নয়। তেমনি ব্যবসা পরিচালনা করবেন কীভাবে তা নিয়েও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। অন্যদিকে যারা দোকান ভাড়া দিয়েছিলেন, তারাও দোকান ভাড়া আদায় করতে পারবেন না। এমন পরিস্থিতিতে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

মার্কেট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ক্ষতিপূরণ ও ব্যবসায়ীদের বিষয়ে আলাপ হলে তারা বলেন, সবার ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা কষ্টকর। মার্কেট থেকে যতদূর পারা যায় তারা তারা চেষ্টা করবেন। আগুনের মার্কেটেরও ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে অবস্থা বিবেচনায় তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৩
এইচএমএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।