ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

রোজার শিক্ষা ছড়িয়ে পড়ুক সবার মাঝে

মুহাম্মদ আবদুল ওয়াহিদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৫
রোজার শিক্ষা ছড়িয়ে পড়ুক সবার মাঝে

রোজার মাধ্যমে বান্দা আত্মশুদ্ধি অর্জন করে। এক মাস রোজা রেখে বাকি এগারো মাস নিজেকে পাপমুক্ত রাখার সংকল্প গ্রহণ করেন মুসলমানরা।

রোজা মানুষকে গরিব-দুঃখীর কষ্ট অনুধাবনে সহায়তা করে। একজন রোজাদার যখন সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাদ্য ও পানীয় থেকে বিরত থাকেন, তখন তিনি বাস্তবিকই অনুভব করেন অনাহারে থাকা গরিব মানুষের জীবন যন্ত্রণা। তাই একজন রোজাদার রোজার মাধ্যমে সহমর্মিতা ও সহনশীলতার শিক্ষা লাভ করেন।

রোজা মানুষকে চরম ধৈর্যের শিক্ষা দেয়। সামনে হালাল খাদ্য ও পানীয় এবং তা গ্রহণ করার শক্তি থাকা সত্ত্বেও ক্ষুধা ও তৃষ্ণা নিবারণ না করে নির্ধারিত সময়ের জন্য অপেক্ষা করেন একজন মুসলমান। এমন ধৈর্যের সুন্দর নিদর্শন আর কী হতে পারে?

রোজা মানুষকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কৃচ্ছতা সাধনের শিক্ষা দেয়। পরিমিত আহার-নিদ্রা করে সুস্থ জীবন যাপনের শিক্ষা দেয়। শিক্ষা দেয় কঠোর পরিশ্রমের। সারাদিন রোজা আবার রাতে তারাবি ও তাহাজ্জুদ। সিয়াম-কিয়ামের এই কঠিন প্রশিক্ষণে মানুষ হতে পারে ভদ্র ও সুশীল।

রোজা মানুষকে সুশৃঙ্খল হতে সাহায্য করে। মানবের মধ্যে যত খারাপ চরিত্র আছে তা ধুয়ে-মুছে ফেলে এই রোজা। যে ব্যক্তি রোজা রাখেন তিনি কখনও অন্যকে কষ্ট দিতে পারেন না। তিনি মিথ্যা কথা বলতে পারেন না। পারেন না কোনো হারাম কাজ করতে। কোরআনের আলোয় আলোকিত হয়ে একজন মুসলিম তার সুবাতাস সমাজে ছড়িয়ে গড়তে পারেন সুন্দর সমাজ।

কিন্তু কঠিন বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশের অধিকাংশ মুসলমান রোজার আসল শিক্ষার কোনো ধার ধারেন না। প্রত্যেক বছর রোজা এলেই এদেশে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়। এই দ্রব্যমূল্য কোনো অমুসলিমরা বাড়ান না; বাড়ান আমাদের দেশের কথিত মুসলিম ব্যবসায়ীরা। যাদের কাছে রমজানের শিক্ষার চেয়ে ব্যবসাই বড়। তাই যেভাবেই হোক, সাধারণ মানুষকে কষ্ট দিয়ে হলেও মুনাফা করতে হবে। রোজার শিক্ষা ব্যবসায়ীদের মাঝে থাকলে দ্রব্যমূল্য না বেড়ে বরং কমে যেত; যেরকমটি আমরা লক্ষ্য করি পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতসহ অন্যান্য মুসলিম-অমুসলিম দেশে। সেখানে তাদের ধর্মীয় উত্সবের সময় ব্যবসায়ীরা বিনা লাভে বা অর্ধেক মূল্যে পণ্য বিক্রি করেন।

এদেশে রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য বাড়ার ক্ষেত্রে আমরা কথিত মুসলমানরাই বা কম দায়ী কিসে? কেননা আমরা রমজান এলেই রাক্ষুসে চরিত্র ধারণ করি। রোজার মাসে আমাদের খাই খাই স্বভাব বেড়ে যায় বহুগুণে। সারাদিন না খেয়ে থাকার কাজা আদায় করি ইফতার ও সেহরিতে ভূরিভোজের মাধ্যমে। বছরে এক মাস রোজা রাখি, তাই ইফতার হতে হবে শত রকমের! বুট, মুড়ি, ছোলা, পেঁয়াজু, হালিমসহ নানা ধরনের আইটেম খেতে খেতে মাগরিবের জামাত ছুটে যায়। কোনো রকম বাড়িতে বসে দায়সারা নামাজ পড়ে বিছানায়। সারাদিন অভুক্ত থেকে হঠা‍ৎ বেশি খাওয়াতে শরীর তো নেতিয়ে পড়বেই; এ অবস্থায় তারাবির নামাজ আদায় করা একটু দুরূহ বটে। যে দেশের রোজাদাররা খাওয়ার জন্য এত পাগল, সে দেশের ব্যবসায়ীরা একটু দাম বাড়ালে দোষ কি তাতে? ব্যবসায়ীরা জানে, বাঙালি মুসলমান দাম যত বাড়ায় না কেন খাবারে পিছু হটবে না ওরা।

ওদিকে অনেকে রোজাকে নিছক আনুষ্ঠানিকতার ফ্রেমে বন্দি করেছেন। সিয়াম-কিয়াম সবই চলছে; কিন্তু নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী। রোজা রাখেন তো নামাজ পড়েন না। কোন মসজিদে কত তাড়াতাড়ি খতম তারাবি শেষ হবে, চলে তার পাল্লা। কোনো কোনো মসজিদে বিশ দিনে, পনের দিনে, দশ দিনে আবার পাঁচ দিনেও খতম তারাবি হয়। খতম তারাবির নামে কোরআন ও আল্লাহর সঙ্গে বেয়াদবি ও তামাশা চলে। অনেকে কোরআন খতম করেন বহুবার। কোরআন পাঠ ইবাদত হলেও অর্থ না বুঝে পড়ায় লাভ হয় না মোটেও। কোরআনের আলোয় আর আলোকিত হতে পারি না আমরা।

অনেকে রোজা রাখেন বটে, কিন্তু পাপ কর্ম ছাড়েন না। কেউ কেউ অবশ্য প্রকাশ্য পাপ বাদ দিয়ে কিছুটা আড়ালে-আবডালে করতে চান। ঘুষের টাকা নিজে গ্রহণ না করে পিয়ন দিয়ে রাখার ব্যবস্থা করেন। নিজ হাতে সরাসরি অবৈধ লেনদেন না করে টেবিলের ড্রয়ার খুলে ইশারা করেন ওখানে রাখার জন্য। কেউ কেউ আবার ইফতারের পর সারেন...।

রমজান একেবারে শেষ পর্যায়ে চলে এসছে। তাই আসুন, আমরা রমজানকে আল্লাহর রাসূল ও তার সাহাবিরা যেভাবে উদযাপন করেছেন সেভাবে উদযাপন করি। রমজানের শিক্ষাকে বুকে ধারণ করি। তাকওয়ার রঙ্গে রঙিন করি জীবন। রমজান এলে খাওয়া না বাড়িয়ে বরং কমিয়ে দেই; পারলে গরিব-মিসকিনকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করি। ইবাদত-বন্দেগিতে বেশি বেশি মশগুল হই। ধনী-গরিবের ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে একে অপরের সহযোগিতায় এগিয়ে আসি। সব ধরনের হিংসা-বিদ্বেষ, ঝগড়া-বিবাদ, গিবত ও কুকর্ম থেকে জীবনকে মুক্ত রাখি। আল্লাহর দেয়া কিতাব কোরআনকে হৃদয় দিয়ে বোঝার চেষ্টা করি। রোজার শিক্ষা ছড়িয়ে পড়ুক সমানভাবে ধনী-গরিব, সাদা-কালো, লম্বা-খাটো সবার তরে- এই প্রত্যাশায়...।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘন্টা, জুলাই ১৫, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।