ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

আদেশ অমান্য: পাসপোর্ট কর্মকর্তাকে দুই ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখলেন হাইকোর্ট

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৩ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০২৪
আদেশ অমান্য: পাসপোর্ট কর্মকর্তাকে দুই ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখলেন হাইকোর্ট

ঢাকা: উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পরও এক ব্যক্তির নামে পাসপোর্ট ইস্যু না করায় সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মো. মনিরুজ্জামানকে আদালত অবমাননার অভিযোগে দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার শাস্তি দিয়েছেন হাইকোর্ট।

ওই কর্মকর্তা তলবে হাজিরের পর শুনানি শেষে বুধবার (৫ জুন) বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত তাকে দাঁড়িয়ে থাকার শাস্তি দেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শিশির মনির। ওই কর্মকর্তার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনিরুজ্জামান।

তিনি জানান, আদালতে ফৌজদারি মামলা চলমান থাকার কথা বলে সুনামগঞ্জের এক ব্যক্তিকে পাসপোর্ট দেওয়া হয়নি। পরে ওই ব্যক্তি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। রিটের শুনানি শেষে আদালত ১৫ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দেন। এ আদেশের পরও পাসপোর্ট বুঝিয়ে দেয়নি। এরপর আদালত অবমাননার আবেদন করা হয়। হাইকোর্ট বিভাগ আদালত অবমাননার রুল জারি করেন এবং ব্যক্তিগত ওই কর্মকর্তাকে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেন। আদালতে হাজির হয়ে তিনি যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন সেটা সন্তোষজনক নয় বলে রায়ে উল্লেখ করেন এবং তাকে আদালত অবমাননার জন্য আজকে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ওই আদালতে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য শাস্তি দেন। আদালত বলেছেন, ফৌজদারি মামলা চলমান আছে কিংবা তদন্ত চলমান আছে এ কথা বলে কাউকে পাসপোর্ট দেওয়া থেকে বিরত রাখা যাবে না। অতীতেও হাইকোর্ট বিভাগ এ ধরনের রায় দিয়েছেন।

শিশির মনির বলেন, এ ধরনের যত পাসপোর্ট আটকে আছে এখন সবগুলো রিলিজ করে দেওয়া উচিত। মামলা থাকলে পাসপোর্ট পাবেন না এ ধরনের কোনো আইন বাংলাদেশে নাই।

তিনি জানান, আদালতে ফৌজদারি মামলা চলমান থাকার কথা বলে সুনামগঞ্জের এক ব্যক্তিকে পাসপোর্ট দেওয়া হয়নি। পরে ওই ব্যক্তি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন।

আইনজীবীদের তথ্য মতে, হুসাইন আহমেদ নামে এক ব্যক্তি পাসপোর্ট পেতে গত বছরের ২২ অক্টোবর অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে সুনামগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসে আবেদন করেন। এ লক্ষ্যে তিনি আবেদনের কাগজের নথি জমা, বায়োমেট্রিক ফিঙ্গার প্রিন্টসহ যাবতীয় নিয়ম সম্পন্ন করার পর তাকে ১৩ নভেম্বর তারিখ উল্লেখ করে ডেলিভারি স্লিপ দেওয়া হয়। তবে, পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময়কালে স্থানীয় থানা থেকে জানানো হয়, তার নামে ছয়টি ফৌজদারি মামলা বিচারাধীন। হুসাইন আহমেদ থানাকে অবহিত করে জানান, মামলাগুলোর পাঁচটিতে তিনি খালাস ও একটি বিচারাধীন। তবে, মামলা বিচারাধীন থাকায় তার পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রতিবেদন নেতিবাচক আসে।

এরপর তিনি পাসপোর্ট চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠান। এর জবাব না পেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। গত ৩ মার্চ হাইকোর্ট ১৫ দিনের মধ্যে হুসাইন আহমেদকে পাসপোর্ট সরবরাহের নির্দেশসহ রুল দেয়। তবে, আদেশের অনুলিপি সুনামগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসে জমা দিয়ে পাসপোর্ট সরবরাহ করতে অনুরোধ করেন। তবে, কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান গত ৩ এপ্রিল হুসাইন আহমেদকে চিঠি দিয়ে ফৌজদারি মামলা বিচারাধীন থাকলে পাসপোর্ট ইস্যু না করার কথা জানিয়ে দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে আবেদন দাখিল করা হয়। তখন আদালত রুল জারি করে তাকে তলব করেন। এর ধারাবাহিকতায় তিনি আদালতে হাজির হলে আদালত তাকে এ শাস্তি দেন।

তবে আদালত অবমাননার রুল জারির পর হুসাইন আহমেদের পাসপোর্ট ইস্যু করা হয় এবং তিনি মঙ্গলবার পাসপোর্ট হাতে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবী শিশির মনির।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩২ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০২৪
ইএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।