ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

মেয়ে হত্যার সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন সায়মার বাবা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০২০
মেয়ে হত্যার সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন সায়মার বাবা

ঢাকা: রাজধানীর ওয়ারীতে সিলভারডেল স্কুলের ছাত্রী সামিয়া আফরিন সায়মাকে (৬) ধর্ষণের পর হত্যা মামলার সাক্ষ্য দিতে এসে আদালতে কাঁদলেন তার বাবা আব্দুস ছালাম। এদিন এক নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক কাজী আব্দুল হান্নানের আদালতে বাদী হিসেবে জবানবন্দি দেন তিনি।

জবানবন্দিতে আব্দুস ছালাম বলেন, ‘খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে একই ভবনের নয়তলায় উত্তর পাশের ফ্ল্যাটের ইউনিটের মূল দরজা খোলা পেয়ে ভেতরে ঢুকি। ফ্ল্যাটের উত্তর পাশের রুমে আমার মেয়ের স্যান্ডেল পড়ে থাকতে দেখি।

স্যান্ডেল দেখে সন্দেহ হওয়ায় ভেতরে খোঁজাখুঁজি করে একপর্যায়ে রান্নাঘরের সিংকের নিচে আমার মেয়ের লাশ পড়ে থাকতে দেখি। মেয়ের গলা শক্ত করে পাটের রশি দিয়ে পেঁচানো, মুখে জমাট বাঁধা রক্ত, পরনের প্যান্টের সামনের অংশ ছেঁড়া। মেয়ের অবস্থা দেখে সঙ্গে থাকা আমার অপর মেয়ে ও স্ত্রী চিৎকার করে রুম থেকে বের হয়ে যায়। আমি ওয়ারী থানায় ফোন করি। ’

অপর সাক্ষী বাসার দারোয়ান ফরিদ মোল্লা জবানবন্দিতে বলেন, ‘গত বছরের ৫ জুলাই সন্ধ্যা ৭টার দিকে সিঁড়ির নিচে দাঁড়ানো ছিলাম। তখন দেখি হারুন উপরের থেকে সিঁড়ি দিয়ে তড়িঘড়ি করে নামছে। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলে সে বলে পারভেজ সাহেবের বাচ্চার জন্য ওষুধ আনতে যাচ্ছি। তবে পরে আর তাকে ফেরত আসতে দেখিনি। এপর আব্দুস ছালামের স্ত্রীর চিৎকার শুনে ভবনের ছয়তলায় যাই, গিয়ে দেখি আব্দুস ছালামের বাচ্চাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ’ 

এই মামলায় অভিযোগপত্রে থাকা ১৮ জন সাক্ষীর মধ্যে প্রথম দিনে এই দুজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। জবানবন্দি গ্রহণের পর আসামিপক্ষের আইনজীবী আনোয়ার উল্লাহ তাদের জেরা করেন। এরপর বিচারক পরবর্তী সাক্ষীর জন্য ১৪ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন।  

গত ২ জানুয়ারি রাজধানীর ওয়ারীতে সিলভারডেল স্কুলের ছাত্রী সামিয়া আফরিন সায়মাকে (৭) ধর্ষণের পর হত্যা মামলার একমাত্র আসামি হারুন অর রশিদের (২৬) বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন একই আদালত।  

গত বছরের ৫ নভেম্বর এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির ওয়ারী জোনাল টিমের পরিদর্শক মোহাম্মদ আরজুন। এরপর ২০ নভেম্বর ঢাকার মহানগর হাকিম মইনুল ইসলাম অভিযোগপত্রটি ‘দেখিলাম’ লিখে স্বাক্ষরের পর মামলাটি বিচারের জন্য এক নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল এ বিচারের জন্য বদলির আদেশ দেন।

২০১৯ সালের ৫ জুলাই সন্ধ্যার পর থেকে শিশু সায়মার খোঁজ পাচ্ছিল না তার পরিবার। অনেক খোঁজাখুঁজির পর আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ওয়ারীতে বনগ্রামের খালি ফ্ল্যাটের নবম তলায় তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এ সময় তার গলায় রশি প্যাঁচানো, মুখ বাঁধা ও রক্তাক্ত অবস্থায় ছিল। খবর পেয়ে রাত ৮টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ঘটনার পরদিন সায়মার বাবা আব্দুস সালাম বাদী হয়ে ওয়ারী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।

এই মামলার একমাত্র আসামির বাড়ি কুমিল্লায়। ওয়ারীর বনগ্রামের যে বহুতল ভবনে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাটি ঘটেছে, তার অষ্টমতলায় খালাতো ভাই পারভেজের বাসায় থাকতেন তিনি। ঠাঁটারীবাজারে পারভেজের রঙের দোকানেই তিনি কাজ করতেন। আর হত্যার শিকার সাত বছর বয়সী মেয়েটি ষষ্ঠতলায় পরিবারের সঙ্গে থাকতো। অন্যদিনের মতো আটতলায় পারভেজের মেয়ের সঙ্গে খেলতে যাওয়ার কথা বলে ওইদিন বাসা থেকে বের হয়েছিল সে।

সায়মা হত্যা মামলার একমাত্র আসামি হারুন অর রশিদকে গত ৭ জুলাই তার বাড়ি কুমিল্লার তিতাস থানার ডাবরডাঙ্গা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। পরদিন আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয় হারুন। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠান আদালত। সেই থেকে সে কারাগারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০২০ 
কেআই/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।