ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

তিমির বমির দাম কোটি টাকা! কী কাজে লাগে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৬ ঘণ্টা, মে ২১, ২০২৩
তিমির বমির দাম কোটি টাকা! কী কাজে লাগে? এই স্পার্ম তিমির পেটে তৈরি হয় মহা মূল্যবান অ্যাম্বারগ্রিস

সমুদ্র তীরে দাঁড়িয়ে বিশাল ঢেউয়ের গর্জন শুনছেন আর নোনা জলে পা ভেজাচ্ছেন। এমন সময় পায়ের কাছে ভেসে এলো দলাকৃতির বস্তু।

জানলেন এগুলো তিমির বমি। আর এর দাম কোটি টাকার বেশি! 

শুনতে অবাক লাগলেও সমুদ্রের বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির বমির দাম কোটি টাকার বেশি। দামের কারণে তিমির বমিকে ফ্লোটিং গোল্ড বা ভাসমান সোনা বলা হয়।  

তবে আন্তর্জাতিকভাবে তিমির বমির নাম অ্যাম্বারগ্রিস। ফরাসি শব্দ অ্যাম্বার আর গ্রিস মিলে ইংরেজি অ্যাম্বারগ্রিস শব্দটি এসেছে। মূলত, স্পার্ম তিমির পেটে তৈরি হয় এই অ্যাম্বারগ্রিস।

কালোবাজারে অ্যাম্বারগ্রিসের চাহিদা প্রচুর। যে কারণে অ্যম্বারগ্রিস পাচারে আন্তর্জাতিক চক্র জড়িত।  

গত ১৮ মে ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের তুতিকোরিন উপকূলে তল্লাশি চালালে তিমির বমি পাচারকারী একটি চক্রের পাঁচজন সদস্য ধরা পড়ে। তাদের কাছ থেকে তিমির ১৮ কেজি ১০০ গ্রাম বমি (অ্যাম্বারগ্রিস) জব্দ করা হয়, যার বর্তমান বাজারদর বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪০ কোটি ৮৮ লাখ ৪২ হাজার টাকা! 

অর্থাৎ কালোবাজারে বর্তমানে তিমির এক কেজি বমির দাম ২ কোটি ২৭ লাখ টাকার বেশি!

স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, তিমির বমির এতো দাম কেন? এতে কী এমন থাকে? বা তিমির বমি বা অ্যাম্বারগ্রিস কী কাজে লাগে যে তার মূল্য কোটি কোটি টাকা? 

আমেরিকান ওশান ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, মূলত, সুগন্ধি আর ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয় অ্যাম্বারগ্রিস। বিশ্বের দামি দামি সুগন্ধির সতেজতার নেপথ্যে রয়েছে এটি। দুষ্প্রাপ্য পদার্থটি সুগন্ধির সুবাস বৃদ্ধি করে এবং সংরক্ষণ করে। সুগন্ধিতে ব্যাপক চাহিদার পাশাপাশি বিভিন্ন ওষুধ তৈরিতেও এই অ্যাম্বারগ্রিস কার্যকরী। প্রচলিত চীনা ওষুধে ব্যবহৃত এটি। যে কারণে বিশ্ববাজারে এর কদর বা চাহিদা আকাশচুম্বী।  

অ্যাম্বারগ্রিস অবশ্য খাবারের কোনো উপকরণ নয়। এরপরও একে খাদ্য মশলা হিসেবে ব্যবহারের কথা শোনা যায়। তবে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, যেহেতু এটি তিমির পাচনতন্ত্রে সৃষ্টি হয়, এতে  বিপজ্জনক অণুজীব থাকে। তাই এটি মানুষের খাওয়ার জন্য নিরাপদ নয়।  

অ্যাম্বারগ্রিস বা তিমির বমির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছে ফ্লোটিং গোল্ড: আ ন্যাচারাল অ্যান্ড (আনন্যাচারাল) হিস্ট্রি অব অ্যাম্বারগ্রিস। বইটির লেখক ক্রিস্টোফার কেম্প। তিনি একজন ইংরেজ বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞান বিষয়ে সাংবাদিকতা করেন। বর্তমানে মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে কাজ করছেন তিনি।

ক্রিস্টোফার জানিয়েছেন, কীভাবে অ্যাম্বারগ্রিস তৈরি হয় আর তা সৈকতে ভেসে আসে।  

বইতে এ বিজ্ঞানী লিখেছেন, মূলত স্পার্ম তিমির পাকস্থলিতে মহামূল্যবান অ্যাম্বারগ্রিস তৈরি হয়। এটি তৈরি হতে অনেক সময় লেগে যায়। এ সময়টা বছরের বেশিও হতে পারে। স্পার্ম তিমি হাজার হাজার স্কুইড খায়। এসব স্কুইডগুলোর মধ্যে অনেকগুলো হজম হয় না। এগুলো পাকস্থলি ও অন্ত্রের মাঝখানের জায়গায় গিয়ে জমা হতে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে জমা পড়ে থাকতে থাকতে আর তিমির অন্ত্রের বিভিন্ন রাসায়নিকে এসব স্কুইড অ্যাম্বারগ্রিসে পরিণত হয়। স্পার্ম তিমি পরে তা মুখ দিয়ে বের করে দেয়।  

ক্রিস্টোফার জানান, অ্যাম্বারগ্রিস প্রথম অবস্থায় মোমের মতো পিচ্ছিল হয়। তিমির মুখ দিয়ে বের হওয়ার সময় দুর্গন্ধযুক্ত থাকে। তবে সমুদ্রের নোনা জলের সংস্পর্ষে আর ঢেউয়ে ঢেউয়ে তীরে ভেড়ার পথে এর দুর্গন্ধটা চলে যায়, সুগন্ধ ছড়াতে থাকে। এটি শক্ত দলায় রূপ নেয়। শুকিয়ে গেলে এটি পাথরের মতো রূক্ষ হয়ে যায়।

অ্যাম্বারগ্রিসকে অবশ্য তিমির বমি বলতে রাজি নন ক্রিস্টোফার। কারণ, কোনো খাবার খাওয়ার পর তা হজম না হয়ে মুখ দিয়ে বের হলে তাকে বমি বলে। খাবার খাওয়ার সঙ্গে বমির ঘটনার সময়টা খুব বেশি নয়। কিন্তু স্পার্ম তিমির পাকস্থলিতে অ্যাম্বারগ্রিস তৈরি হতে বছর পেরিয়ে যায়।  

যদিও অ্যাম্বারগ্রিস হাজার বছর ধরে সুগন্ধি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর ব্যবহার কমে গেছে।  

এর অন্যতম কারণ দুষ্প্রাপ্যতা, ব্যয়বহুল। তার ওপর রয়েছে আইনি প্রতিবন্ধকতা। অনেক দেশে স্পার্ম তিমি শিকার নিষিদ্ধ, এবং তাদের থেকে তৈরি পণ্যের ব্যবসায় কঠোর বিধান রয়েছে।

তাই অ্যাম্বারগ্রিস বর্তমানে মূল্যবান এবং বিরল উপাদান হিসাবে বিবেচিত হয়। অনেক সুগন্ধি প্রস্তুতকারক কারখানা অ্যাম্বারগ্রিসের বিকল্প অনুসন্ধান করছে।

 

বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, মে ২১, ২০২৩
এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।