ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অধ্যক্ষসহ ৪৫ শিক্ষক-কর্মচারীর পদ শূন্য, পাঠদান ব্যাহত

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৩
অধ্যক্ষসহ ৪৫ শিক্ষক-কর্মচারীর পদ শূন্য, পাঠদান ব্যাহত

বাগেরহাট: নানামুখী সংকটে বাগেরহাটের একমাত্র সরকারি কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ। চরম শিক্ষক সংকটে দুই শিফটে কার্যক্রম পরিচালনার কথা থাকলেও এখন চলছে এক শিফট।

 

শ্রেণিকক্ষ ও ল্যাব সংকটে ভোগান্তিতে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। সাত শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য নেই কোনো ক্যান্টিন। খেলার মাঠে পানি থাকে বছরের চার মাস। কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, শ্রেণিকক্ষ, আবাসন ও ল্যাব সংকট মেটাতে পাঁচতলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন নির্মাণকাজ চলছে। এ ছাড়া অন্যান্য সংকটের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

কলেজ সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৫ সালে ৩ দশমিক ৫০ একর জমির ওপর ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (ভিটিআই) নামে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়। ১৯৯৫ সালে এসএসসি (ভোকেশনাল) এবং ১৯৯৭ সালে এইচএসসি (ভোকেশনাল) শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়।  

২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠানটির নাম দেওয়া হয় বাগেরহাট সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। তারপর থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি, জেনারেল ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কস, রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং, ওয়েল্ডিং অ্যান্ড ফেব্রিকেশন এই চারটি ট্রেডে এসএসসি ও এইচএসসি (ভোকেশনাল) বিষয়ে পড়ানো হতো।  

সরকারি নির্দেশে ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানটিতে চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন ইলেক্ট্রিক্যাল কোর্স চালু করা হলেও ২০১৯ সালে তা আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়।  

কলেজটিতে একজন অধ্যক্ষ, ট্রেড কোর্সগুলোর জন্য আটজন চিফ ইনস্ট্রাক্টর, সাতজন ইনস্ট্রাক্টর, ১৪ জন জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর, আটজন ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর, চারজন ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ও সাধারণ বিষয়ের জন্য ১৬ জন শিক্ষকসহ ৬৮টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে অধ্যক্ষসহ ৪৫টি পদই শূন্য।  

ছয়জন চিফ ইনস্ট্রাক্টর, পাঁচজন ইনস্ট্রাক্টর, ১১জন জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর, ছয়জন ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর, তিনজন ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ও নয়জন শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এ ছাড়া উচ্চমান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক, উচ্চমান সহকারী স্টোর কিপার ও দুজন অফিস সহায়কের পদ শূন্য রয়েছে।  

এতসব শূন্যতার মধ্যে চলতি বছর থেকে নতুন করে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। নতুন চালু করা তিনটি শ্রেণির জন্য কোনো শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেয়নি সরকার। ফলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। দুই শিফটের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাক্রম চলছে এক শিফটে।

কলেজ কমপ্লেক্সের মধ্যে সাত শতাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের জন্য কোনো ক্যান্টিন নেই। বিশাল আয়তনের একটি খেলার মাঠ থাকলেও, বছরের চারমাস জলমগ্ন থাকে মাঠটি। এক সময় শিক্ষার্থীদের জন্য হোস্টেল থাকলেও বর্তমানে কোনো আবাসন ব্যবস্থা নেই। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন দূরের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।

ইলেক্ট্রিক্যাল ট্রেডের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আল আমিন বলে, শ্রেণিকক্ষে পানির মেশিন থাকলেও নিয়মিত পানি পাই না। এ ছাড়া আমাদের কলেজের ভেতরে ক্যান্টিনও নেই। কলেজে চাকরি করা একজন ভাইয়া কিছু ফাস্টফুড বিক্রি করেন, তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলে, কারিগরি শিক্ষার মূল হলো ব্যবহারিক ক্লাস। শিক্ষক না থাকায় আমাদের সব ব্যবহারিক ক্লাস হয় না। এ ছাড়া ব্যবহারিক ক্লাস করার সময় কোনো যন্ত্র যদি ভেঙে যায় বা খোয়া যায়, সেক্ষেত্রে আমাদের সবাই মিলে টাকা দিয়ে কিনে দিতে হয়।

জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর মো. আতাউর রহমান বলেন, পদ অনুযায়ী শিক্ষক না থাকায় আমাদের ওপর অনেক চাপ হয়ে যায়। শিক্ষার্থীদেরও কিছু অসুবিধা হয়। আবাসিক সুবিধা থাকলে আমাদের জন্য অনেক ভালো হত।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. বাদশা মিয়া বলেন, নির্মাণাধীন পাঁচতলা একাডেমিক ভবনের কাজ সম্পন্ন হলে শ্রেণিকক্ষ ও ল্যাব সংকটের সমাধান হবে। এ ছাড়া শিক্ষক সংকট ও মাঠের সমস্যা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যাতে ইচ্ছে করে ব্যবহারিক ক্লাসে যন্ত্রপাতি ভেঙে না ফেলে, সেজন্য, তাদের একটু চাপে রাখা হয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ডিপ্লোমা শিক্ষাক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৩
এমএম/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।