ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘সর্বোচ্চ সাজা প্রত্যাশা’, ‘মামলার কোনো তথ্যপ্রমাণ নেই’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৮
‘সর্বোচ্চ সাজা প্রত্যাশা’, ‘মামলার কোনো তথ্যপ্রমাণ নেই’ ২১ আগস্ট গ্রেনেডে হামলার পরের কিছু চিত্র

ঢাকা: ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের জনসভায় নৃশংস গ্রেনেড হামলা ও হত্যা মামলার রায় ১০ অক্টোবর ঘোষণা করা হবে। একই সঙ্গে জামিনে থাকা আট আসামির জামিন বাতিল করে সবাইকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

আসামিপক্ষে আইনগত বিষয়ে যুক্তি উত্থাপন শেষে মঙ্গলবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে স্থাপিত ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন এ তারিখ ধার্য করেন।
 
এর আগে বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হয়ে দুপুর ২টায় শেষ হয়।

আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন। পরে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান সমাপনী যুক্তিতর্ক ট্রাইব্যুনালে উত্থাপন করেন।  
 
অন্যান্যদিনের মতো কারাগারে থাকা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ২৩ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। হাজির হন- খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, শহিদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরীসহ জামিনে থাকা ৮ আসামিও।

মোট ১২০ কার্যদিবস যুক্তিতর্ক শোনেন ট্রাইব্যুনাল। এরমধ্যে রাষ্ট্রপক্ষে ৩০ দিন ও আসামিপক্ষে ৯০দিন যুক্তিতর্ক উত্থাপন করেন।
 
আসামিপক্ষে আইনজীবী এসএম শাহজাহান বলেন যে, এ মামলার কোনো তথ্যপ্রমাণ নেই। এ মামলা ভিত্তিহীনভাবে সাজানো হয়েছে। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে সব আসামির জন্য ট্রাইব্যুনালের কাছে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন তিনি। সিনিয়র আইনজীবী আব্দুর রেজাক খান ও খন্দকার মাহবুব হোসেনও সব আসামির পক্ষে সংক্ষিপ্ত যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন।

শেষে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, গ্রেনেড হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রধানমন্ত্রী (ওই সময় বিরোধী দলীয় নেতা) শেখ হাসিনাকে হত্যা করা। তাকে হত্যা করা সম্ভব না হলেও আইভি রহমানসহ ২২ জনকে হত্যা করা হয়েছে। কোনো কোনো প্রতিবেদনে ২৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।  
 
শুনানি শেষে সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, কাউকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এ মামলায় জড়ানো হয়নি। এ মামলায় যারা আসামি সবারই উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনাকে হত্যা করা। কেউ হামলায় অংশ নিয়েছে, কেউ ষড়যন্ত্র করেছে, কেউ অর্থ দিয়েছে, কেউ গ্রেনেড সরবরাহ করেছে। তথ্যপ্রমাণ ও সাক্ষির ভিত্তিতে এ মামলার সব আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা প্রত্যাশা করছি সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হবে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী এসএম শাহজাহান সাংবাদিকদের বলেন, অধিকতর তদন্তের নামে মামলা পুনরায় তদন্ত করা আইনে কোনো বিধান নেই। অধিকতর তদন্তের নামে যাদের এ মামলায় জড়ানো হয়েছে তারা কেউই এ মামলার সঙ্গে জড়িত না। তাদের অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি আদালতে প্রমাণিত হয়নি এবং কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণও নেই। একজন আসামির জবানবন্দির উপর নির্ভর করে তাদের আসামি করার কোনো বিধান আইনে নেই। তারা বেকসুর খালাস পাবে বলে আশা করছি।

এ মামলায় আট আসামির জামিনে থাকা নিয়ে আপত্তি জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। তারা বলেন, আসামিরা জামিনে থাকলে ফের নাশকতা করতে পারে কিংবা পালিয়ে যেতে পারে। তবে জামিন বাতিলের বিপক্ষে শুনানি করেন আসামিদের কয়েক আইনজীবী। তারা বলেন, জামিনে থাকা আসামিরা ট্রাইব্যুনালে নিয়মিত হাজিরা দিয়েছেন। তারা জামিনে থাকলে পালিয়ে যাবেন না। তাছাড়া তাদের অনেকের পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র ট্রাইব্যুনালে জমা দেওয়া আছে।
 
রায় না হওয়া পর্যন্ত আসামিদের জামিন বহাল রাখার আবেদন জানান তারা।  

দীর্ঘ শুনানি শেষে বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন বলেন, আমরা এ মামলার শেষ পর্যায়ে এসেছি। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের ধন্যবাদ জানাই। আইনের ব্যাখ্যা সঠিকভাবে তুলে ধরার জন্য গণমাধ্যমকর্মীদেরও ধন্যবাদ জানান তিনি।

বিচারক আরও বলেন, আদালত প্রাঙ্গণের প্রতিটি ফ্যান-লাইটের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘ চেনা-জানা তৈরি হয়েছে। আসামিদের সঙ্গেও তাদের নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। মামলাটি শেষ পর্যায়ে এসে গেছে। এবার রায়ের দিন ঠিক করতে হবে।
এরপর বিচারক ১০ অক্টোবর রায়ের দিন ঠিক করে দেন। একইসঙ্গে এ মামলার আট আসামির জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি।

মামলাটি প্রমাণে চার্জশিটের ৫১১ সাক্ষির মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২২৫ জন সাক্ষি আদালতে উত্থাপন করা হয়েছে।

গত বছরের ৩০ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দের জেরা শেষের মধ্য দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।

এ মামলায় মোট আসামি ছিল ৫২ জন। ২০১৫ সালের ২১ নভেম্বর রাতে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মামলার অন্যতম আসামি সাবেক মন্ত্রী জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর হয়। এছাড়া মুফতি হান্নান ও তার সহযোগী শরীফ শাহেদুল ওরফে বিপুলের গত বছরের ১২ এপ্রিল রাতে ফাঁসি কার্যকর করায় বর্তমানে আসামির সংখ্যা ৪৯ জন।
 
বর্তমানে ৪৯ আসামির মধ্যে ১৮ জন পলাতক রয়েছেন। নতুন করে ৮ আসামিকে কারাগারে নেওয়ায় হাজতে থাকা আসামি সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ জনে।  

অন্যদিকে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ২৩ আসামিকে সকালেই কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপির সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জেল হোসেন কায়কোবাদসহ ১৮ জন আসামি পলাতক রয়েছেন।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের জনসভায় সন্ত্রাসীরা ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালায়। হামলায় আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নির্মমভাবে নিহত হন।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। আহত হন শতাধিক নেতাকর্মী।

এ ঘটনায় মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল জলিল ও সাবের হোসেন চৌধুরী বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় পৃথক তিনটি এজাহার দায়ের করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৮
এমআই/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।