ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

পর্ব- ০২

বাংলাদেশের ঐতিহাসিক মসজিদের শহর বাগেরহাট

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১, ২০১৯
বাংলাদেশের ঐতিহাসিক মসজিদের শহর বাগেরহাট বাগেরহাটের ৯ গম্বুজ মসজিদের দৃশ্য। ছবি: বাংলানিউজ

বাগেরহাট: ১৯৮৫ সালে বাগেরহাটকে ঐতিহাসিক মসজিদের শহর হিসেবে ঘোষণা করে ৩২১ তম বিশ্ব-ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করে ইউনেস্কো। এর মধ্যে বাগেরহাটের ১৭টি স্থাপনাকে তালিকাভুক্ত করা হয়, যার ১০টিই মসজিদ। মসজিদগুলো হল বিশ্ব-ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ, বিবি বেগুনি মসজিদ, চুনাখোলা মসজিদ, নয় গম্বুজ মসজিদ, জিন্দা পীরের মসজিদ, দশ গম্বুজ মসজিদ, রন বিজয়পুর মসজিদ, রেজা খোদা মসজিদ, সিংগাইর মসজিদ ও এক গম্বুজ মসজিদ।

মসজিদগুলো বাগেরহাট শহরের আশপাশ জুড়ে রয়েছে। এছাড়াও খানজাহান আলী (রহ.)-এর কবর, পীর আলী তাহেরের কবর, জিন্দা পীরের কবর, সাবেক ডাঙ্গা প্রার্থনা কক্ষ, খানজাহান আলী (রহ)-এর বসতভিটা, বড় আদিনা ডিবি, খানজাহানের তৈরি প্রাচীন রাস্তাকেও বিশ্ব-ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করা হয়।

চুনাখোলা মসজিদ
ষাটগুম্বুজ মসজিদ থেকে প্রায় এক কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে এবং বিবি বেগুনি মসজিদের উত্তরে বাগেরহাট সদর উপজেলার ষাটগুম্বুজ ইউনিয়নের চুনোখোলা গ্রামে মাঠের মধ্যে এ মসজিদটির অবস্থান। ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদসহ তৎকালীন ‘খলিফতাবাদ’ নগর রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা ‘খান-উল-আযম উলুঘ খান-ই-জাহান’ নির্মিত প্রাচীন নগরীর অংশ হিসেবে এই মসজিদটিকে ‘বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। এর আগে ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ সরকার চুনাখোলা মসজিদকে ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে এবং প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতায় সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়।

চুনাখোলা মসজিদ।  ছবি: বাংলানিউজএক গম্বুজ বিশিষ্ট র্বগাকৃতির মসজিদটির বাইরের অংশ দৈর্ঘ্যে লম্বায় প্রায় ৪০ ফুট এবং প্রস্থে ২৫ ফুট। পূর্বদিকে ১টি বড় (প্রধান) দরজাসহ মোট ৩টি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিকে ১টি করে মোট ২টি দরজা রয়েছে। পূর্বদিকের বড় দরজাটির উচ্চতা ৯ফিট, প্রস্থ ৪ফিট ৪ইঞ্চি এবং ছোট ২টি দরজার উচ্চতা ৭ফিট এবং প্রস্থ ৩ফিট। উত্তর-দক্ষিণ দিকের দরজা ২টির উচ্চতা ৯ফিটের বেশি এবং প্রস্থ ৫ফিট করে।

চুনাখোলা মসজিদ।  ছবি: বাংলানিউজমসজিদের মধ্যে ১টি কেন্দ্রিয় মেহরাব ও ২টি ছোট মেহরাব রয়েছে। বড়টির উচ্চতা ৭ফিট ও প্রস্থ ৪ফিট। ছোট মেহরাব ২টির উচ্চতা ৪ফিট প্রায় এবং প্রস্থ ৩ফিট। মসজিদের দেওয়ালের পুরুত্ব ৭ফুট ৮ইঞ্চি এবং বাইরের চার কোণের চারটি খান জাহানি-রীতি অনুযায়ী গোলাকার ইটের খাম্বা বা পিলার রয়েছে।  মসজিদে স্থানীয়রা নিয়মিত নামাজ আদায় করে। লোকালয় থেকে মসজিদে যাওয়ার জন্য একটি ইটের সড়ক করা হয়েছে।

নয় গম্বুজ মসজিদ
ঠাকুর দিঘী বা খাঞ্জেলী দিঘীর পশ্চিম পাড়ে ১৬.৪৫ মি. থেকে ১৬.১৫ মি. ভূমি পরিকল্পনায় নির্মিত নয়গম্বুজ মসজিদটি অবস্থিত। এর দেয়ালগুলো ২.৫৯ মি. পুরো। মসজিদের ছাদ ৯টি নিচু অর্ধবৃত্তাকার গম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত। পূর্ব, উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে তিনটি করে প্রবেশ পথ এবং পশ্চিম দেয়ালে পোড়া-মাটির ফুল ও লতা পাতায় অলংকৃত তিনটি মেহরাব রয়েছে।

নয় গম্বুজ মসজিদ।  ছবি: বাংলানিউজঅন্যান্য মসজিদের মত এ মসজিদের কেন্দ্রীয় মেহরাবটিও অপেক্ষাকৃত বড়। মসজিদের কার্নিশ সামান্য বক্র। মসজিদের ভেতরের একটি পিলারে বড় আকারের তেলতেলে গর্ত রয়েছে। জনশ্রুতি রয়েছে কোন এক পীর আঙ্গুলের খোছায় ওই গর্ত করেছিলেন। মসজিদের কার্নিশ সামান্য বক্র। এ মসজিদে এখনও নিয়মিত নামাজ পড়েন স্থানীয়রা।

জিন্দা পীরের মসজিদ
বর্গাকারে নির্মিত এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি ষাটগম্বুজ মসজিদ থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার সুন্দরঘোনা গ্রামে অবস্থিত। জিন্দাপীর মাজার কমপেস্নক্সের উত্তর-পশ্চিম কোনে মধ্যযুগীয় এই মসজিদটি অবসিহত। মসজিদটি বর্গাকার ভূমি পরিকল্পনায় (৬মিঃ-৬মিঃ) নির্মিত এটি একগম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ।

জিন্দা পীরের মসজিদ।  ছবি: বাংলানিউজএই মসজিদের চারপাশের চারটি গোলাকার বুরুজ রয়েছে। মসজিদের দেয়ালগুলো গড়ে ১.৫২মিঃ পুরু। পূর্ব বাহুতে ৩টি, উত্তর ও দক্ষিণ বাহুতে একটি করে খিলান দরজা আছে। সামনের বাহুতে আছে তিনটি মিহরাব। ছাদের অর্ধগোলাকার গম্বুজটি ভাঙ্গা অবসহায় ছিল। ২০০২ সালে এটিকে প্রতনতাত্তিক সংস্কারের মাধ্যমে পূর্ন অবয়ব প্রদান করা হয়েছে।

জিন্দা পীরের মসজিদ।  ছবি: বাংলানিউজদশ গম্বুজ মসজিদ
ষাটগম্বুজ মসজিদ থেকে পূর্বে রনবিজয়পুর গ্রামে অবস্থিত এ মসজিদটিতে দশটি গম্বজুজ রয়েছে। খানজাহান আমলের মসজিদ বলে জনশ্রুতি থাকলেও ইতিহাসবিদরা এটিকে খানজাহান পরবর্তী হোসেন শাহ-ই আমলের মসজিদ বলে উল্লেখ করেছেন। ৫০.৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৮.১০ ফুট প্রস্থ মসজিদটিতে এখন আর আগের অবয়ব নেই। সংস্কার ও সম্প্রসারণের ফলে মসজিদটি তার নিজস্ব স্বকীয়তা হারিয়েছে।

দশ গম্বুজ মসজিদ।  ছবি: বাংলানিউজমসজিদের সামনে একটি বারান্দা ও উত্তর পাশে কবর স্থান রয়েছে। সড়ক থেকে মসিজিদে ঢোকার জন্য একটি সু-সজ্জিত গেট করা হয়েছে। মূল মসজিদের পূর্ব, উত্তর ও দক্ষিন পাশে দু’টি করে প্রবেশদ্বার রয়েছে। দক্ষিন-পম্চিম কোনে ছাদে ওঠার জন্য একটি সিঁড়ি রয়েছে। এ মসজিদে বর্তমানে স্থানীয় লোকজন নামাজ আদায় করেন। মসজিদের বিপরীত দিকে মসজিদের নামে একটি হাফেজিয়া মাদরাসা রয়েছে।

দশ গম্বুজ মসজিদ।  ছবি: বাংলানিউজরন বিজয়পুর মসজিদ
ষাটগম্বুজ মসজিদের দেড় কিলোমিটার পূর্ব দিকে রণবিজয়পুর গ্রামে এক গম্বুজ বিশিষ্ট বর্গাকার (১৮.৪৯/১৮.৪৯মি.) মসজিদটি অবস্থিত। মসজিদটি বাংলাদেশে প্রাচীন আমলে নির্মিত এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদের মধ্যে সর্ববৃহত। মসজিদের পূর্ব, উত্তর ও দক্ষিন দেয়ালে তিনটি করে প্রবেশ পথ এবং পশ্চিম দেয়ালে তিনটি মেহরাব রয়েছে। মসজিদটিতে স্থানীয় লোকজন নামাজ আদায় করে এখনও।

রন বিজয়পুর মসজিদ।  ছবি: বাংলানিউজরেজা খোদা মসজিদ
বাগেরহাট শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার ও ষাটগম্বুজ থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে সুন্দরঘোনা গ্রামে অবস্থিত ঐতিহাসিক রেজাখোদা মসজিদ। বর্তমানে মসজিদটির ধ্বংসাবশেষ বিদ্যমান। ধারণা করা হয়, এটি ছয় গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ ছিল। বর্তমানে শুধু দেয়ালের কিছু কিছু অংশ ও খিলানযুক্ত মিহরাবের অংশ বিশেষ টিকে আছে। প্রায় অর্ধশত বছর আগে স্থানীয় লোকজন মসজিদের ওই জায়গায় নতুন করে একটি টিনসেড মসজিদ নির্মান করে। সেখানে এখন নামাজ আদায় করে স্থানীরা।

রেজা খোদা মসজিদ।  ছবি: বাংলানিউজএক গম্বুজ মসজিদ
খান-জাহান-আলী (রহ.) এর মাজারের পশ্চিম পাশে এবং ঠাকুর দিঘির পূর্ব পাড়েই এ মসজিদটি অবস্থিত। সংস্কার ও সম্প্রসারনের ফলে একগম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদের মূল অবয়ব এখন বোঝা যায় না। এখানে মসজিদের খাদেম ও দিঘির আশপাশের লোকজন নামাজ পড়ে। খানজাহানের ভক্তবৃন্দ মাজার জিয়ারতের পরে এখানে নামাজ আদায় করেন।

এক গম্বুজ মসজিদ।  ছবি: বাংলানিউজ

ইসলাম বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১০১৩, আগস্ট ০১, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।