ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় খুলনায় বিমানবন্দর অপরিহার্য

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০২৩
অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় খুলনায় বিমানবন্দর অপরিহার্য

খুলনা: অর্থনীতির অপার সম্ভাবনাময় খুলনায় সব কিছু থাকলেও নেই বিমানবন্দর। যে কারণে অনেকটা পিছিয়ে পড়ছে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা।

বাগেরহাট শহর, মোংলা বন্দর ও বিভাগীয় শহর খুলনার সঙ্গে প্রায় ২৫ মিনিটের দূরত্বে নির্মিত হওয়ার কথা ছিল খান জাহান আলী বিমানবন্দর। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে বিমানবন্দরটি নির্মাণের কথা বলা হলেও কার্যকর বিনিয়োগকারী না পাওয়ায় সম্প্রতি প্রকল্পটি প্রত্যাহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন খুলনার নাগরিক নেতা, মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী, ব্যবসায়ী নেতারাসহ সর্বস্তরের মানুষ।

তাদের দাবি, বিমানবন্দরটি হলে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের ইকো ট্যুরিজম, হযরত খান জাহান আলীর (র.) মাজার ও বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ কেন্দ্রিক পর্যটন শিল্পের দ্রুত বিকাশ, মোংলা সমুদ্র বন্দর, মোংলা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা, চিংড়ি শিল্পসহ বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম আরও বৃদ্ধি পেত। ফলে খুলনাঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থা ঘুরে দাঁড়াতে পারতো।

খানজাহান আলী বিমানবন্দর প্রকল্পটি সরকারের রাজস্ব খাত থেকে বাস্তবায়নের দাবিতে সরব হচ্ছেন খুলনার নাগরিক নেতারা। বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি, খুলনা নাগরিক সমাজ, বৃহত্তর আমরা খুলনাবাসী, আমরা বৃহত্তর খুলনাবাসীসহ বিভিন্ন সংগঠন প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পুর্নবিচেনার দাবি জানিয়ে বিমানবন্দরটি নির্মাণের অপরিহার্যতা তুলে ধরেছেন।

খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক মো. মফিদুল ইসলাম টুটুল বাংলানিউজকে বলেন, বিভাগে বিমানবন্দর নির্মাণ আমাদের প্রাণের দাবি ছিল। খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ পিপিপিকে দেওয়া ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। তারা এ প্রকল্প স্থগিত করেছে। আমরা চাই, সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এবারের বাজেটে অর্থবরাদ্দ দিয়ে বিমানবন্দর নির্মাণ কাজ শুরু করা হক। আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণে খানজাহান আলী বিমান বন্দর অত্যবশ্যকীয়। ব্যবসায়ীরা সময় সাশ্রয় করতে বিমানবন্দর ব্যবহার করবে। এটি চালু হলে নতুন নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে।

তিনি আরও বলেন, মোংলা বন্দরকে কেন্দ্র করে এখানে নতুন নতুন ব্যবসায়ীরা আসবে। এখানে এখনও স্বল্পমূল্যে জমি পাওয়া যায়। এছাড়া অল্পমূল্যে শ্রমিক পাওয়া যায়। যে কারণে ব্যবসায়ীরা আসবেন। কিন্তু বিমানবন্দর ও পাইপের গ্যাস না থাকার কারণে সেটা বিঘ্ন হতে পারে। আমরা প্রত্যাশা করি খানজাহান আলী বিমানবন্দরটা হোক; এছাড়া ভোলা থেকে যে পাইপের গ্যাস আসতে থাকুক।

মোংলা বন্দর বার্থ ও শিপ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা এস এম মোস্তাক বাংলানিউজকে বলেন, খান জাহান আলী বিমানবন্দর প্রকল্পটি স্থগিত করা হতাশাজনক। সুন্দরবনের পর্যটন শিল্প বিকাশ, মোংলা বন্দরে আমদানি-রপ্তানি, অর্থনৈতিক জোন কার্যকরসহ এ অঞ্চলের শিল্প-বাণিজ্য সচল রাখার ক্ষেত্রে বিমানবন্দরের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী ও পর্যটকদের আরামদায়ক স্বল্প সময়ে যাতায়াতে বিমানবন্দরটি নির্মাণের জোর দাবি জানাচ্ছি।

খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মো. বাবুল হাওলাদার বলেন, মোংলা বন্দর সচল, সুন্দরবন কেন্দ্রীয় পর্যটন শিল্পের বিকাশ, ইপিজেড ও শিল্পায়নের সব সুবিধা প্রাপ্তিতে বিমানবন্দরের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। দেশে তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও পাঁচটি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর (ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে আন্তর্জাতিক; আর বরিশাল, যশোর, সৈয়দপুর, রাজশাহী ও কক্সবাজারে আছে অভ্যন্তরীণ) রয়েছে। কিন্তু দেশ স্বাধীনের এত বছর পরও খুলনায় বিমানবন্দর হয়নি। যা খুবই দুঃখজনক।

মোংলা বন্দর, খানজাহান আলীর মাজার, ষাট গম্বুজ, সুন্দরবনের পর্যটন, শিল্পনগরীর খুলনার শিল্প-বাণিজ্য সচল রাখা, মোংলা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা ও অর্থনৈতিক জোন কার্যকর করা, এ অঞ্চলের প্রখর উর্বরা শক্তিসম্পন্ন বিস্তীর্ণ এলাকা বিবেচনায় সর্বোপরি শিল্প-বাণিজ্যে পদ্ম সেতুর সুফল ভোগ করার জন্য খুলনায় একটি বিমান বন্দর অপরিহার্য বলেও মনে করেন এ নাগরিক নেতা।

এদিকে রোববার (১৯ মার্চ) দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে। এতে সংগঠনের মহাসচিব শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতি ও সামাজিক নানা সূচকে বাংলাদেশ এখন উল্লেখযোগ্য নাম। নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের মানুষের অদম্য আকাঙ্ক্ষা, প্রাণশক্তি আর ঘাম ঝরানো পরিশ্রমের কারণে বিশ্বে উন্নয়নের বিস্ময় এখন বাংলাদেশ। স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ এবং সমৃদ্ধ উন্নত দেশের অভিযাত্রায় খুলনা এখন শক্তিশালী অভিযাত্রী। এ অভিযাত্রায় খুলনা আগামীতে উন্নত বাংলাদেশ উপহার দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, যদি খুলনার সম্ভাবনাগুলোকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো যায়। খুলনা প্রাকৃতিক এবং ভূ-রাজনীতির সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে সড়ক, রেল, নৌ, সমুদ্রপথে ভারত, নেপাল, ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে পারে। এ কারণে খুলনায় বিমানবন্দর অপরিহার্য। খুলনার দীর্ঘদিনের দাবি ও বিমানবন্দরটি বাস্তবায়ন না হওয়া এ অঞ্চলের মানুষের জন্য হাতাশাজনক।

তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না হলে অধিগ্রহণকৃত ১০০ হেক্টর জমি ও উন্নয়ন বাবদ ব্যয় হওয়া বিপুল অংকের অর্থের অপচয় হবে। অধিগ্রহণ করা জমি অনাবাদি ও অব্যবহৃত থাকবে। এ কারণে বিমানবন্দরটির যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। এখানে মোংলা সমুদ্র বন্দর, ইপিজেড ও সুন্দরবন অবস্থিত; যে কারণে ব্যবসা বাণিজ্য ও পর্যটনের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে বিমানবন্দর থাকা অত্যন্ত জরুরি। এই বিমানবন্দর নির্মাণে পিপিপি সিদ্ধান্ত বাতিল করে সরকারি অর্থায়নে পরপর দুই বাজেটে অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে ২০২৫ সালে ব্যবহার উপযোগী করার দাবি জানাচ্ছি।

এ লক্ষ্যে আগামী ৩০ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খুলনা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, মোংলা সমুদ্রবন্দর ঘিরে খুলনা অঞ্চলের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনা করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে একটি বিমানবন্দর তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল প্রায় তিন দশক আগে। এ জন্য বাগেরহাটের রামপালে দুই দফায় অনেক জমিও অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু এখন সম্ভাব্যতা যাচাই করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে বিমান বন্দরটি এই মুহূর্তে লাভজনক হবে না। ফলে বিমান বন্দরটি তৈরি না করে প্রকল্পটি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০২৩
এমআরএম/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।