ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

আহলান সাহলান মাহে রমজান

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২৩
আহলান সাহলান মাহে রমজান

বছর ঘুরে আবারও শুভ আগমন ঘটেছে পবিত্র রমজানুল মুবারাকের। অধীর আগ্রহে অপেক্ষামান প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীকে এ মহান মাসের অফুরন্ত কল্যাণ হাসিলের জন্য সঠিকভাবে রমজানুল মুবারাকের যাবতীয় হক আদায় করতে হবে।



আর এর জন্য প্রয়োজন একটি সুন্দর পূর্বপরিকল্পনা। পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে আসুন আমরা সুপরিকল্পিতভাবে রমজানকে গ্রহণ করি।

রমজান মাসকে অভিনন্দন জানাতে হবে
একজন প্রকৃত মুসলমান রজব মাস থেকে পবিত্র রমজান মাস প্রাপ্তির জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট দাবি পেশ করেছেন একথা বলে—
হে আল্লাহ তুমি রজব ও শাবান মাসকে আমাদের জন্য বরকতময় করে দাও এবং রমজান মাস পর্যন্ত আমাদের পৌঁছে দাও।

আর পশ্চিম দিগন্তে মাহে রমজান এর নতুন চাঁদ উদিত হওয়ার সাথে সাথে মুমিনদের কাজ হলো, এ মহান মাসকে যথাযথ নিয়মে অভিনন্দন জানানো। প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) এভাবে রমজান মাসকে স্বাগত জানাতেন—
হে আল্লাহ তুমি আমাদের জন্য এ নতুন চাঁদকে নিরাপত্তা, বিশ্বাস, শান্তি ও আনুগত্যের প্রতীক হিসেবে কবুল কর। হে নতুন চাঁদ আমার ও তোমার রব হলেন আল্লাহ তায়ালা। তুমি হেদায়াত ও কল্যাণের চাঁদ। (তিরমিজি)

সিয়াম সাধনা
রমজানুল মুবারাকের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও আবশ্যকীয় আমল হলো, মহান আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক নির্ধারিত ফরজ সিয়াম পালন করা। প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিম নর-নারীর ওপর রমজান মাসের রোজা রাখা ফরজ। অসুস্থ এবং মুসাফির ব্যক্তির জন্য রোজা ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ আছে, তবে পরে কাজা করা আবশ্যক। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন—
হে মুমিনগণ তোমাদের ওপর সিয়াম বা রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে করে তোমরা তাক্বওয়া অবলম্বন করতে পার। নির্দিষ্ট দিনগুলোতে তথা রমজান মাসে। তবে কেউ যদি এই সময় অসুস্থ থাকে অথবা সফরে থাকে (তাহলে রোজা ছেড়ে দিতে পারবে) অতঃপর তাকে অন্য দিনগুলোতে তা কাজা করতে হবে। (সুরা বাক্বারাহ আয়াত ১৮৩)।

এ সুরার ১৮৫ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন—রমজান মাস যে মাসে নাযিল করা হয়েছে আল কুরআন, যা মানব জাতির জন্য পথপ্রদর্শক এবং সুস্পষ্ট বর্ননা সঠিক পথপ্রদর্শনকারী ও সত্য-মিথ্যার মধ্যে পার্থক্যকারী। অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস পাবে সে যেন মাসব্যাপী রোজা পালন করে। তবে রোগী এবং মুসাফির পরবর্তীতে পালন করতে পারবে। মহান আল্লাহ তায়ালা দ্বীনকে তোমাদের জন্য সহজ করে দিয়েছেন তিনি তোমাদের ওপর কোনো কিছু কঠিন করেননি। সুতরাং তোমরা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী নির্দিষ্ট দিনগুলোতে রোজা পালন কর। আসা করা যায়, তোমরা তার শুকর আদায় করতে পারবে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে আত্মশুদ্ধির নিয়তে সওয়াবের আসায় রমজান মাসের রোজা পালন করে তার পূর্ববর্তী গুনাহ সমূহ ক্ষমা করা হয়। (বুখারি ও মুসলিম)
ক্বিয়াম তথা তারাবিহ আদায়
মহানবী হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন—যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে আত্মশুদ্ধির জন্য সওয়াবের আসায় রমজান মাসের রাতে ক্বিয়াম তথা তারাবিহ আদায় করে তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হয়। (বুখারি ও মুসলিম)

ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা আমিরুল মুমিনিন হযরত উমর ফারুক রা. এর খেলাফতকালে সকল সাহাবিদের ইজমার ভিত্তিতে মসজিদে নববিতে সর্বপ্রথম বিশিষ্ট সাহাবি হযরত উবাই বিন কা’ব রা. এর ইমামতিতে ২০ (বিশ) রাকাত তারাবিহর নামাজ প্রতিষ্ঠিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আজও পবিত্র মসজিদে নববি ও পবিত্র মসজিদুল হারামে রমজানুল মুবারাকে ২০ রাকাত তারাবিহ জামাতের সাথে আদায় করা হয়।

কুরআনুল কারিম তেলাওয়াতের প্রতি যত্নবান হওয়া
কুরআন নাজিলের মাস পবিত্র রমজান মাসে একজন কুরআন বিশ্বাসী মানুষের জন্য কুরআনের সাথে সম্পর্ক মজবুত করার উপযুক্ত সময়। এ কারণে এ মাসে অধিক পরিমাণে কুরআন তেলাওয়াত, সাধ্যানুযায়ী কুরআন হিফয, কুরআনের মর্ম উপলব্ধির চেষ্টা করা, কুরআনের আলোকে পরিবার, সমাজ গঠন ও কুরআনের আলোকে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টাসহ রমজান মাসে অধিক পরিমাণে কুরআন চর্চায় রত থাকা মুমিনদের জন্য একান্ত অপরিহার্য। আল্লাহর রাসুল (সা.) নিজেই এ মাসে পবিত্র কুরআন চর্চায় অধিক মনোযোগী হতেন।
হাদিসে এসেছে
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রসুলল্লাহ সা. ছিলেন সবচেয়ে বড় দানশীল। রমজান মাসে যখন হযরত জিবরাইল আ. তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন, তখন তিনি বেশি দান করতেন। আর রমজানের প্রতি রাতে জিবরাইল আ. তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। এ সময় তারা দুজন একত্রে পবিত্র কুরআন অধ্যয়ন করতেন। তখন প্রবাহিত বাতাসের গতির চেয়ে নবীজির দানের গতি বেশি হতো। (বুখারি)

দান সাদাক্বাহসহ ভালো কাজ করার সর্বোত্তম সময় রমজান মাস
রমজান মাস হলো দান সাদাক্বাসহ সব ধরনের ভালো কাজের মাধ্যমে নিজের আমলনামা ভারী করার উপযুক্ত সময়। মহানবী (সা.) বলেছেন রমজান মাসের একটি নফল কাজ অন্য মাসের ফরজ কাজের সমান আর এ মাসের একটি ফরজ কাজ অন্য মাসের সত্তরটি ফরজ কাজের সমান।

মহানবী স. আরও বলেছেন—রমজান মাসের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে বেহেশতের সব দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং এ মাসে আর বন্ধ করা হবে না। আর জাহান্নামের সব দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ মাসে আর খোলা হবে না। এবং শয়তানকে কারাবন্দি করা হয়। রমজানের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন ঘোষক বলতে থাকেন—হে! ভালো মানুষেরা তোমরা এগিয়ে যাও। আর দুষ্ট লোকেরা তোমরা থেমে যাও। মহানবী বলেছেন—রমজান হলো সবার সহনশীলতা ও সহমর্মিতার মাস।

পানাহার ও জৈবিক চাহিদা থেকে বিরত থেকে সিয়াম সাধনা করতে হয়। আর  এ চর্চার মধ্য দিয়ে রোজাদারদের অন্তর থেকে লোভ লালসা, হিংসা বিদ্বেষ, ক্রোধ দূর হবে এটাই রোজার উদ্দেশ্য। কাজেই সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে ধৈর্য ও সহনশীলতার প্রশিক্ষণ নেওয়ার উপযুক্ত সময় হলো মাহে রমজান।

লেখক: এ এফ এম নাজমুস সউদ

বাংলাদেশ সময়: ০৭২৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।