ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দু্ই জাপানি পর্যটকের সব কেড়ে নিয়ে প্রমোদভ্রমণে তারা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২৩
দু্ই জাপানি পর্যটকের সব কেড়ে নিয়ে প্রমোদভ্রমণে তারা গ্রেপ্তার হওয়া ছিনতাইকারী

ঢাকা: রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ ও সংলগ্ন কবরস্থানে ঘুরতে যান জাপানি দুই পর্যটক। সুযোগ বুঝে ওই দুই নাগরিককে মিসগাইড করে কবরস্থানের নির্জন স্থানে নিয়ে চাপাতির মুখে তাদের সর্বস্ব কেড়ে নেয় ছিনতাইকারীরা।

ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ছিনতাই করা জাপানি ইয়েন টাকায় রূপান্তর করে ও আইফোন বিক্রি করে প্রমোদভ্রমণে কক্সবাজার চলে যায় দুই ছিনতাইকারী। খবর পেয়ে বিমানযোগে কক্সবাজার যায় ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের টিম। পরে ছিনতাইকারী দুইজনকে সীতাকুন্ডু এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গত ২৪ এপ্রিল রাত ৯টার দিকে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে ছিনতাইয়ের শিকার হন জাপানি দুই নাগরিক। এ ঘটনায় ২৫ এপ্রিল মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করা হয়।

মামলাটি তদন্তের ধারাবাহিকতায় পুরো এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) মোহাম্মদপুরের বোটঘাট এলাকা থেকে আসামি খায়রুল ইসলাম স্বপনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যমতে সীতাকুন্ডু থেকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত জিহাদুল ইসলাম মামুন ও আবু রাসেল প্রত্যয়কে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ জানায়, গত ২১ এপ্রিল জাপানি ২ নাগরিক বাংলদেশে আসেন। ২৪ এপ্রিল তারা শুক্রাবাদ এলাকার হোটেল নন্দিনীতে উঠেন। এদিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ ও সংলগ্ন কবরস্থানে ঘুরতে যান।

রাত ৯টার দিকে জাপানি নাগরিকরা কবরস্থান থেকে বের হতে চাইলে ৩ যুবক মিসগাইড করে কবরস্থানের ভেতরের দিকে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে ওই তিনজন চাপাতি দিয়ে ভয় দেখিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে দুই জাপানি নাগরিকের কাছ থেকে পাসপোর্ট, ১ লাখ ৫৩ হাজার ৮০০ জাপানি ইয়েন, বাংলাদেশি ২৮ হাজার টাকা, ২টি আইফোন, ২টি ক্রেডিট কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, হেলথ কার্ড, ১টি পোর্টেবল হটস্পট ও ১টি ব্লুটুথ ছিনিয়ে নেয়।

এ ঘটনায় জাপানি নাগরিকরা ভীত হয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে কাউকে কিছু না জানিয়ে হোটেলে চলে যায়। পরদিন হোটেল ম্যানেজারকে বিষয়টি অবহিত করলে হোটেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ বিষয়টি জানতে পারে। পরে হোটেল কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে এ বিষয়ে একটি মামলা করেন।

শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক।

তিনি বলেন, দুই জাপানি নাগরিক ছিনতাইয়ের শিকার হওয়ার বিষয়টি আমাদের জন্য বিব্রতকর। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্তে নেমে ঘটনাস্থল কবরস্থানের গেট ও আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ। এর ধারাবাহিকতায় ২৭ এপ্রিল মোহাম্মদপুর বোটঘাট এলাকা থেকে ঘটনায় জড়িত খায়রুল ইসলাম স্বপনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্য ও দেখানো মতে কবরস্থানের দেয়াল সংলগ্ন মাঠ থেকে লুণ্ঠিত জাপানি নাগরিকের পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স, হেলথ কার্ড, ২টি ক্রেডিট কার্ড ও ১টি পাসপোর্ট ছেড়া অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

এরমধ্যে পুলিশ জানতে পারে ছিনতাইয়ে জড়িত বাকি দুইজন কক্সবাজারে প্রমোদভ্রমণে গেছেন। তাৎক্ষণিক অপর একটি টিমকে বিমানযোগে কক্সবাজার পাঠানো হয়। সেখানে গিয়ে জানা যায়, ছিনতাইকারী দুইজন সীতাকুন্ডে অবস্থান করছেন। তারা আবার স্থান পরিরিবর্তন করতে পারে এমন আশঙ্কায় সেই টিমকে সঙ্গে সঙ্গে সীতাকুন্ডে পাঠানো হয়।

পরে সীতাকুন্ড থানা এলাকা থেকে ঘটনায় জড়িত জিহাদুল ইসলাম মামুন ও আবু রাসেল প্রত্যয়কে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে লুণ্ঠিত ১টি আইফোন, ৩০ হাজার জাপানি ইয়েন, ১টি পোর্টেবল হটস্পট ও ১টি ব্লুটুথ উদ্ধার করা হয়।

ডিসি বলেন, জিহাদুল ইসলাম মামুন ও আবু রাসেল প্রত্যয় ছিনতাইকৃত ৯০ হাজার ইয়েন ও অন্যান্য মালামালসহ প্রমোদভ্রমণের জন্য কক্সবাজার চলে যায়। কক্সবাজার যাওয়ার পর তারা বেশিরভাগ ইয়েন ভাঙিয়ে খরচ করে। কক্সবাজার ভ্রমণ শেষে সীতাকুণ্ড জলপ্রপাত দেখার উদ্দেশে সীতাকুণ্ড পৌঁছালে পুলিশের একটি টিম তাদের গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তার আবু রাসেল প্রত্যয়ের বিরুদ্ধে একটি দ্রুত বিচার আইনের মামলাসহ মোট ৩টি মামলা রয়েছে। ঘটনায় জড়িত বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার ও লুণ্ঠিত বাকি মালামাল উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।

ডিসি আজিমুল হক বলেন, জাপানি দুই পর্যটক কারো সহায়তা ছাড়াই বধ্যভূমি পরিদর্শনে যায়। আমরা যা বুঝেছি তারা ভেবেছিল সেখানে বৌদ্ধদের নিদর্শন রয়েছে, সে ধারণা থেকে তারা সেখানে গিয়েছিল। ঈদপরবর্তী সময় বধ্যভূমি সাধারণত ফাঁকা ছিল। রাত নয়টার দিকে তারা ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন।

ছিনতাইকারীরা একটা আইফোন বিক্রি করে দিয়েছে, সেটা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। এছাড়া জাপানি ইয়েন কনভার্ট করে তারা বেশিরভাগই খরচ করে ফেলেছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রমজানে ঢাকায় ছিনতাই ছিল না বললেই চলে, বড় কোনো ঘটনা ঘটেনি। আপনারা জানেন বসিলা, মোহাম্মদপুরে বিপুল সংখ্যক ভাসমান মানুষ বাস করে। তাই এখানে অপরাধের প্রবণতা থাকে, তবে এবার অনেক কম হয়েছে। কারণ রমজানে আমার প্রত্যেক পুলিশ অফিসাররা মাঠে ছিল।

এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত জাপানি এক নাগরিক বলেন, বাংলাদেশের পুলিশ খুব দ্রুততম সময়ে কাজ করেছে, এজন্য তাদের অনেক ধন্যবাদ।

এ সময় ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মৃত্যুঞ্জয় দে সজল, মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২৩
পিএম/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।