ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

সমস্যার সমাধানে ভবিষ্যৎ বাণিজ্য ই-কমার্স

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৯ ঘণ্টা, জুন ৩, ২০২০
সমস্যার সমাধানে ভবিষ্যৎ বাণিজ্য ই-কমার্স ই-কমার্স

ঢাকা: করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতি দেশীয় প্রেক্ষাপটে ই-কমার্স খাতগুলোর জন্য এনে দিয়েছে ব্যাপক সম্ভাবনা। একইসঙ্গে দেখিয়েছে নানামুখী সমস্যাও। আর এসব সমস্যার সমাধান করে সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলেই দেশের ভবিষ্যৎ বাণিজ্য তথা কমার্স খাত হবে পুরোপুরি ই-কমার্স।

করোনা পরিস্থিতিতেও কার্যক্রম পরিচালনা করে বিভিন্ন ই-কমার্স উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী নেতারা দিচ্ছেন এমনই মতামত। করোনাকালীন ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা থেকে তারা বলছেন, নতুন নতুন সমস্যাগুলোর সমাধান করে সামনে আসা নতুন নতুন সম্ভাবনাগুলো সফলভাবে অর্জন করা সম্ভব।

ভবিষ্যৎ সময়ে ব্যবসায়ী-গ্রাহকদের মধ্যে ই-কমার্স প্র্যাকটিস (সংস্কৃতি) ধরে রাখতে এবং এ খাতের আরও উন্নতি নিশ্চিত করতে এখনই নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার বলেন, এখানে একটা ত্রিমুখী বিষয় আছে। ই-কমার্সে নতুন গ্রাহকেরা যেমন আসছেন তেমনি তাদের আস্থা রাখতে ই-কমার্সগুলোকে নানামুখী ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের কাছে ই-কমার্সকে আরও আকর্ষণীয় করা, গ্রাহকদের বিভিন্ন অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তি করা, রিটার্ন-রিফান্ড পলিসি আরও সহজ করার মতো কাজগুলো করতে হবে। মোট কথা ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোকে আরও গ্রাহকবান্ধব হতে হবে। আবার গ্রাহকদেরও ব্যবসায়ীদের দিকটা দেখতে হবে। এসব কিছুর পর পুরো বিষয়টিতে দরকার সরকারের নীতিগত সাহায্য।

দেশীয় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম প্রিয়শপডটকমের প্রধান নির্বাহী আশিকুল আলম খান বলেন, ই-কমার্স একটি ইকো-সিস্টেম। এ সিস্টেমই লকডাউনের সময়ে ই-কমার্সকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সাহায্য করেছে। সাপ্লায়ারদের প্রতিদিন কার্যক্রম বেশি সময় ধরে চালু রাখা, ডেলিভারি ম্যান-রাইডারদের চাহিদা, দেশের আনাচে-কানাচে পণ্য পৌঁছানোর সক্ষমতার মতো বিষয়গুলোর প্রয়োজনীয়তা আমরা এসময়ে বুঝতে পেরেছি। সরকার ইতোমধ্যে এটিকে জরুরি খাত হিসেবে ঘোষণা করেছে। এখন আমাদের পুরো ইকো-সিস্টেমকে আরও উন্নত করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

আরেক দেশীয় ই-কমার্সভিত্তিক মার্কেটপ্লেস ইভ্যালি ডট কম ডট বিডির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাসেল মনে করেন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমাধান হবে বিভিন্ন সমস্যার।

রাসেল বলেন, আপনি যেদিন প্রথম অথবা নতুন পর্যায়ে গাড়ি চালান তখনই কী একটু স্পিডে চালাতে পেরেছিলেন? ই-কমার্সও ঠিক তেমনই। এমনিতেও আমাদের দেশে ই-কমার্স নতুন না হলেও একেবারে পুরাতনও না। আর কোভিড-১৯ করোনা তো সবার জন্যই নতুন ও ভিন্ন রকম একটা পরিস্থিতি। আমরা ব্যবসায়ীরা বা উদ্যোক্তারা বিভিন্ন রকমের সম্ভাব্য ঝুঁকি নিয়ে বিশ্লেষণ করে ব্যবসা পরিচালনা করি। কিন্তু এমন পরিস্থিতির জন্য কারোরই সেই পূর্বাভাস জানা ছিল না আর তাই প্রস্তুতিও ছিল না। কাজেই বিভিন্ন চাহিদা থেকেই তো এসব সমস্যার উৎপত্তি। সেসব চাহিদার কারণেই আবার এগুলোর সমাধান হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে সরকার শুরু থেকেই ই-কমার্সের গুরুত্ব অনুধাবন করে সময়োপযোগী সিদ্ধান্তই দিচ্ছেন। এটা অব্যাহত থাকবে বলে আমি আশা করি।

অন্যদিকে গ্রাহকদের আরও উন্নত সেবা দিতে ই-কমার্সগুলোর সঙ্গে পণ্য সরবরাহ করা লজিস্টিক পার্টনারদের মধ্যে একটি মেলবন্ধনেরও তাগিদ রয়েছে। ই-কুরিয়ারের প্রতিষ্ঠাতা ও চিফ এক্সিলেন্স অফিসার বিপ্লব ঘোষ রাহুল বলেন, লকডাউন উঠে গেলেও অনলাইন থেকেই কিন্তু বেশিরভাগ ক্রেতা এখনো কেনাকাটা করবেন। কারণ অফলাইনে স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি থেকে যায়। এক্ষেত্রে গ্রাহকদের এ বাড়তি চাহিদা মেটাতে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ও লজিস্টিক পার্টনারদের মধ্যে দারুণ একটি মেলবন্ধন থাকা প্রয়োজন।

এর জন্য লজিস্টিক খাতকেও ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দেন বিপ্লব। তিনি বলেন, অনেক কুরিয়ার কোম্পানিই আছে যারা সঠিক সেবা নিশ্চিতের সক্ষমতা অর্জন না করেই ই-কমার্সগুলো থেকে বেশি বেশি পার্সেল সংগ্রহ করার দিকে বেশি মনযোগী। পরে যখন গ্রাহক তার পণ্য পায় না বা দেরিতে পায় তখন কিন্তু পুরো ই-কমার্স ইকো-সিস্টেমের ওপরই তার একটি নেতিবাচক ধারণা জন্মায়। এর জন্য কুরিয়ার কোম্পানিগুলোকে সঠিকভাবে ও স্বয়ংসম্পূর্ণ লজিস্টিক কোম্পানি হতে হবে। দেখবেন বেশিরভাগ কুরিয়ার কোম্পানিই ডাক বিভাগের থেকে লাইসেন্স নেয়নি অথবা নিলেও তিন বছর পর পর যে তা হালনাগাদ করাতে হয় সেটি করেনি। কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি সংগঠন আছে কুরিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। এ সংগঠনের বেশিরভাগ সদস্য প্রতিষ্ঠানের অবস্থাও এমনই। এদিকে সরকারের নজর এখনও কম কারণ আমরা সংখ্যায় কম। সরকারকেও এদিকে নজর দিতে হবে।

এদিকে ই-কমার্সের ওপর ভর করে ডিজিটাল লেনদেনের মাধ্যমে ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’র দিকে অগ্রসর হওয়া সম্ভব বলে মনে করেন ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার। আর এর জন্য সরকারের কাছ থেকে নীতিগত সহায়তা প্রত্যাশা করেন তিনি।

বাংলানিউজকে শমী কায়সার বলেন, করোনার এসময়ে গ্রাহকদের মধ্যে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে মূল্য পরিশোধের প্রবণতা বেড়েছে। কেউ ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডে, কেউ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আবার কেউ সরাসরি অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করছেন। এটা আমাদের স্বপ্নের ক্যাশলেস সোসাইটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিক। কিন্তু এখানে সরকারের নীতিগত সহায়তা দরকার। কারণ ডিজিটাল পেমেন্টে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মকে ‘করপোরেট ট্যাক্স’ দিতে হয় অথচ এ খাতের বেশিরভাগই ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা। কাজেই করোনার ক্ষতি কাটিয়ে এসব ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রাখতে তাদের জন্য এ ট্যাক্স মওকুফ করা দরকার। ই-ক্যাব সবসময় তার সদস্যদের নীতিগত সহায়তা দিতে কাজ করে যাচ্ছে। আসছে বাজেটে যেন সরকার এ কর মওকুফ করে তার জন্য আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্প্রতি একটি অনলাইন মিটিং করে আবেদন জানিয়েছি।   

বাংলাদেশ সময়:  ০৮২৮ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০২০
এসএইচএস/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।