ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সিগারেটের প্যাকেট বদলে না দেওয়ায় ব্যবসায়ীকে থানায় নিয়ে ‘নির্যাতন’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০২৩
সিগারেটের প্যাকেট বদলে না দেওয়ায়  ব্যবসায়ীকে থানায় নিয়ে ‘নির্যাতন’

ঢাকা: সিগারেটের প্যাকেট বদলে না দেওয়ায় এক ফাস্টফুডবিক্রেতাকে তার দোকান থেকে মারতে মারতে থানায় নিয়ে গারদে আটকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। এরইমধ্যে অন্যতম অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

 

গত ৯ আগস্ট দুপুর একটার দিকে ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের সামনে ওই ফাস্টফুডবিক্রেতা পুলিশের হাতে মারধরের শিকার হন।

আহত দোকানি বর্তমানে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

অভিযুক্ত দুই পুলিশ সদস্য হলেন - ফরিদপুরের চরভদ্রাসন থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) শিমন খান, উপপরিদর্শক (এসআই) ইব্রাহিম।  

ভুক্তভোগী দোকানির নাম আব্দুর রব মোল্যা।  চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের সামনে একটি ফাস্টফুডের দোকান রয়েছে তার।  

এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবার পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুবিচার দাবি করেছেন। ইতোমধ্যে অন্যতম অভিযুক্ত এএসআই শিমন খানকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে ক্লোজ করা হয়েছে।

ঘটনার বর্ণনায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রব মোল্যা সাংবাদিকদের জানান, গত বুধবার দুপুর ১টার দিকে এএসআই শিমন, এসআই ইব্রাহিম ও তাদের সঙ্গে থাকা সাব্বির নামে এক ব্যক্তি দোকানে এসে তাকে মারতে মারতে দোকান থেকে বের করে চরভদ্রাসন থানায় নিয়ে যায়। এরপর থানার গারদে আটকে তারা তিনজন তার ওপর অমানবিকভাবে নির্যাতন চালায়।  

তিনি জানান, তাকে রোলার ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। একপর্যায়ে তার কাছে এএসআই শিমন পঞ্চাশ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন।

হঠাৎ তার ওপর এ আক্রমণ কেন? কোনো পূর্বশত্রুতার জের ছিল কিনা প্রশ্নে রব মোল্যা বলেন, আমাকে মারধরের আগের দিন মঙ্গলবার বিকেলে এএসআই শিমন দোকানে এসে বিশ শলাকার বড় এক প্যাকেট ব্যানসন সিগারেট বদলে দশ শলাকার করে দুটি ছোট প্যাকেট দিতে বলেন। কিন্তু দোকানে ছোট প্যাকেট না থাকায় সিগারেটের প্যাকেট বদলে দিতে পারিনি। এসময় আমাকে পরে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায় এএসআই শিমন। এর পরদিন তারা দোকান থেকে আমাকে এভাবে মারতে মারতে থানায় নিয়ে নির্যাতন চালায়।

রব মোল্যা বলেন, আমি তো অবৈধ দোকান করি না। কিন্তু তাদের ব্যবহার এমন যে আমি অবৈধ ব্যবসা করি।  

তিনি বলেন, তারা (দুই পুলিশ সদস্য) আমাকে থানায় নিয়ে থাপড়িয়েছে। বলেছে, চিনিস পুলিশ কি জিনিস।  

প্রতিদিনই তার দোকানে গিয়ে এ দুই পুলিশ সদস্য দাপট দেখায় ও কোনো না কোনো লোকের সঙ্গে ঝামেলা বাঁধায় বলে দাবি করেন ভুক্তভোগী রব মোল্যা।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত রব মোল্ল্যা

এদিকে রব মোল্লার বর্ণনার সত্যতা পাওয়া গেছে এক ভিডিও ফুটেছে।  

সাংবাদিকদের হাতে আসা একটি সিসি ফুটেজে দেখা যায়, চরভদ্রাসন থানার এএসআই শিমন, এসআই ইব্রাহিম ও সাব্বির নামে তাদের এক সহযোগী উপজেলা পরিষদের সামনে অবস্থিত আব্দুর রব মোল্যার সেই ফাস্টফুড দোকানে যায়। এর কিছুক্ষণ পরে তারা দোকানদার রব মোল্যাকে মারতে মারতে বের করে নিয়ে যায়।

থানায় কীভাবে রব মোল্যাকে নির্যাতন করা হয়েছে তার বর্ণনা দেন এ ফাস্টফুড দোকানির স্ত্রী সাবিনা বেগম।  

তিনি বলেন, বুধবার ঘটনার পর আমাদের দোকানের ছেলেটি আমাকে ফোন দিয়ে বলে, ভাবি আপনাকে থানায় ডাকে। থানায় গিয়ে দেখি আমার স্বামীকে আলাদা একটা রুমে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। সেখানে গিয়ে বুঝতে পারি, আমি থানায় যাওয়ার আগেই আমার স্বামীকে অনেক মারধর করা হয়েছে। আমার স্বামীকে তারা এতোটাই মেরেছিল যে উনি চেয়ারে থেকে উঠতে পারছিলেন না, নিজ পায়ে দাঁড়াতে অক্ষম হয়ে পড়েছিলেন। সাধারণ একটা মানুষের সঙ্গে এমন আচরণ এমন মারধরের বিচার চাই।  

রব মোল্যার দোকানের কর্মচারী রাজু বলেন, আমরা দোকানের সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করি। আমি সবসময় দোকানে থাকি। কিন্তু এএসআই শিমন যখনই দোকানে আসেন আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। উনি এমন ব্যবহার করবেন কেনো? আমরা এর বিচার চাই।

এব্যাপারে জানতে চাইলে চরভদ্রাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: সেলিম রেজা বলেন, এসপি স্যারের নির্দেশে এএসআই শিমন খানকে পুলিশ লাইন্সে ক্লোজ করা হয়েছে। তদন্ত করে দোষী সব্যাস্ত হলে বাকি দুজনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫১২ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০২৩
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।