ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

আত্মার পরিশুদ্ধি অর্জনে জাকাত

মোহাম্মদ মাকছুদ উল্লাহ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০১৫
আত্মার পরিশুদ্ধি অর্জনে জাকাত

ইসলামের সব শিক্ষার মূলে রয়েছে আত্মশুদ্ধি। এমনকি ইবাদত-বন্দেগিও আত্মশুদ্ধির মানদন্ডে পরিমাপ করা হবে।

হজরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের সৌন্দর্য ও সম্পদের দিকে তাকাবেন না বরং তিনি দেখবেন তোমাদের আমল ও অন্তর। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম

আলোচ্য হাদিসের ব্যাখ্যায় মুফাসসিররা বলেছেন, কিয়ামতের দিন মুমিনের আমল পরিমাপ করা হবে তার আত্মার বিশুদ্ধতার ভিত্তিতে। অর্থাৎ শুধু আমল করলেই হবে না বরং যে আমল একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিবেদিত হবে সেটাই আমল পরিমাপের পাল্লাতে বেশি ভারি হবে। পক্ষান্তরে আমল দৃষ্টিনন্দন হলেও যদি সেটা পরিশুদ্ধ আত্মার নিবেদন না হয় তাহলে তার বিন্দুমাত্র মূল্য আল্লাহর দরবারে নাই। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘কিয়ামতের দিন সম্পদ ও সন্তান কোনো কাজে আসবে না- কিন্তু আল্লাহ যাকে একটি পরিশুদ্ধ আত্মা দান করেছেন। ’ -সূরা আশ শোয়ারা : ৮৮-৮৯

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তোমাদের শরীরের দিকে দেখবেন না এবং তোমাদের চেহারার দিকেও দেখবেন না। তিনি শুধু দেখবেন তোমাদের ক্বলবের (মন, আত্মা) দিকে, একথা বলে রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজের বুকের দিকে ইশারা করলেন। । -সহিহ বোখারি ও মুসলিম

আন্তরিকভাবে মহান আল্লাহর প্রতি নিজের সর্বস্বকে নিবেদন করার নামই হলো- ইসলাম। পৃথিবীতে যত নবী-রাসূলের আগমন হয়েছিল সবার উদ্দেশ্যও ছিল মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে তোলা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদের ওপর অনুগ্রহ করেছেন তাদের মধ্য হতে একজনকে তাদের নিকট রাসূল হিসেবে প্রেরণ করে। তিনি তাদেরকে পাঠ করে শুনান তার আয়াতসমূহ এবং তাদেরকে আত্মিকভাবে পরিশদ্ধ করেন ও তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দান করেন। নিশ্চয়ই তারা ইতিপূর্বে স্পষ্ট বিভ্রান্তির মধ্যে ছিল। ’ -সূরা আল ইমরান : ১৬৪

আম্বিয়ায়ে কেরাম আত্মার পরিশুদ্ধির জন্য যে সব কর্মসূচি দিয়েছেন তার অন্যতম হল সদকা। আর সদকায়ে ওয়াজিবাহ এর নাম হল জাকাত। ইসলামের পাঁচটি মৌলিক বিধানের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এই জাকাতের সঙ্গে আত্মিক পরিশুদ্ধির একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে। মহান আল্লাহ স্বীয় রাসূল (সা.) কে জাকাত আদায়ের নির্দেশ দিয়ে ইরশাদ করেছেন, ‘আপনি তাদের সম্পদ থেকে সদকা (জাকাত) আদায় করুন; যা দ্বারা আপনি তাদেরকে (গুনাহের কালিমা থেকে) পবিত্র করবেন এবং তাদেরকে আত্মিকভাবে পরিশুদ্ধ করবেন। আর আপনি তাদের জন্য দোয়া করুন। নিশ্চয়ই আপনার দোয়া তাদের জন্য বিশেষ প্রশান্তি। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। ’ -সূরা আত্-তওবা : ১০৩

সম্পদের সঙ্গে অহংকার অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদের মালিক হলে নিজেকে অন্যের তুলনায় বেশি সম্মানি, মর্যাদাবান, প্রতিপত্তিশালী, প্রভাবশালী ও উঁচুস্তরের বলে মনে হয়, আর এটাই অহংকার। অহংকার মুমিনের ঈমানকে যেমন দুর্বল করে দেয় তেমনি আমলকেও ধ্বংস করে ফেলে। তাই নিজের কষ্টার্জিত সম্পদ থেকে দরিদ্র মানুষের অধিকারটা হিসাব করে যদি তাদেরকে বুঝিয়ে দেয়া যায়, তাহলে নিজের আত্মাটা অহংকার থেকে মুক্ত থাকবে এবং পরিশুদ্ধ হবে । যদি কিনা জাকাত আদায়ে নিজের দায়মুক্তি ও অন্যের অধিকার বুঝে দেয়ার উপলব্ধিটা থাকে। এ ক্ষেত্রে গরীবের প্রতি অনুকম্পার মানসিকতা আত্মার কলুষতাকে আরো বাড়িয়ে দেয়। মুমিনের বৈশিষ্ট বর্ণনা করে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘তারা শুধু আল্লাহর ভালোবাসায় স্বপ্রণোদিত হয়ে এতিম, মিসকিন, বন্দিদেরকে খাবার খাওয়ায়। (খাবার দেয়ার সময় তারা বলে) আমরা শুধুই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তোমাদেরকে খাবার দিচ্ছি, এর বিনিময়ে আমরা তোমাদের কাছ থেকে কোন প্রকার প্রতিদান চাই না, এমন কি কৃতজ্ঞতাও কামনা করি না। -সূরা দাহর : ৮-৯

জাকাত ধনীর সম্পদে দরিদ্রের অধিকার। এ অধিকার আল্লাহতায়ালা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, আর তাদের সম্পদে সাহায্য প্রার্থী ও বঞ্চিতদের নির্দিষ্ট অধিকার রয়েছে। ’ -সূরা আল মাআরিজ : ৩৮

নিজের কষ্টার্জিত সম্পদে অন্যের অধিকার আছে এটি মেনে নেয়া এবং দায়মুক্তির জন্য যথাযথ হিসাব করে জাকাত আদায় করা মুমিনের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে এবং ঈমানকে পরিপূর্ণ করে।

লেখক : পেশ ইমাম ও খতিব, রাজশাহী কলেজ কেন্দ্রীয় মসজিদ

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘন্টা, জুলাই ০৯, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।