ঢাকা: ‘ঘড়িটা দারুণ। তুমি কি এটা নিয়ে হোয়াইট হাউজে আসবে?’ টুইটারে পোস্ট করা এই আমন্ত্রণ আর কেউ নয়, স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা জানিয়েছেন।
আহমেদ মোহাম্মদ,১৪ বছর বয়সী এই কিশোর টেক্সাসের আর্ভিং এলাকার বাসিন্দা। সেখানকার একটি স্কুলের নবম গ্রেডের ছাত্র সে। বিজ্ঞানপ্রেমী মেধাবী এই কিশোর সম্প্রতি নিজেই একটি ঘড়ি তৈরি করেছে তার একটি স্কুল প্রজেক্টের জন্য। কিন্তু সেটাই যেন কাল হলো তার জন্য।

গত সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) গ্রেফতার করা হয় আহমেদ মোহাম্মদকে। বাড়িতে তৈরি ঘড়িটি নিয়ে সেদিন স্কুলে গিয়েছিলো সে। কিন্তু একজন শিক্ষকের যেন পছন্দ হলো না বিষয়টি। ঘড়িটিকে বোমা ভেবে খবর দিলেন স্থানীয় পুলিশকে। পুলিশও কোনো কিছু খতিয়ে না দেখে আটক করে মোহাম্মদকে। স্কুল কর্তৃপক্ষও যেন এক কাঠি বাড়া। মোহাম্মদকে তিন দিনের জন্য বহিষ্কার করে তারা।

এরপর থেকেই আহমেদের পক্ষে জনমত গড়ে উঠতে শুরু করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘আই স্ট্যান্ড উইথ আহমেদ’ শীর্ষক এক হ্যাশট্যাগ যেন ঝড়ের বেগে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। শুধুমাত্র টুইটারেই আহমেদের পক্ষে নিজের অবস্থান জানিয়েছেন ৫ লাখের বেশি ব্যবহারকারী। এ সংখ্যা প্রতিমুহূর্তে বাড়ছে।
আহমেদের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে কেউ কেউ এবং কিছু কিছু সংগঠন সাম্প্রদায়িকতারও অভিযোগ তুলেছেন। তাদের দাবি, শুধুমাত্র মুসলিম হওয়ায় এবং নামের সঙ্গে মোহাম্মদ থাকায় তাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে হেনস্তা করা হয়েছে। কোনো শ্বেতাঙ্গ বালক একই ঘড়ি বানিয়ে স্কুলে আনলে তাকে হয়তো ভবিষ্যতের বিজ্ঞানী হিসেবে বাহবা দেয়া হতো, সেখানে মোহাম্মদকে সাব্যস্ত করা হয়েছে সন্ত্রাসী হিসেবে।

দেশ বিদেশে প্রবল সমালোচনার মুখে অবশেষে বুধবার আহমেদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। তবে স্কুলের সাময়িক বহিষ্কারাদেশ এখনও বলবৎ রয়েছে বলে জানিয়েছে আহমেদ। বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত এ আদেশ অব্যাহত থাকবে।
আহমেদের ওপর হয়ে যাওয়া এ অন্যায় শুধু সাধারণ মানুষকেই নয়, নাড়া দিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকেও। এক টুইট বার্তায় তিনি আহমেদকে তার ওই ঘড়িসহ হোয়াইট হাউজে আমন্ত্রণ জানানোর পাশাপাশি লিখেছেন, তোমার মতো আরও অনেক শিশুকে বিজ্ঞানে আগ্রহী করে তোলা উচিত আমাদের। এভাবেই আমেরিকা বড় হবে।
সাধুবাদ জানানোতে পিছিয়ে নেই নাসাও। মার্কিন মহাকাশ সংস্থাটির বিজ্ঞানী ক্রিস হ্যাডফিল্ড, সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার বোবাক ফেরদৌসিসহ বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী আহমেদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
টুইটারে নিজের অভিমত প্রকাশ করতে গিয়ে ফেরদৌসি লিখেছেন, এ ধরনের ঘটনা আহমেদের নিরুৎসাহিত করবে।
ইন্টারনেট সার্চ জায়ান্ট গুগলও এক বিজ্ঞান মেলায় ঘড়িসহ আমন্ত্রণ জানিয়েছে আহমেদকে।
পিছিয়ে নেই ফেসবুকও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটির প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, আপনারা হয়তো টেক্সাসের ১৪ বছর বয়সী আহমেদের ঘটনার কথা শুনে থাকতে পারেন। এ ধরনের দারুণ কিছু কেউ উদ্ভাবন করলে তাকে গ্রেফতার নয়, উৎসাহ দেওয়া উচিত। আহমেদদের মতো শিশু-কিশোরদের ওপরই ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।

তিনি আহমেদকে ফেসবুক কার্যালয়ে আমন্ত্রণ জানিয়ে লেখেন, তুমি যদি কখনও ফেসবুক কার্যালয়ে আসো, তাহলে আমি অবশ্যই তোমার সঙ্গে দেখা করবো। এগিয়ে যাও।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৫
আরএইচ/আরআই