ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

৩২ বছরেও মায়ের কোলে রিশাত!

ডালিম হাজারী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৩
৩২ বছরেও মায়ের কোলে রিশাত!

ফেনী: বয়স তার ৩২ পার, উচ্চতা মাত্র ৩০ ইঞ্চি। বয়স বাড়লেও সে আলোকে বাড়েনি উচ্চতা।

অনেকেরই ধারণা, দেশের মধ্যে সবচেয়ে খর্বকায় মানুষ তিনিই।

বলছিলাম ফেনীর পরশুরাম উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের উত্তর চন্দনা গ্রামের বাসিন্দা জাকির হোসেন রিশাতের কথা।

খর্বকায় এ মানুষটির জন্ম ১৯৯১ সালের ১২ মে। জন্মের সময় আর দশটি সাধারণ শিশুর মতোই ছিলেন জাকির হোসেন রিশাত। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শারীরিকভাবে তুলনামূলকভাবে বাড়েননি তার উচ্চতা।

শারীরিক জটিলতার কারণে উপার্জনক্ষম না হওয়ায় মানববেতর জীবনযাপন করছে তার পরিবার। এই যুবককে দেশের ক্ষুদ্রকায় মানব হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া যায় কিনা- বিষয়টি খতিয়ে দেখছে জেলা প্রশাসক।

পরিবার সূত্র জানায়, বয়স ৩২ হলেও রিশাতের জন্য এখনো তার মা নূর হাবাই একমাত্র ভরসা। রিশাতকে গোসল, খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে পোশাক পরিয়ে দেওয়াসহ যাবতীয় কাজ করে দিতে হয় মা নূর হাবাকে। তবে মাঝে মাঝে এলাকার লোকজনের সহযোগিতায় স্থানীয় দোকানে গিয়ে কিছু সময় কাটান তিনি। রিশাত একটু একটু করে কথা বলতে পারেন। তার নাম বলতে পারেন। স্থানীয়দের দেওয়া কিছু টাকা-পয়সা আর প্রতিবন্ধী ভাতায় কাটে রিশাতের জীবন জীবিকা।  

জানা গেছে, পরশুরাম উপজেলায় সর্বমোট দশজন ক্ষুদ্র আকৃতির মানুষের নাম উঠে আসলেও ক্ষুদ্রকায় হিসাবে রিশাত সবার ওপরে। তার বাবার নাম মো. মোরশেদ খোন্দকার। ছয় মাস আগে তার বাবা মারা যান। বড় ভাই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আলাদা থাকেন।

রিশাত ও তার মা নূর হাবা উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসকের কাছে সরকারিভাবে একটি ঘর বরাদ্দ চেয়েছেন। চন্দনা গ্রামের বাসিন্দা রিশাতের আরও এক বোন আছে। তান নাম মোসাম্মাৎ নিপা (৩৬)। দশ বছর আগে তার বিয়ে হয় এবং তিনি শ্বশুরবাড়িতেই থাকেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুর রহিম বলেন, উচ্চতার সঙ্গে ওজনও কম রিশাতের। জন্ম থেকে রিশাত নামের ছোট মানুষটাকে কম ভুগতে হয়নি। একজন স্বাভাবিক মানুষ যা যা করতে পারেন, তা করতে পারেন না তিনি। জীবনে চলা বেশ কঠিন তার জন্য। ছোট বেলায় স্কুলেও গিয়েছিলেন। কিন্তু স্কুলে শিক্ষার্থীদের নানা মন্তব্য শুনতে হতো বলে পড়াশোনা আর করা হয়নি তার। ছয় মাস আগে মারা যান বাবা। বড় ভাই পরিবার নিয়ে আলাদা। বর্তমানে তার একমাত্র অবলম্বন মা নূর হাবা। প্রতিবন্ধী ভাতা পেলেও তা দিয়ে চলে না তাদের জীবন-জীবিকা। তাই অভাব-অনটনে মায়ের সঙ্গে অনেকটা মানববেতর জীবন পার করছেন রিশাত। তাকে দেখতে প্রতিদিন নানা প্রান্তের মানুষ ছুটে আসেন।

রিশাতের মা নূর হাবা জানান, সারা বছর চিকিৎসা ও শারীরিক দুর্বলতার কারণে চরম কষ্টে দিনযাপন করতে হচ্ছে। তাছাড়া পরিবারের আয়-রোজগার করার মতো কেউ না থাকায় বর্তমানে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসেন বলেন, রিশাত প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। তার বয়স বত্রিশ হলেও আকৃতির দিক থেকে এখনো শিশুর মতোই।

পরশুরাম উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মজুমদার জানান, সম্ভবত রিশাত ফেনী জেলার মধ্যে সবচেয়ে ছোট আকৃতির মানুষ হবে। তার বয়স বত্রিশ হলেও উচ্চতার দিক থেকে এখনো শিশু মতোই। বিষয়টি ইতোপূর্বে আমাদের জানা ছিল না। পরবর্তীতে তাকে সরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে সহযোগিতা দেওয়া হবে।

পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা শামসাদ বেগম বলেন, বিষয়টি আমি আপনাদের কাছে শুনলাম। রিশাতকে পরবর্তীতে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।

ফেনী জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ উল- হাসান বলেন, ইতোমধ্যেই রিশাত প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। এছাড়াও জেলা প্রশাসন ও সমাজসেবা থেকেও তাকে সহায়তা করা হবে।  

সেই সঙ্গে প্রতিবন্ধী এ ক্ষুদ্রকায় মানুষটির সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২৩
এসএইচডি/এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।