ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয় পার্টি

প্রথম সাবজেক্টেই ফেল করেছে জাতীয় পার্টি

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৬
প্রথম সাবজেক্টেই ফেল করেছে জাতীয় পার্টি

ঢাকা: টেস্ট পরীক্ষায় প্রথম সাবজেক্টে ফেল করেছে জাতীয় পার্টি। বাঁকি পাঁচ সাবজেক্টেও ফেল করার আশঙ্কাই বেশি।


 
প্রথম দফায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর এমন আলোচনা তুঙ্গে নেতাকর্মীদের মধ্যে। আর এই আলোচনা সূত্র কর্মীদের হাতে তুলে দিয়েছেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের নিজেই।
 
ইউনিয়ন পরিষদের তফসিল ঘোষণার পর জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি সম্মেলনে জিএম কাদের বলেছিলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হচ্ছে জাতীয় পার্টির জন্য টেস্ট পরীক্ষা। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে আমরা সাধারণ নির্বাচন হিসেবে দেখতে চাই না। পার্টির অবস্থান কি, সামনে কীভাবে আমরা কাজ করব, তার পরীক্ষা হবে এ নির্বাচনে।
 
জিএম কাদের বলেছিলেন, আমরা যদি এই নির্বাচনে ভালো ফল করি। তাহলে মানুষ আমাদের সেভাবে মূল্যায়ন করবে। যা আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য দলের ভাবমূর্তি উজ্জল করবে। এই টেস্টের মাধ্যমে প্রমাণ হবে- সংসদ নির্বাচনের জন্য কতটা প্রস্তুত জাতীয় পার্টি।

জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের ভেদাভেদ ‍ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন জিএম কাদের।
 
সেই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রথম বিষয়ে (প্রথম ধাপের) ৭১১ নম্বরের (৭১১ ইউনিয়ন পরিষদ) মধ্যে মাত্র ৪ নম্বর পেয়েছে জাতীয় পার্টি। কেউ কেউ আবার হাস্যরস করে বলেছেন, জাতীয় পার্টি এখন অনিয়মিত ছাত্র। পরীক্ষাতে হাজিরই হয়নি। তার রেজাল্ট খুঁজবে কি করে। তাদের এই কথার যুক্তি হচ্ছে, প্রথম ধাপের ৭১১ ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে মাত্র ১২৭টিতে প্রার্থী দিয়েছিল। প্রার্থীই দিতে পারেনি তারা, ফল খুঁজবে কি করে।
 
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, প্রথম ধাপের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা মোট ৫৫ হাজার ভোট পেয়েছেন- যা প্রদত্ত ভোটের এক শতাংশেরও কম।

দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন নেতাকর্মীরা। ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ৬৪৩ ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র ১৫৬টিতে প্রার্থী দিতে সক্ষম হয়েছে দলটি। এখানেও পাস নম্বর দিচ্ছেন না কেউই।
 
ইউনিয়ন পরিষদের এই ফলাফলকে জাতীয় পার্টির জন্য রেড ‍অ্যালার্ট হিসেবে দেখছেন অনেকে। তারা বলছেন- জাতীয় পার্টি জেপির (আনোয়ার হোসেন মঞ্জু) চেয়েও কম ভোট পেয়েছে এরশাদের জাপা। মঞ্জুর জেপি প্রদত্ত ভোটের দশমিক ৯৭ শতাংশ পেয়েছে। আর এরশাদের জাপা পেয়েছে মাত্র দশমিক ৮৯ শতাংশ। ভোটের সমীকরণে এরশাদের জাপার চেয়ে মঞ্জুর জেপি এখন বড় দল।
 
আবার ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র সঙ্গে তুলনা করলে আরো বেহাল দশা এরশাদের জাপার। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীরা প্রথম দফার নির্বাচনে ২ দশমিক ৩৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।
 
ভোটের এই অনুপাত প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বাংলানিউজকে বলেন, এই হিসেব বলে দেয় ভোট সঠিক হয়নি। পাতানো নির্বাচন হয়েছে। রাস্তায় কান পাতলে বুঝতে পারবেন মানুষ কি চায়। তাই এই ফলাফল দিয়ে কোন দলের জনপ্রিয়তা মূল্যায়ন করা ঠিক হবে না।
 
জাতীয় পার্টির বিপর্যয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের প্রার্থীদের সঠিকভাবে প্রচারণা চালাতে দেওয়া হয়নি। ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে।
 
‌জিএম কাদের বলেন, পেশীশক্তি ও টাকা দিয়ে ভোটকে প্রভাবিত করা হয়েছে। অনেক এলাকায় ভোট কেন্দ্র দখল করে সিল মারা হয়েছে। এই ভোটে জনমতের প্রতিফলন হয়নি।
 
তিনি বলেন, তবুও আমরা শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকতে চাই।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে জাতীয় পার্টির টেস্ট পরীক্ষা মন্তব্য করেছিলেন। এখন ফলাফলের পর আপনার মূল্যায়ন কি? জবাবে জিএম কাদের বলেন, আমি টেস্ট পরীক্ষা বলেছি এ কথা সত্য। এখান থেকে মূল্যায়ন করে আগামীর কর্মপন্থা নির্ধারণ করব। পাস ফেল মূল্যায়ন করার বিষয় নয়।
 
জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বাংলানিউজ বলেন, দলীয় ফোরামে আলোচনা ছাড়া কোন মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। আর আমি এখনও (২৩ মার্চ সন্ধ্যায়) পুরোপুরি ফলাফল জানিও না। কেউ বলছে ৮টিতে বিজয়ী হয়েছি। কেউ বলছে ৪টিতে।
 
টেস্ট পরীক্ষার রেজাল্ট নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কি? জবাবে জাপা মহাসচিব বলেন, এই মূল্যায়ন তো সরকারের হাতে। আমি কোন মন্তব্য করতে চাই না। দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সাংবাদিকদের জানানো হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৬
এসআই/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।