ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

কাফন-দাফনে বিলম্ব ও লাশ স্থানান্তর প্রসঙ্গে ইসলামের বিধান

মাওলানা আবদুল জাব্বার, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৬
কাফন-দাফনে বিলম্ব ও লাশ স্থানান্তর প্রসঙ্গে ইসলামের বিধান

মৃত ব্যক্তি যে স্থান বা এলাকায়া মারা গেছে, সেখান থেকে অন্যত্র নিয়ে দাফন করা প্রসঙ্গে ইসলামি শরিয়তের নির্দেশনা হলো, মৃত ব্যক্তি যে এলাকায় মারা যাবে; তাকে সেখানের কবরস্থানে বা নিকটের কোনো কবরস্থানে দাফন করে দিবে। এটাই  ইসলামি শরিয়তের নির্দেশ।



এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত জাবের রাযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, উহুদ যুদ্ধের দিন আমার ফুফু আমার পিতাকে দাফন করার জন্য নিজেদের কবরস্থানে নিয়ে আসেন। তখন হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে এক ঘোষণাকারী ঘোষণা করলেন, তোমরা শহীদদেরকে যুদ্ধক্ষেত্রে ফেরত নিয়ে আস। -জামে তিরমিজি : ১৭১৭

অন্য আরেক বর্ণনায় এসেছে, হজরত আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু হুবশি নামক স্থানে ইন্তেকাল করেন, তাকে ওই স্থান হতে মক্কায় এনে দাফন করা হয়। হজরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা হজ বা উমরা করতে মক্কায় গমন করলে তিনি তার কবরের নিকট আসেন অতপর বলেন, আমি তোমার মৃত্যুর সময় উপস্থিত থাকলে তোমাকে সে স্থানেই দাফন করতাম যেখানে তোমার মৃত্যু হয়েছে। -মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা : ১১৯৩৩

উপরোক্ত দলিলের আলোকে ইসলামি স্কলাররা বলেছেন, কোনো ব্যক্তি যে এলাকায় মারা যাবে তাকে ওই এলাকার কবরস্থানে বা নিকটবর্তী কোনো কবরস্থানে দাফন করে দেওয়া উত্তম। কোনো সমস্যা ছাড়া দূরবর্তী এলাকায় নিয়ে দাফন করা ঠিক না।

তাই শহর বা গ্রামের মৃতকে নিজ নিজ এলাকার কবরস্থানে দাফন করে দেওয়াই বাঞ্ছনীয়। সাধারণ অবস্থায় শহরের মৃতকে গ্রামে নিয়ে বা গ্রামের মৃতকে শহরে এনে দাফন করা ঠিক নয়। বরং এ ধরনের পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকতে হবে। অবশ্য কোনো সমস্যার মৃত ব্যক্তিকে অন্যত্র নিয়ে দাফন করাও জায়েয আছে।

যেমন- মৃত ব্যক্তি যে এলাকায় মারা গেছে সেখানে বা নিকটের কোথাও কবরস্থান বা দাফনের সুব্যবস্থা না থাকা।

এলাকার কবরস্থানে স্বাভাবিক সময় পর্যন্ত লাশ সংরক্ষিত না থাকার আশঙ্কা থাকা।

কোনো ব্যক্তির এমন স্থানে মৃত্যু হলো- যেখানে গিয়ে আত্মীয়-স্বজনের জন্য দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করা কষ্টকর।

এ ধরনের সমস্যার কারণে দাফনের পূর্বে লাশ অন্যত্র নিয়ে কবরস্থ করা জায়েয আছে।

কোনো কোনো সাহাবিকে মৃত্যুর স্থান থেকে অন্যত্র নিয়ে দাফন করার বিষয়টিও প্রমাণিত আছে। -আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ৫/৫৭৪

তবে বর্ণিত সমস্যাগুলোর ক্ষেত্রে লাশ স্থানান্তর করার সময় নিম্নোক্ত বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা কর্তব্য। সেগুলো হলো-

স্থানান্তর ও দাফনকার্য ইত্যাদি দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা।

লাশ স্থানান্তরকে কেন্দ্র করে যেন একাধিক জানাজা না হয়- সেদিকে লক্ষ্য রাখা। যেমনটি প্রায়ই হতে দেখা যায়। কেননা মৃত ব্যক্তির একাধিক জানাজা পড়ার বিধান ইসলামি শরিয়তে নেই।

স্থানান্তরের কারণে এমন বিলম্ব হতে পারবে না, যার কারণে লাশে পরিবর্তন আসে বা বিকৃত হওয়ার আশঙ্কা হয়। এমন আশঙ্কা হলে স্থানান্তর জায়েজ হবে না।

বর্ণিত মূলনীতির অালোকে ইসলামি স্কলাররা আরও বলেছেন, প্রবাসে কোনো ব্যক্তি মারা গেলে তাকে সেখানেই মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন করে দেওয়া কর্তব্য। কেননা, প্রবাস থেকে লাশ দেশে আনার ক্ষেত্রে অকারণেই তার দাফনে বিলম্বিত হয়।

আরেকটি কথা, মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর সেই লাশকে অন্য কবরে স্থানান্তর করা নাজায়েজ। অবশ্য অন্যের জমিন জবর-দখল করে দাফন করে থাকলে এবং সেই জমিনের মালিক আপত্তি জানালে কবর স্থানান্তর করা জায়েয আছে।



বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৬
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।