ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

তওবা করার জন্য শেষ সময়ের অপেক্ষা নয়

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০২৩
তওবা করার জন্য শেষ সময়ের অপেক্ষা নয় সংগৃহীত ছবি

বাইরের শয়তান এবং ভেতরের কুপ্রবৃত্তির যৌথ আক্রমণে পরাজিত হয়ে মানুষ প্রতিনিয়ত পাপে লিপ্ত হয়। এ বিষয়ে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘প্রত্যেক মানুষই পাপ কাজ করে থাকে।

তবে সুখের বিষয় হলো- এর পরও নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। কারণ, আল্লাহতায়ালা রহমত থেকে নিরাশ হওয়া কুফরি। আল্লাহর রহমতের দরজা তার পাপী বান্দার জন্য সবসময় খোলা। বান্দার পাপ করার ক্ষমতা থেকে আল্লাহর ক্ষমা করার ক্ষমতা অনেক বেশি। এ প্রসঙ্গে এক হাদিসে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘পাপীদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো সে, যে পাপী তওবা করে। ’ 

তিনি আরও বলেছেন, ‘পাপ থেকে তওবাকারী ওই ব্যক্তির মতোই পবিত্র যে ব্যক্তি পাপ কাজ করেইনি। ’ 

মানুষকে জাহান্নামে পাঠানোর জন্য শয়তানের দীর্ঘদিনের সব শ্রম একজন মানুষ এক মুহূর্তের তওবা দ্বারা সম্পূর্ণ নষ্ট করে দিতে পারে।

তওবার সার কথা হলো- মাফ চাওয়া। আর আল্লাহতায়ালার কাছে তওবা কবুল হওয়ার জন্য দরকার কৃত পাপের জন্য অনুতপ্ত হওয়া। অনুতপ্ত মনে আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়া এবং পাপ থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া।

আমরা উঠতে-বসতে, চলতে-ফিরতে বারংবার বলতে পারি, ‘আল্লাহ মাফ কর। ’ এ ছোট্ট কথাকে আমাদের অভ্যাসে পরিণত করে নিতে পারি। তওবা করার জন্য অজু-গোসলের দরকার নেই, মসজিদ-জায়নামাজ দরকার নেই, স্থানান্তরের দরকার নেই, কোনো বরকতময় বিশেষ সময়েরও দরকার নেই।

যখন যেখানে যেকোনো পরিবেশে বুঝে আসবে কাজটা ভুল হয়েছে, কোনো সময়ক্ষেপণ না করে, কোনো অপেক্ষা না করে সঙ্গে সঙ্গে সেখানেই বলতে থাকা- ‘আল্লাহ মাফ করো, আল্লাহ ক্ষমা করো। আমি অপরাধী, তুমি ক্ষমাশীল; তোমার ক্ষমার চাদর দিয়ে আমাকে ঢেকে দাও। ’

গুনাহ হওয়ার পরক্ষণেই তওবা করে নিতে হয়। তা না হলে যখনই কৃত গুনাহের জন্য মনে অনুশোচনা জেগে উঠবে তখনই তওবা সেরে ফেলতে হবে। তওবা করতে বিলম্ব করা উচিৎ নয়।

কেননা, বেঁচে থাকার ও ভবিষ্যতে তওবার সুযোগ পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তওবার দ্বারা নিজের আমলনামাকে পরিষ্কার করে কাঙ্ক্ষিত শুভ মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকার শিক্ষা দিতে যেয়ে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমি প্রতিদিন সত্তর বা ততোধিক বার আল্লাহর কাছে তওবা করি। ’

আমরা সবাই জানি, তিনি কোনো গুনাহ করতেন না। আল্লাহ তাকে সব গুনাহ থেকে সংরক্ষিত রাখতেন। এর পরও তিনি প্রতিদিন সত্তর বার তওবা করতেন। কেননা, বেশি বেশি তওবা করার দ্বারা আল্লাহতায়ালা খুশি হন। তওবার দ্বারা আল্লাহর কাছে মানুষের দাসত্ব ও অসহায়ত্ব প্রকাশ পায়।

এ ছাড়া যুক্তিসঙ্গত কারণেই আমাদের বেশি বেশি তওবা করা দরকার। কেননা, আমরা তো আপাদমস্তক গুনাহে নিমজ্জিত থাকি।  

অনেকে তওবা করতে ইতস্ততবোধ করেন। মনে করেন কিংবা ভাবেন, ‘তওবা ঠিক রাখতে পারব না, আবার গুনাহ হয়ে যাবে- এখনই কী দরকার তওবা করার; কয়বার তওবা করব- ইত্যাদি। ’ 

এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, এ ধারণাটা মূলত শয়তানের একটি ধোঁকা। কেননা, আমরা গুনাহ করতে করতে, তওবা করতে করতে ক্লান্ত হতে পারি। কিন্তু মহান আল্লাহ তওবা কবুল করতে কখনোই ক্লান্ত হন না। মানুষের কাছে বারবার ভুল করে বারবার মাফ চাইলে মানুষ ক্লান্ত হয়, বিরক্ত হয়- কিন্তু আল্লাহ মানুষের মতো নয়। আমাদের দ্বারা সম্ভব নয় আল্লাহকে ক্লান্ত করা।  

এক দিনে একই পাপ যদি আমরা হাজারবারও করি, আর প্রতিবার তওবা করি- তবুও দয়াময় আল্লাহ তার বান্দাকে প্রতিবারই মাফ করবেন। একদিন হাজার নয়- লক্ষ কোটি বারও আল্লাহ তার বান্দাকে মাফ করবেন।

বান্দা যতবার তওবা করবে, আল্লাহ ততবার তাকে মাফ করবেন। তিনি মাফের দরজা, তওবা কবুলের দরজা উন্মুক্ত রেখেছেন।

তওবা কবুলের শেষ সময় হলো- প্রাণ কণ্ঠাগত হওয়া। যখন একজন মানুষের প্রাণ বের হওয়ার জন্য কণ্ঠনালীতে পৌঁছে যায়- তখন আর তার তওবা কবুল হয় না। এর পূর্ব পর্যন্ত তওবা করার সময় ও সুযোগ থাকে।

এ বিষয়ে সূরা নিসার ১৭ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন কারও মৃত্যু উপস্থিত হয়ে যায় আর সে বলে, এখন আমি তওবা করছি তার তওবা গ্রহণের দায়িত্ব আল্লাহর নেই। ’

তবে মনে রাখতে হবে, মানুষের অধিকার নষ্ট করার অপরাধ নিছক তওবা করার দ্বারা মাফ হবে না। এ জন্য তওবার আগে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে অথবা তাকে সন্তুষ্ট করে তার থেকে মাফ নিতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০২৩
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।