ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

ইবলিসের বিষাক্ত তীর সম্পর্কে জানুন

মোশারেফ হোসেন পাটওয়ারী, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০১৫
ইবলিসের বিষাক্ত তীর সম্পর্কে জানুন

মানুষের মূল্যবান চোখ আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিনের শ্রেষ্ঠ উপহার। চোখের রঙিন দৃষ্টিতে দুনিয়ার সব কিছুর প্রকৃত রূপ-রং ধরা পড়ে।

এ চোখের দৃষ্টিতে আমরা সুন্দর-কুৎসিত, ভালো-মন্দ, উত্থান-পতন, নগ্নতা-বর্বরতা প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী কত কি দেখি। আবার এ চোখের দৃষ্টি দিয়েই কোরআন-কিতাব পড়ি। মানুষের পঞ্চইন্দ্রিয়ের মধ্যে চোখ অন্যতম। অন্তঃকরণকে ভেতরে ও বাইরে সঠিক পথ দেখায় চোখের দৃষ্টি। চোখ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘চোখের বক্র ইশারা (অপব্যবহার) ও অন্তরে যা গোপন আছে সে সম্পর্কে তিনি অবহিত। -সূরা আল মুমিন: ১৯

চোখের দৃষ্টিকে সঠিকভাবে পরিচালনা না করলে মানুষের অন্তর নোংরা হয়ে যায়। কলব ধ্বংস হয়ে যায়। মানুষ পশুর চেয়ে নিম্নস্তরে অবস্থান করে। বিবেকহীন হয়, নানারকম অপরাধে লিপ্ত হয়ে পড়ে। মানসিক অশান্তি বেড়ে যায়, নানা বিপদে-আপদে পতিত হয়। কোনো ইবাদত-বন্দেগি সহিহ হয় না। এ বিষয়ে হাদিসে-কুদসিতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘দৃষ্টি হচ্ছে ইবলিসের বিষাক্ত তীরগুলোর মধ্যে থেকে একটি তীর। যে ব্যক্তি আমাকে ভয় করে তা ত্যাগ করবে। আমি তার বদলে তাকে এমন ঈমান দান করব, যার মিষ্টি স্বাদ সে নিজের হৃদয়ে অনুভব করবে। ’ -তাবারানি

তাউ চোখের সর্বোত্তম ব্যবহার সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া প্রতিটি মুসলমানের জরুরি কর্তব্য। কারণ দৃষ্টির সুন্দরতম ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষ যেমন জান্নাতের দরজায় পৌঁছে যায়, তেমনি এর অপব্যবহারের মাধ্যমে জাহান্নামের কিনারায় গিয়ে হাজির হয়।

মূলত চোখের দৃষ্টিই মনের দৃষ্টি। তাই চোখকে মনের আয়না বলা হয়। মানুষ তার মনে যেসব ছবি বা কল্পনা ধারণ করে তার সূত্রপাত তো চোখের দেখার মাধ্যমেই অর্জিত হয়। তাই অবৈধ দৃষ্টিপাত থেকে বিরত থাকতে কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা প্রত্যেক পুরুষ ও নারীকে ‘গাদ্দুল বাসার’ অর্থাৎ চোখের দৃষ্টি নামিয়ে রাখার আদেশ দিয়েছেন।

আমাদের এ জীবন ক্ষণিকের, একদিন স্বপ্নের ন্যায় ফুরিয়ে যাবে এবং চিরতরে হারিয়ে যাবে এ দৃষ্টিশক্তি। তাই ‘সময় থাকতে কাঁদতে হবে; আয়ু হচ্ছে ক্ষয়। কাঁদলে কলব সাফ হয়, কাঁদলে গোনাহ মাফ হয়। ’ সর্বাবস্থায় আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা আল্লাহপাকের সদাজাগ্রত দৃষ্টির সম্মুখে রয়েছি, তাহলে দুনিয়ার অসংখ্য পাপ ও বিপদ থেকে আমরা রক্ষা পাব।

ইমাম গাজ্জালি (রহ.) বলেছেন, ‘যে পর্যন্ত তুমি নিজের চোখকে হারাম বস্তুর প্রতি দৃষ্টিপাত থেকে বিরত রাখতে না পারবে, সে পর্যন্ত নিজেকে পাপ থেকে আত্মরক্ষা করতে পারবে না। ’

তাই আসুন, শয়তানি ও কুপ্রবৃত্তিজনিত অশ্লীল চাহনি থেকে নিজেদের দৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণ করে আমরা ঈমানি বলে বলীয়ান ও উন্নত দৃষ্টির অধিকারী হই। আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি সুদৃষ্টি দিয়ে মর্মে মর্মে অনুধাবন করি। চোখের দৃষ্টিতে ও মনের দৃষ্টিতে একাকার হয়ে বেশি বেশি ইবাদত করি। প্রাণভরে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। এ বিষয়ে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি তোমাদের দিয়েছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি এবং অন্তঃকরণ, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। ’ -সূরা নাহল: ৭৮

হজরত আলী (রা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার চোখের ওপর জয়ী হতে পারে না তার অন্তঃকরণের কোনো মূল্য নেই। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৩২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।