সমুদ্রের দেও-দানোর গল্প রূপকথায় শোনা গেলেও তা আজ বাস্তবে রূপ দিয়ে অকূল দরিয়া দাবড়ে বেড়াচ্ছে এক জাহাজ। যাকে আক্ষরিক অর্থেই এক ‘দরিয়া দানব’ বলা চলে।

অনন্য সাধারণ এই জলযান- এতটাই বড় যে, তার তুলনা নিউইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কের সঙ্গেই করা চলে। এই জাহাজের ১৮টি ডেকে ১০ হাজার ৫৮৭টি গাছ রয়েছে। তার মধ্যে ৫২টি গাছের উচ্চতা ২০ ফুট।

প্রকৌশলের এক বিস্ময়কর বিন্যাস রয়েছে এই হারমনি অব দ্য সিজ-এ। যা নির্মাণে খরচ পড়েছে প্রায় ১২ কোটি মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি টাকায় এ অর্থের পরিমাণ প্রায় ৯০০ কোটি টাকা। ২১৮টি বিমের ওপর জাহাজটি নির্মিত, উচ্চতায় ২১০ ফুট। এতে ৬ হাজার যাত্রী উঠতে পারবে আর ক্রু থাকবে ২ হাজার ১০০ জন। গেল সপ্তায় প্রথম সমুদ্রযাত্রায় নেমে ধীর গতিতে সমুদ্রের শান্ত ঢেউ ঠেলে জাহাজটি যখন ফ্রান্সের সেইন্ট-নাজায়ার থেকে এগিয়ে যাচ্ছিলো, তখন এই বিশাল জলযানের পরিচালনায় ছিলেন মোটে জনা তিনেক পাইলট। তাদের অবশ্য কোনো হুইল চেপে থাকার কাজ ছিলো না। কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে পরিচালিত এই জাহাজের গতিধারা ঠিক রয়েছে কি না সেটাই লক্ষ্য রাখা তাদের কাজ।

আসছে মে মাসে জাহাজটি যখন আনুষ্ঠানিকভাবে তার ৬ হাজার যাত্রী নিয়ে সাউদাম্পটন থেকে যাত্রা শুরু করবে, তখন এর আরোহীদের কব্জিতে জিপিএস সিস্টেম বেঁধে দেওয়া হবে। এই অতিকায় জাহাজের অভ্যন্তরের গোলকধাঁধায় যখন তখন হারিয়ে যাওয়ার অবাধ সুযোগটি করে দিতেই এ উদ্যোগ।
ভিআইপি অতিথিদের সেবা দিকে ‘রয়্যাল জিনি’ স্কোয়াড প্রস্তুত থাকবে। আর যারা থ্রিল পছন্দ করেন, তারা বেছে নিতে পারবেন চারটি অনবোর্ড স্লাইডিংয়ের যে কোনোটি। যার মধ্যে আলটিমেট অ্যাবিসও থাকবে, যেটি সমুদ্রে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু স্লাইড। একবার উঠে চড়েছেন কি ঝপাৎ করে নেমে যাবেন ১০০ ফুট গভীরে।

আর যারা একটু দুঃসাহসিক অভিযাত্রায় আগ্রহী, তারা খোলা নয়টি ডেকে ঘুরে বেড়াবেন। সেখানে বায়োনিক বারে রোবট ওয়েটারদের পরিবেশিত ককটেইল গলায় ঢেলে তারা উপভোগ করতে পারবেন সমুদ্রের ঢেউ।
আনন্দ বিনোদনের কথা নিশ্চয়ই জানতে চাইবেন। ব্রডওয়ের সেরা মিউজিকগুলো জাহাজটিতে সারাক্ষণই বাজতে থাকেবে। আর পূর্ণ আকারের থিয়েটারে সেরা সিনেমাগুলো দেখানো হবে। সঙ্গে উড়ন্ত অ্যাক্রোবেটিকস।
এই জাহাজে ১৬টি রেস্টুরেন্ট আর ক্যাফে রয়েছে, যার মধ্যে জেমি’স ইটালিয়ানও স্থান পেয়েছে। আর বুটিক শপিংয়ে আরোহীদের পছন্দের তালিকায় রয়্যাল প্রোমেনেড থাকছে। উচ্চগতির ওয়াই-ফাইয়ের কথা বলাই বাহুল্য।

আর যারা চ্যালেঞ্জ নিতে জানেন, তাদের জন্য এই সমুদ্র যাত্রায় একটি পালানোর কক্ষও রয়েছে। গোলকধাঁধার পথে পথে সেখানে অপেক্ষা করবে নানা চ্যালেঞ্জ।
নানা বিস্ময়ে ভরা এই হারমনি অব দ্য সিজ এমন কিছু, যা এতদিন কেবল কল্পনাতেই ভাবা সম্ভব ছিলো।
বাংলাদেশ সময়: ০১১৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৬
এমএমকে