ঢাকা: ছয়বার রায়ের তারিখ পড়লেও হয়নি রায়। ছয় বছর অপেক্ষার পর বিচারের চূড়ান্ত পর্যায়ে এমন রহস্যের কারণ খোঁজে পাচ্ছে না মৃত অরিত্রীর পরিবার।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) ঢাকার নিম্ন আদালতে কোর্ট রিপোর্টার্স ইউনিটির (সিআরইউ) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। এ সময় অরিত্রীর মা বিউটি অধিকারী উপস্থিত ছিলেন।
দিলীপ অধিকারী বলেন, মেয়ে হারানোর ব্যথা নিয়ে ছয়টি বছর কাটালাম। বিচার চাইতে গিয়ে নিজের সবকিছু শেষ হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য ন্যায়বিচার পেলাম না। সাক্ষ্যপ্রমাণ থাকা সত্ত্বেও রায়ের পর্যায়ে এসে আমাদের হতাশ হতে হলো। ছয়বার রায়ের তারিখ পড়লেও অদৃশ্য কারণে তা ঘোষণা করা হলো না। কিন্তু কেন রায় দিল না, এখন আমার মেয়ের আত্মহত্যার প্ররোচনায় মামলার বিচার পাব কি না তা নিয়ে সংশয়ে আছি।
আসামিপক্ষের আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে দিলীপ অধিকারী বলেন, এ মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন মোশারফ হোসেন কাজল। যিনি ফ্যাসিস্ট সরকারের একজন পিপি ছিলেন এবং বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় লড়েছেন। আমার মেয়ের আত্মহত্যা প্ররোচনায় মামলার সাক্ষীদের তিনি বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছেন। বিচার কাজে বাধা দিয়েছেন। এ কারণে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। এ অবস্থায় ন্যায়বিচারের জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
ঘটনার বিবরণ তুলে অরিত্রীর বাবা বলেন, আমার আদরের সন্তান অরিত্রী। ভিকারুননিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেনির একজন মেধাবী ছাত্রী ছিলে। স্কুলের শ্রেনি শিক্ষক হাসনা হেনা, শাখা প্রধান জিনাত আক্তার, অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) নাজনীন ফেরদৌস আমাদের সামনে অরিত্রীর সঙ্গে নির্মম ও নির্দয় আচরণ করায় এবং বারবার টি.সি দেওয়ার হুমকি দেয়। এতে অরিত্রী মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন এবং ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর সে আত্মহত্যা করে।
মেয়ে হারানো এ বাবা আক্ষেপ করে বলেন, পিবিআইতে খোঁজ নিয়েছি, তবে চার মাসের বেশি সময় পার হলেও এই সংস্থা তদন্তের কোনো আদেশ পায়নি। আজ অব্দি কোনো অগ্রগতি নেই। এভাবে যদি সময় চলে যায়, তাহলে কিভাবে আমি ন্যায়বিচার পাব? আমি বিচার নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছি।
জানা যায়, ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর শিক্ষকদের দ্বারা বাবা-মার অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেন অরিত্রী অধিকারী। আত্মহত্যার ঘটনায় অরিত্রীরর বাবা দিলীপ অধিকারী রাজধানীর পল্টন থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস ও শাখাপ্রধান জিনাত আক্তারকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করে ডিবি পুলিশ।
২০১৯ সালের ১০ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা (তৎকালীন) জজ রবিউল আলম। সাক্ষ্যগ্রহণও হয়। পরবর্তীতে মামলাটি ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ-১২ এর বিচারক আব্দুল্লাহ আল মামুনের আদালতে পাঠানো হয়। ২৭ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের তারিখ ধার্য করেন। তবে রায়ের তারিখ ৬ দফা পেছানো হয়। সর্বশেষ ২৫ জুলাই রায় ঘোষণার তারিখে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) পুনরায় মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০২৪
কেআই/এএটি