ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয় পার্টি

মান ভাঙাতে দিল্লি ছুটছেন এরশাদ!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৭
মান ভাঙাতে দিল্লি ছুটছেন এরশাদ! হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ

ঢাকা: দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সময় থেকেই দিল্লির সঙ্গে সম্পর্কে চিড় ধরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের। এরপর গত কয়েক বছরে সেই চিড় আরো বড় হয়। পরস্পরের কাছ থেকে ক্রমশ: আরো দূরে সরতে থাকে এক সময়কার কূটনৈতিক দুই মিত্র। কিন্তু এবার নাকি সেই চিড় ফের জোড়া লাগাতেই দিল্লি ছুটছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ!

বুধবার ( ১৯ জুলাই) সদলবলে ভারত যাচ্ছেন জাতীয় পার্টি প্রধান এরশাদ। এবারে তার ৫ দিনের সফরে মূলত তিনি দিল্লির মান ভাঙ্গানোর চেষ্টা চালাবেন বলেই গুঞ্জণ চলছে দলীয় পরিমণ্ডলে।

দীর্ঘ সময় ক্ষমতা আঁকড়ে থেকে স্বৈরাচারের তকমা কুড়োনো এরশাদ বরাবরই সুসম্পর্ক রক্ষা করে চলতেন দিল্লির সঙ্গে। কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে হঠাৎ করেই খানিকটা বেঁকে বসেন তিনি। ডিসেম্বরে তফসিল ঘোষণার পর হঠাৎ করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলে এরশাদের বাসায় গিয়ে দেখা করেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং।

চল্লিশ মিনিট স্থায়ী ওই রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে অনেকটা কূটনৈতিক শিষ্টাচারের বাইরে গিয়ে  বক্তব্য রাখেন এরশাদ। সেদিন তিনি বলেন, ‘তারা (ভারত) আমাকে বলেছে, আমি নির্বাচন না করলে দেশে উগ্রপন্থি-মৌলবাদিদের উত্থান হতে পারে। জবাবে আমি বলেছি, আমরাও মনে করি, এ রকম হতে পারে। আমরাও চাই না সেটা হোক, কিন্তু সরকারই এ পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। এর দায় সরকারকেই নিতে হবে’।

এরশাদের সেই বক্তব্যের পর অনেকেই নড়েচড়ে বসেন। দলের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তারা বলেন, প্রেসের সামনে এভাবে কথা বলা ঠিক হলো না। এটা কোনো কূটনৈতিক শিষ্ঠাচারের মধ্যে পড়ে না। এ জন্য অনেক মাসুল দিতে হতে পারে।

সে ঘটনা স্মরণ করে বর্তমানে সিনিয়র অনেক নেতার বক্তব্য, সত্যি সত্যি এরশাদকে অনেক মাসুল দিতে হয়েছে, হচ্ছে। কোনোভাবেই এরশাদকে আস্থায় নিচ্ছে না বাংলাদেশের এই বৃহৎ প্রতিবেশী দেশটি। যে কারণে গত কয়েক বছরে ভারত গিয়ে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি তিনি। বরং তার সহধর্মিনী সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদকে দিল্লির বেশী পছন্দ বলে আভাস পাওয়া গেছে।

তবে এবার যে এরশাদ কিছু একটা মিশন নিয়েই ভারত যাচ্ছেন তার আভাস খোদ তার বহরেই রয়েছে। আসন্ন সফরকে ব্যক্তিগত বলে উল্লেখ করে সূচিতে শুধু আজমির শরিফ জিয়ারতের কথা বলা হলেও এরশাদের সফরসঙ্গী হচ্ছেন মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং এরশাদের প্রেস ও পলিটিক্যাল সেক্রেটারি সুনীল শুভরায় আর প্রেসিডিয়াম সদস্য মেজর (অব.) খালেদ আখতার।  

অভিজ্ঞদের ধারণা, এরশাদের জন্মস্থান কুচবিহার। তিনি মাঝে-মধ্যেই সেখানে যান। আর যাওয়ার সময় সফরসঙ্গী খুবই কম থাকে। কিন্তু এবারের সফরে যুক্ত করা হয়েছে পার্টির গুরুত্বপূর্ণ তিন নীতি নির্ধারককে।

বিশেষ করে সুনীল শুভরায়কে যুক্ত করায় গুঞ্জন বেশ জোরেসোরেই হচ্ছে। কারণ সুনীল শুভরায় জাতীয় পার্টির ভারতীয় লবি মেইনটেইন করেন বলে চাউর আছে।

সর্বশেষ, গত এপ্রিল মাসে ভারতের কুচবিহার সফর করেন এরশাদ। তার আগে ২০১৬ সালের ১৮ জুন চারদিনের সফরে দিল্লি ভ্রমণ করেন তিনি। ওই সফরকেও ব্যক্তিগত বলা হলেও রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব, লোকসভার ডেপুটি স্পিকার, কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধী, সাবেক সেনাপ্রধান ও বিবেকানন্দ ফাউন্ডেশনের পরিচালক জেনারেল (অব.) নির্মল চন্দ্র ভিজ, রাজ্যসভার ভাইস চেয়ারম্যানসহ আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি।

সুনীল শুভরায় বাংলানিউজকে জানান, সফর একান্তই ব্যক্তিগত। তবে কেউ যদি দেখা করতে আসেন, দেখা হলেও হতে পারে।

ভারতের সঙ্গে জাতীয় পার্টির সম্পর্ক অনেক চমৎকার রয়েছে বলেও দাবি করেন সুনীল শুভ রায়ের।

বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, জুলাই ১৮. ২০১৭
এসআই/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।