ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

পৃথিবীকে যারা নরকে পরিণত করছে তাদের সুমতি হোক

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৬
পৃথিবীকে যারা নরকে পরিণত করছে তাদের সুমতি হোক ছবি: সংগৃহীত

জাহান্নাম আরবি শব্দ। বাংলায় এটাকে বলা হয় নরক। কোরআনে কারিমে নরকের বর্ণনায় অনেক নাম এসেছে। সেখানে নরকের ধারণা দিতে জ্বলন্ত আগুন, চূর্ণবিচূর্ণকারী আগুন, আগুনের অতল গহ্বর, উজ্জ্বল অগ্নিকাণ্ড ইত্যাদি সমার্থবোধক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।

জাহান্নাম আরবি শব্দ। বাংলায় এটাকে বলা হয় নরক।

কোরআনে কারিমে নরকের বর্ণনায় অনেক নাম এসেছে। সেখানে নরকের ধারণা দিতে জ্বলন্ত আগুন, চূর্ণবিচূর্ণকারী আগুন, আগুনের অতল গহ্বর, উজ্জ্বল অগ্নিকাণ্ড ইত্যাদি সমার্থবোধক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।

আমরা প্রায়ই নরক, জাহান্নাম, দোজখ নিয়ে কথা বলি। মুসলমান হিসেবে বিশ্বাস করি, পৃথিবীতে যারা খারাপ কাজ করবে তারা নরকে যাবে। নরক খুব কষ্টের জায়গা। মানুষ খুব কষ্টের মাঝে থাকলে বলে- নরকে বাস করছি, পারলে আমায় বাঁচাও।  

বর্তমানে আমরা নরকসম পৃথিবীতে বাস করছি। যেখানে ন্যায়ের শাসন নেই, তবে কথামালার শাসন আছে। অন্যায়-অবিচার, জুলুম-নিপীড়নে সাধারণ মানুষের জীবনে নেমে এসেছে বিপর্যয়। এসব যারা সৃষ্টি করছেন, তারাই আবার শান্তির জপমালা আউড়ে পৃথিবী চষে বেড়াচ্ছেন!

পৃথিবীটা এখন যেন বিশ্বনেতাদের রঙ্গমঞ্চে পরিণত হয়েছে। ফলে বর্তমান সভ্যতা শঠতা, প্রতারণা, নিষ্ঠুরতা ও নীতিহীনতার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। মানবতাবিরোধী এমন সভ্যতায় সাধারণ ও নীতিবান মানুষের জীবনযাপন যে যাতনাক্লিষ্ট হয়ে উঠবে তা সহজেই উপলব্ধি করা যায়।

বর্তমান সময়ে বিশ্ববাসীর মধ্যে যারা সবচেয়ে কষ্টকর ও বিপর্যয়ের মধ্যে জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন তাদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় মিয়ানমার ও ফিলিস্তিনের মুসলমানদের কথা।

মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের বর্তমান অবস্থাকে নরকের সঙ্গে তুলনা করেছেন আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম। তিনি লন্ডন থেকে বিবিসিকে মিয়ানমারের অবস্থা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে এ মন্তব্য করেন।  

আমরা জানি, মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলিমরা নির্যাতিত হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। তাদের মৌলিক অধিকার নাগরিকত্ব অস্বীকার করাসহ বিবাহ, নামাজ এবং শিক্ষা অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। নানা সময়ে মিয়ানমারের কট্টরপন্থী বৌদ্ধরা হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে নিজেদের ঘর-বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে আসছে। বাঁচার আশায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন দেশে তারা আশ্রয় নিয়েছে। এ চিত্র বেশ পুরনো।  

এখন নতুন করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী বিদ্রোহ দমনের নামে গণহত্যা ও জাতিগত নির্মূল অভিযান চালাচ্ছে। হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে তাদের গ্রাম থেকে তাড়ানোর অভিযান শুরু করেছে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির সরকার ও সেনাবাহিনী।

সশস্ত্র আক্রমণকারীদের হাতে নয়জন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হওয়ার পর প্রতিক্রিয়া হিসেবে সেনাবাহিনী গত ৯ অক্টোবর থেকে এই অভিযান শুরু করে।  

ওই আক্রমণকারী কারা ছিল সেটি স্পষ্ট নয়, তবে কেউ মনে করছেন মাদক পাচারকারী চক্র অথবা মুসলিম উগ্রবাদীদের কাজ ছিল এটি। ওই ঘটনার পর সেনাবাহিনী একশ’র বেশি বেসামরিক লোক হত্যা করেছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের উপগ্রহ চিত্রে দেখা যায়, ২২ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন মুসলিম গ্রামে কমপক্ষে ৮০০টি বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ সময় সেখানে সৈন্যরা লুটপাট, নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা এবং নারী ধর্ষণ করেছে বলে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে মিয়ানমার সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

এক বছর আগে ঐতিহাসিক এক নির্বাচনের মাধ্যমে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অং সান সুচির নেতৃত্বে দেশটিতে নতুন গণতন্ত্রের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। অনেকেই আশা করেছিলেন, এর মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগের অবসান ঘটবে; কিন্তু হচ্ছে উল্টোটা। এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিরব রয়েছে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী সুচি।


সব ধরনের সংগঠন ওই এলাকায় মানবিক সহায়তা বন্ধ রেখেছে। ইউনিসেফ সতর্ক করে বলেছে, হাজার হাজার শিশু অনাহার-অপুষ্টিতে ভুগছে, প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না। জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সংঘর্ষকবলিত এলাকায় নিরপেক্ষ তদন্ত করার দাবি করেছে।  

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, মিয়ানমার সরকারকে অবশ্যই জাতিসংঘের কাছে সহায়তা চাইতে হবে। আর সুচি যদি মানবাধিকার রক্ষক হিসেবে তার সুখ্যাতি ধরে রাখতে চান, তাহলে তাকে অবশ্যই এই সাহায্যের জন্য আমন্ত্রণ জানাতে হবে। কিন্তু তিনি মুখ বন্ধ রাখায় কিছুই বলা যাচ্ছে না। ফলে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের দুর্বিসহ পরিস্থিতি কেবল বাড়ছেই।  

ইসরাইল আরেক দুর্বিসহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে ফিলিস্তিনে। ঘর-বাড়ি হারিয়ে মুসলমানদের ফিলিস্তিনে এখন মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। ইসরাইলের কারাগারে শত শত বন্দির সঙ্গে শত শত ফিলিস্তিনি শিশুকে আটকে রাখা হয়েছে। আটক ফিলিস্তিনিদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় অভুক্ত রাখা, নির্যাতন ও গালাগাল করা ইসরাইলি সেনাদের স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে।  

উপরোক্ত দুই দেশের মুসলমানদের দুর্দশা দেখে প্রশ্ন জাগে, মিয়ানমার ও ইসরাইল সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন করে যেভাবে জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে, মানুষ হত্যা করছে, তা দেখার মতো কেউ কি পৃথিবীতে নেই? মানবতার জয়গান করার মতো কোনো শিল্পী নেই? শান্তির সুর তোলা কোনো গায়ক নেই?

অথচ পৃথিবীতে কত আন্তর্জাতিক সংস্থা রয়েছে, তারা মানবাধিকার রক্ষার কথাও বলে থাকেন! বিভিন্ন সময়ে তারা উচ্চকিত হন, কিন্তু মুসলমানদের বিষয়ে তারা নিরব কেন? তাহলে কী বলব, নাটকের পাণ্ডুলিপিটা কি এভাবেই লেখা হয়েছে যে, এই পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চে মুসলমানদের মানবাধিকার বলতে কিছু নেই বা থাকতে পারে না! তারা শুধু মার খাবে, তাদের রক্তের কোনো মূল্য নেই? নাকি মুসলমানদের রক্ত অন্য রঙের?

এর উত্তর কেউ দেবে কি-না তাও জানি না, তাই পরম আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে আল্লাহর দরবারেই বলছি, আমাদের শান্তিময় পৃথিবীকে যারা নরকে পরিণত করছে- তাদের সুমতি কামনা করছি।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।