ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আ.লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র মধুপুর, আহত ২০

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৬ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২৩
আ.লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র মধুপুর, আহত ২০ ছবি- সংগৃহীত

টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের মধুপুরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা টিয়ারগ্যাস ছুড়তে বাধ্য হন।

 

শুক্রবার (২৩ জুন) বিকেলে আওয়ামী লীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দুই গ্রুপের উদ্যোগে পৃথক সমাবেশ পালন করার সময় এ ঘটনা ঘটে।

এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যানের গাড়িসহ অন্তত ২০টি মোটরসাইকেল, স্থানীয় হাসপাতাল, উপজেলা চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়।

জানা যায়, মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ ও পৌর আওয়ামী লীগ যৌথভাবে মধুপুর বাসস্ট্যান্ডে দলীয় কার্যালয়ের সামনে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর আয়োজন করে।  

অন্যদিকে মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খন্দকার শফিউদ্দিন মনি ও সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার আলম খান আবু থানা মোড়ের দক্ষিণে পৃথকভাবে কর্মসূচির আয়োজন করেন। এ সভায় যোগদান করতে আসা ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা পথিমধ্যে হামলার শিকার হন। এ ঘটনাকে ঘিরে মধুপুরে উত্তেজনা দেখা দেয় এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

আহতরা হলেন- উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও লাউফুলা গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে খলিলুর রহমান (৩২), দামপাড়া গ্রামের মোর্শেদের ছেলে মাসরাফি (২৩), ইদিলপুর গ্রামের আহমেদ আলির ছেলে ইসমাইল হোসেন (৬০), ভবানটেকী গ্রামের ইউসুফ আলির ছেলে সোয়াইফ (২০), গাংগাইর গ্রামের খালেদ আহমেদের ছেলে মাসরুর আহমেদ প্রিতম (৩০), দানবাবান্দা গ্রামের আহসান আলির ছেলে চাঁন মিয়া (৬৫)।

আহতদের মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তবে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ইদিলপুর গ্রামের আহমেদ আলির ছেলে ইসমাইল হোসেনকে (৬০) ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

মধুপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খলিলুর রহমান জানান, আলোকদিয়া ইউনিয়নের সভাপতি দুলাল হোসেনের নেতৃত্বে মোটরসাইকেল ও অটোরিকশাযোগে মধুপুর বাসস্ট্যান্ডের সমাবেশে আসার সময় থানার মোড়ে কতিপয় ছাত্র ও শ্রমিক নেতা তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় তার কাছে থাকা ৬০ হাজার টাকাও ছিনিয়ে নেয় হামলাকারীরা। হামলাকারীরা সবাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছরোয়ার আলম খান আবুর নেতৃত্বাধীন কর্মী বলে দাবি করেন তিনি।

এ ঘটনার পর মধুপুর পৌরসভার মেয়র সমর্থিত নেতাকর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে থানার মোড়ের দিকে এগিয়ে যায়। এরই মধ্যে উপজেলা পরিষদ চত্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও সভা শেষে ছরোয়ার আলম খান আবুর নেতৃত্বাধীন মিছিলটি ফিরছিল সেখান দিয়ে। থানার মোড়ে মিছিল আসা মাত্রই উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হন। ভাঙচুর করা হয় উপজেলা চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত কার্যালয়, তার ব্যবহৃত সরকারি গাড়ি, অন্তত ২০টি মোটরসাইকেল, কাজী ডিজিটাল হসপিটাল।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে পুলিশ। দুই গ্রুপের ইট-পাটকেল ও পুলিশের টিয়ারশেল নিক্ষেপে থানার মোড় রীতিমতো রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পার্শ্ববর্তী বাসাবাড়ির লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। মধুপুরের দোকানপাট সব মুহূর্তের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়।

এদিকে, মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছরোয়ার আলম খান আবু তার বাসায় রাত ৮টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, পৌর মেয়র সিদ্দিক হোসেন খান ও চেয়ারম্যান ইয়াকুব আলির নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশ করা সম্পূর্ণ সংগঠনবিরোধী। তাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করার এখতিয়ার নেই। তারপরও মেয়রের নেতৃত্বে গাড়ি, মোটরসাইকেল, দোকান, হাসপাতাল ভাঙচুর ও নেতাকর্মীদের পিটিয়ে আহত করার ঘটনা ঘটেছে। সমাবেশে আগত নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে অন্তত ৬০ জনকে তারা আহত করেছে। যারা নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে বিভিন্নস্থানে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খন্দকার শফিউদ্দিন মনি, সহ-সভাপতি কাজী আব্দুল মালেকসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

অপরদিকে মধুপুর পৌরসভার মেয়র সিদ্দিক হোসেন খান সাংবাদিকদের জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে সংগঠনবিরোধী কার্যক্রম করার অপরাধে কেনো বহিষ্কার করা হবে না- মর্মে শোকজ করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করার এখতিয়ার হারিয়েছেন। তাই উপজেলা আওয়ামী লীগ ও পৌর আওয়ামী লীগের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এই সমাবেশে আগত নেতাকর্মীদের ওপর থানার মোড়ে আবুর নেতৃত্বাধীন কর্মীরা হামলা করে আহত করে। পরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আমি বিষয়টি জানতে পেরে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের শান্ত করে ফিরিয়ে নিয়ে আসি।

এ বিষয়ে মধুপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মুরাদ হোসেন জানান, আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতায় থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছি। মধুপুর থানার ৪০ জন ও অন্যান্য থানার ৪০ জন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করেছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ার গ্যাসও ছুড়তে হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০০১৫ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২৩
এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।