ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

সিলিকন ভ্যালির বদৌলতে মধ্যপ্রাচ্যে রমরমা দাস ব্যবসা

তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২, ২০১৯
সিলিকন ভ্যালির বদৌলতে মধ্যপ্রাচ্যে রমরমা দাস ব্যবসা অ্যাপে চলছে দাসী কেনাবেচা। ছবি: সংগৃহীত

গুগল, ফেসবুক, অ্যাপল, মাইক্রোসফটের মতো প্রতিষ্ঠানের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির খ্যাতি বিশ্বজোড়া। কিন্তু, নামিদামি এসব প্রতিষ্ঠানের বদৌলতেই মধ্যপ্রাচ্যে চলছে রমরমা দাস ব্যবসা। বিশেষ করে ‘যৌনদাসী’ হিসেবে নারীর কেনাবেচা। যেন মধ্যযুগের বর্বরতা আধুনিক যুগে এসে পেয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির ডিজিটাল রূপ।

সম্প্রতি বিবিসি নিউজ অ্যারাবিক-এর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে দাসীদের হৃদয়বিদারক ও যন্ত্রণার কথা।  

জানা যায়, দাসী হিসেবে এসব নারীদের বিক্রির জন্য দেওয়া হয় চটকদার বিজ্ঞাপন।

সর্বোচ্চ দাম হাঁকিয়ে তাদের কিনে নিতেও আছে প্রতিযোগিতা। একবার টাকা খরচ করে কিনলেও ক্ষতি নেই, চাহিদা পূরণের পর আবার বিক্রি করে উঠিয়ে নেওয়া যাবে সেই বিনিয়োগ। খদ্দের সেজে নারী কেনাবেচার এমনই বাজার প্রত্যক্ষ করেছেন ওয়েন পিনেল ও জেস কেলী। অ্যাপের মাধ্যমে নারীদের বিক্রি করেন এমন ৫৭ জন বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলেন তারা। প্রায় এক ডজনেরও বেশি বিক্রেতার সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করেছেন বলেও জানান প্রতিবেদকরা।

মধ্যপ্রাচ্যের কুয়েত ও সৌদি আরব নারী কেনাবেচার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ বাজার। ফেসবুকের মালিকানাধীন ইনস্টাগ্রাম, অ্যাপলের অ্যাপ স্টোর ও গুগলের প্লে স্টোরে থাকা অ্যাপ দিয়ে বিকিকিনি চলে দাসীদের। কুয়েতে দাসীদের কেনাবেচার জন্য জনপ্রিয় অ্যাপ হচ্ছে ‘ফর সেল’। সৌদিতে আরবে এমনই একটি অ্যাপের নাম ‘হারাজ’। এছাড়া ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে দাসী বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে যাবতীয় যোগাযোগ ও লেনদেন সারা হয় ব্যক্তিগত মেসেজিংয়ের মাধ্যমে। এসব মাধ্যমে দুই থেকে তিন হাজার মার্কিন ডলারে সাধারণ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মতো বেচাকেনা চলে হতভাগ্য নারীদের।  

এক নারীকে একাধিকবার বেচাকেনা হয়।  ছবি: সংগৃহীত

নারীদের শুধু বিক্রি নয়, তাদের ‘বশে’ রাখার কৌশলও শিখিয়ে দেন বিক্রেতারা। তারা জানান, নারীদের এই নরক থেকে বের হওয়ার সব পথ বন্ধ করে দিতে শুরুতেই কেড়ে নেওয়া হয় তাদের পাসপোর্ট ও মোবাইল ফোন। এরপর নিষিদ্ধ করা হয় বাড়ির বাইরে যাওয়া। সামান্য খাবার দিয়ে কোনোমতে বাঁচিয়ে রাখা হয় তাদের। পদবি গৃহকর্মী হলেও মূলত পুরুষদের যৌনদাসী হয়েই থাকতে হয় তাদের।  

গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে এসব নারীদের কে কত দিন না ঘুমিয়ে থাকতে পারে, কে কত কম খাবার খায়, এমনকি কে কোনো প্রতিবাদ করে না, সেসব বিষয় বাড়তি যোগ্যতা আকারে প্রকাশ করা হয়। একদিনও যারা ছুটি চান না বা দিনের ২৪ ঘণ্টাই যাদের দিয়ে কাজ করানো যায়, তাদের দামও বেশ চড়া দরে হাকেন বিক্রেতা। এমন দাস বিক্রিতে কুয়েতের এক পুলিশ কর্মকর্তারও জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে বিবিসির অনুসন্ধানী দল।  

এসব বিষয়ে জাতিসংঘের বিশেষ দূত উর্মিলা ভুলা বিবিসি’কে বলেন, তারা (গুগল, ফেসবুক, অ্যাপল) মূলত অনলাইন দাসী বাজারকে প্রমোট করছে। এমন অ্যাপ যদি তাদের প্ল্যাটফর্মে থাকে, তাহলে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। এগুলো আধুনিক দাস প্রথার নমুনা।  

নামে গৃহকর্মী হলেও থাকতে হয় যৌনদাসী হিসেবে।  ছবি: সংগৃহীত

এদিকে, নিজেদের অ্যালগরিদম থেকে দাসী বা নারী বিক্রির হ্যাশট্যাগ মুছে দেওয়ার কথা জানিয়েছে ফেসবুক। আর নিজেদের অ্যাপ স্টোরে এসবের সঙ্গে জড়িত অ্যাপস খুঁজে বের করে সরিয়ে ফেলার অঙ্গীকার করেছে গুগল ও অ্যাপল। কুয়েত সরকার এর তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বলে বিবিসির ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।  

প্রতি বছর গৃহকর্মী হিসেবে অসংখ্য নারী পাচার করা হয় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। বিশ্বের বিভিন্ন অনুন্নত দেশ অথবা স্বল্পোন্নত দেশের আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল পরিবার থেকে মেয়েদের গৃহকর্মীর কাজের কথা বলে নিয়ে আসা হয়। একবার মধ্যপ্রাচ্যে এসে কারও কাছে বিক্রি হয়ে যাওয়া মাত্রই হতভাগা সেসব নারীদের সামনে ফুটে ওঠে দুর্বিসহ জীবনের চিত্র।

বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০১৯ 
এসএইচএস/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।