ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বঙ্গভবনের উদ্দেশ্যে পাবনা ছেড়েছেন রাষ্ট্রপতি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৬ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০২৩
বঙ্গভবনের উদ্দেশ্যে পাবনা ছেড়েছেন রাষ্ট্রপতি

পাবনা: নিজ জেলা পাবনায় চারদিনের সফর শেষে বঙ্গভবনের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এসময় জেলা পুলিশের একটি চৌকস দল তাকে গার্ড অব অনার দেয়।

বৃহস্পতিবার (১৮ মে) বেলা পৌনে ১২টায় পাবনার শহীদ অ্যাডভোকেট আমিন উদ্দিন স্টেডিয়াম থেকে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন তিনি।  

এসময় জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, পাবনা-৫ সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স, মাছরাঙা টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু, জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন এবং পাবনা জেলা পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সীসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে বিদায় জানান।  

সফরসূচি হিসেবে এদিন বেলা সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানী তেজগাওস্থ বিএএফ বেইজ বাশার হেলিপ্যাড হয়ে রাষ্ট্রপতির বাসভবন বঙ্গভবনে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

এর আগে গত ১৫ মে বেলা ১২টার দিকে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে নিজ জেলা পাবনায় এসে পৌঁছান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

এরপর পাবনা সার্কিট হাউজে উপস্থিত হয়ে গার্ড অব অনার গ্রহণ করেন। দুপুর দেড়টায় জেলা পরিষদ বঙ্গবন্ধু চত্ত্বরের নাম ফলক উদ্বোধন ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন। এরপর পাবনা সদর আরিফপুর কবরস্থানে গিয়ে বাবা-মায়ের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পন ও মোনাজাতে অংশ নেন।

এরপর তিনি স্কয়ার বাগানবাড়িতে পারিবারিক সমাধিস্থলে উপস্থিতি হয়ে পুষ্পস্তবক অর্পন এবং প্রার্থনায় অংশ নিয়ে প্রথম দিনের কার্যক্রম শেষ করে সার্কিট হাউজে অবস্থান করেন।

ওইদিন (১৫ মে) রাতেই তিনি আকস্মিকভাবে বাল্যবন্ধুদের নিয়ে সময় কাটানো স্মৃতিময় আড্ডাস্থল ঐতিহ্যবাহী লক্ষ্মী মিষ্ঠান্ন ভান্ডারে আসেন এবং বেশ কিছুক্ষণ সেখানে অবস্থান করেন।

দ্বিতীয়দিন মঙ্গলবার (১৬ মে) বেলা ১১টার দিকে পাবনার বিসিক শিল্পনগরীতে স্কয়ার সায়েন্স অ্যান্ড লাইফ প্ল্যান্ট উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি। পরে বেলা ১২টার দিকে পাবনা প্রেসক্লাবে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং বিকেলে পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে নাগরিক সংবর্ধনায় অংশ নেন।  

সেখানে তিনি কৈশোর ও রাজনৈতিক জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনার স্মৃতিচারণ করেন এবং প্রয়াত ও বর্তমান বন্ধু-বান্ধবদের স্মরণ করেন। একই সঙ্গে সমসাময়িক বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। সবশেষে তিনি সকলের চাওয়া পাওয়ার আলোকে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে পাবনা-ঢাকা সরাসরি ট্রেন চলাচলের ঘোষণা দেন।

তৃতীয়দিন, বুধবার (১৭ মে) বেলা ১২টার দিকে রাষ্ট্রপতি তার আরেক স্মৃতিময় আড্ডাস্থল পাবনা ডায়াবেটিক সমিতি পরিদর্শন করেন এবং সুধি সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। বিকেলে পাবনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের জাদুঘর, বঙ্গবন্ধু কর্ণার, বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল উদ্বোধন এবং আইনজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

বিকেল ৫টার দিকে নিজ এলাকায় বসতবাড়ির সামনে তার নিজের নামে করা বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বিনোদন পার্ক পরিদর্শন করেন। এসময় পার্ক সংলগ্ন নিজের বাড়িতেও কিছুক্ষণ অবস্থান করেন। পরে রাতে বনমালী শিল্লকলা একাডেমিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।

এদিকে, দীর্ঘদিন পর নিজ জেলাতে রাষ্ট্রপতি পাওয়ায় পাবনাবাসীর মধ্যে বাঁধ ভাঙা উল্লাস পরিলক্ষিত হয়। আলোক সজ্জায় সজ্জিত হয় জেলা শহর পাবনা। আনন্দ মিছিল, মিষ্টি বিতরণসহ সারা শহরে শতাধিক তোরণ নির্মাণসহ দলীয় নেতাকর্মীদের ব্যানার ফেস্টুনে এক অন্য রূপ পরিলক্ষিত হয়।

পাবনা জেলা যুবলীগের তরুণ নেতা যুগ্ন আহ্বায়ক শিবলী সাদিক বলেন, সারা জেলার মানুষের মতো আমরা দলের সাধারণ নেতাকর্মীরা অধির আগ্রহে প্রহর গুণছিলাম মহামান্য রাষ্ট্রপতির জন্য। তিনি বীরের বেশে নিজ জেলাতে আসলেন, আর মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন। এই ঐতিহাসিক দিনের বা সময়ের সাক্ষী হতে পেরে জীবন ধন্য হয়েছে। আমরা এখন সকলের কাছে গর্বের সঙ্গে বলতে পারছি যে, আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতির জেলার মানুষ। এটি অত্যন্ত আনন্দের ও গর্বের।   

জেলা আওয়ামী লীগের তরুণ নেতা রফিকুল ইসলাম রুমন বলেন, দেশের একজন সর্বজন গ্রহণযোগ্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাদা মনের মানুষ, আমাদের জেলার সূর্য্য সন্তান মহামান্য রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। সারা বাংলাদেশের মানুষ আজ আমাদের বিশেষভাবে চিনতে পারছে। এটা কতটা গর্বের বিষয়, সেটা ভাষায় প্রকাশ করাটাই কঠিন। এই চারদিন আমাদের ঈদের চাইতে বেশি আনন্দে কেটেছে। আমরা জেলাবাসী তাকে বরণ করতে পরে খুবই খুশি।

রাষ্ট্রপতির আগমন নিয়ে পাবনা প্রেসক্লাব সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান বলেন, দীর্ঘ সাংবাদিকতার জীবনে কখনো কল্পনাও করতে পারিনি যে, আমাদের কাছের মানুষ, আপন মানুষ রাষ্ট্রের প্রধান ব্যক্তি হবেন। তার কাছে, তার সান্নিধ্যে থাকতে বা বসতে পারবো! তিনি আমাদের রাষ্ট্রের অভিভাবক। গর্বে বুকটা ভরে যাচ্ছে। আমাদের চাওয়া-পাওয়া, আবদারের বিষয় তার নখদর্পণে। আমাদের চাইতে হবে না, তিনি চাওয়ার আগেই সবকিছু পূরণ করে দেবেন। সফলভাবে সব অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। দেশের ইতিহাসে লেখা থাকবে, পাবনা প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি। তার আগমন উপলক্ষে যতগুলো কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল, সমস্ত অনুষ্ঠান সফলভাবে সমাপ্ত হয়েছে। পাবনাবাসী তার জন্য দোয়া করেছেন দু-হাত তুলে। এই বটবৃক্ষের ছায়া তলে আমরা থাকতে চাই।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৪ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০২৩
এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।