ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

তালাক কী, এক্ষেত্রে কখন আদালতের অনুমতি লাগবে?

খাদেমুল ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০২৩
তালাক কী, এক্ষেত্রে কখন আদালতের অনুমতি লাগবে?

উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার পর থেকে আইনে নানা পরিবর্তন এসেছে। এসব পরিবর্তন সত্ত্বেও পারিবারিক বিষয়াদি যেমন- বিয়ে, তালাক ও উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিধানগুলো মুসলিম আইন অনুযায়ী পরিচালিত হয়ে আসছে।

 

তবে মুসলিম পারিবারিক বিধান সংক্রান্ত আইনে বিভিন্ন সময়ে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ আইনে তালাক সংক্রান্ত প্রচলিত বিধানে এই পরিবর্তন আনা হয়।  

এ ছাড়া ১৯৩৯ সালের বিবাহ বিচ্ছেদ আইন, মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রিকরণ) আইন ১ঌ৭৪ ও পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ১৯৮৫ এর বিভিন্ন বিধানের আলোকে মুসলিম আইনে তালাক কার্যকর হয়ে থাকে।

তালাক কী 

আরবি তালাক শব্দের অর্থ ছিন্ন করা বা ভেঙে ফেলা। স্বামী ও স্ত্রী পরস্পরের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক যখন আর টিকিয়ে রাখা কোনোভাবেই সম্ভব নয়, তখন নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্য দিয়ে পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়াই তালাক।  

স্বামী বা স্ত্রী কর্তৃক তালাকের ঘোষণা দেওয়ার পর ইদ্দতকাল অতিবাহিত হলে বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যাবে। মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে তালাক দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বিধান অবশ্যই পালনীয়।

স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক

আইনে সর্বাবস্থায় স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ক্ষমতা স্বামীকে দেওয়া হয়েছে। তবে এই তালাক কার্যকর হতে হলে মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ আইনের ৭ ধারার বিধান প্রতিপালন করতে হবে।

এই আইনের ৭ (১) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তালাক দিতে চাইলে, তিনি যেকোনো পদ্ধতির তালাক ঘোষণার পর যথাশিগগির সম্ভব চেয়ারম্যানকে (স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ/পৌর চেয়ারম্যান/প্রশাসক) লিখিতভাবে নোটিশ দেবেন এবং স্ত্রীকে এই নোটিশের একটি অনুলিপি (নকল) দেবেন।

চেয়ারম্যান বা মেয়রকে নোটিশ দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে তালাক কার্যকর হয়ে যাবে। তালাক ঘোষণার সময় স্ত্রী যদি গর্ভবতী থাকেন, তাহলে এই আইনের ৭ (৫) ধারা অনুযায়ী গর্ভাবস্থা অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তালাক বলবৎ হবে না।  

আইনে নোটিশ পাওয়ার পর চেয়ারম্যান কর্তৃক সালিশ পরিষদ গঠনের বিধান রয়েছে, যে সালিশ পরিষদ তাদের পুনর্মিলনের ব্যবস্থা করবে।

তালাকের ক্ষেত্রে নোটিশ দেওয়া বাধ্যতামূলক। নোটিশ দেওয়া না হলে তা একই আইনের ৭ (২) ধারা মোতাবেক এক বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে।

স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে তালাক

১৯৩৯ সালের বিবাহবিচ্ছেদ আইন অনুযায়ী স্ত্রীকেও তালাকের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে তালাক দেওয়া হলেও একইভাবে নোটিশ দিতে হবে। তবে স্ত্রী কর্তৃক তালাক দেওয়ার ক্ষমতা শর্তযুক্ত। বিয়ের কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামে যদি স্ত্রীকে তালাকের ক্ষমতা দেওয়া হয়, তখন স্ত্রী সরাসরি স্বামীকে তালাক দিতে পারবেন।  

তালাক দিতে কখন আদালতের অনুমতি লাগবে

কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামে যখন স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার অনুমতি দেওয়া না হয়, তখন স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে তালাক দিতে আদালতের অনুমতি নিতে হবে। ১৯৮৫ সালের পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ অনুযায়ী তালাকের অনুমতি পারিবারিক আদালত থেকে নিতে হবে। আদালতের মাধ্যমে কোনো বিবাহবিচ্ছেদ মামলার ডিক্রি হলে সেই ডিক্রির কপি চেয়ারম্যানকে দিলেই ৭ ধারার নোটিশ দেওয়ার বিধান প্রতিপালিত হবে।

তালাকের ক্ষেত্রে মোহরানা

মোহরানা স্ত্রীর অধিকার। তালাক দিলেই মোহরানার অধিকার ক্ষুণ্ন হয় না। তালাকের সঙ্গে স্ত্রীকে তার মোহরানা ও ইদ্দতকালীন সময়ের ভরণ-পোষণ দিতে হবে। স্বামী মোহরানা না দিলে স্ত্রী পারিবারিক আদালতে মামলা দায়ের করতে পারবেন। তবে এরূপ মামলা তালাকের তিন বছরের মধ্যে দায়ের করা না হলে তামাদি আইন অনুযায়ী সেই অধিকার খর্ব হবে।

খোলা তালাক

মুসলিম আইনে স্ত্রীর ইচ্ছায় বিবাহবিচ্ছেদের একটি পদ্ধতি হচ্ছে খোলা তালাক। এ ধরনের তালাক স্বামী ও স্ত্রীর সম্মতিতে তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়। এক্ষেত্রে স্ত্রী স্বামীকে তালাক দেওয়ার প্রস্তাব দেবেন এবং স্বামী ওই প্রস্তাবে সম্মতি জানাবেন।  

তবে খোলা তালাকের ক্ষেত্রে অন্য কোনো চুক্তি না থাকলে স্ত্রী মোহরানা পাওয়ার অধিকারী হবেন না। তবে ইদ্দত পালনকালে স্ত্রী তার গর্ভস্থ সন্তানের জন্য স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারী হবেন।

ইসলামি শরিয়তে তালাক একটি অপছন্দনীয় বিষয়। তবে দাম্পত্য সম্পর্ক বহাল রাখা একেবারে অসম্ভব হয়ে পড়লে তালাকের ব্যবস্থা শরিয়তে রাখা হয়েছে। যথাযথ নিয়মে তালাক না দেওয়ায় অনেকে আইনি জটিলতার সম্মুখীন হন।  

যখন তালাক অনিবার্য হয়ে উঠে, তখন এ বিষয়ে অভিজ্ঞ একজন আইনজীবীর পরামর্শ নিয়েও পুরো তালাকের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে যেকোনো ধরনের আইনি জটিলতা এড়ানো সম্ভব।  

লেখক: অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০২৩

কেআই/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।