ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

গুগল অ্যালো বনাম হোয়াটসঅ্যাপ, কে এগিয়ে?

তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৩ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৭
গুগল অ্যালো বনাম হোয়াটসঅ্যাপ, কে এগিয়ে? গুগল অ্যালো বনাম হোয়াটসঅ্যাপ

ঢাকা: স্মার্টফোন ব্যবহারকারী মাত্রই হোয়াটসঅ্যাপের সঙ্গে পরিচিত। সেই তুলনায় একেবারে প্রযুক্তিপ্রেমী ছাড়া বাকিদের কাছে ‘গুগল অ্যালো’ একটু অপরিচিতই ঠেকবে। 

এর যৌক্তিক কারণও রয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপের যাত্রা শুরু ২০০৯ সালে, গুগল অ্যালোর ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬।

২০১৫ সালে হোয়াটসঅ্যাপ অধিগ্রহণ করে ফেসবুক। এরপর লড়াই এসে দাঁড়ায় ফেসবুক বনাম গুগলে। মেসেজিং অ্যাপ হিসেবে হোয়াটসঅ্যাপের জনপ্রিয়তাকে টেক্কা দিতে গুগল নিয়ে আসে অ্যালো।  

প্লে স্টোর থেকে এখন পর্যন্ত হোয়াটসঅ্যাপ ডাউনলোড হয়েছে ১শ কোটির বেশি, সেখানে অ্যালো সবে এক কোটি ছাড়িয়েছে। এসব সংখ্যার হিসেবে হোয়াটসঅ্যাপ অনেক এগিয়ে। এদের মূল পার্থক্য অন্য জায়গায়- ফিচারে।

প্রথমেই বলে নেওয়া যাক মিলগুলো। প্রধান মিল, দু’টিই মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশন, সংক্ষেপে যাকে বলে অ্যাপ। দুই অ্যাপেই মেসেজিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সব সুবিধাই রয়েছে। ছবি, অডিও, ভিডিও, ডক্যুমেন্ট, ইমোজি, লোকেশন, ক্যামেরা, টেমপ্লেট, গ্রুপ চ্যাটিং, চ্যাট আর্কাইভ প্রভৃতি সব ধরনের সুবিধা মিলবে দু’টিতেই।

এবার আসা যাক পার্থক্যে। দেখে নেওয়া যাক অ্যালোর এমন কিছু ফিচার, য‍া হোয়াটসঅ্যাপে নেই:

গুগল সহকারী
যারা ভুলো মনের তাদের জন্য এ ফিচারটির জুড়ি নেই। যারা ভুলো মনের নন কিন্তু কাজপ্রিয়, রোজ হাজারটা শিডিউল ঠিক রাখতে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন তাদের জন্য ভার্চুয়াল সহকারী হিসেবে কাজ করবে এটি। সহকারী মানে আক্ষরিক অর্থেই সহকারী!
ভোরে ট্রেন ধরতে হবে, কোনো চাপ নেই— ‍তুলে দেবে গুগল সহকারী। তাকে মেসেজ করে রাখবেন, ঠিক সময়ে অ্যালার্মসহ ডেকে দেবে। এজন্য আলাদা করে অ্যালার্ম সেট করতে হবে না।
কোনো বিষয়ে কোনো তথ্য চাই, জিজ্ঞেস করুন, বলে দেবে সঙ্গে সঙ্গে। টেক্সট ছাড়াও ভয়েস কন্টোলে সহকারীকে যখন খুশি তখন হুকুম করতে পারবেন। এই ফিচারের মাধ্যমে ব্যবহারকারী রেস্তোরাঁ বুকিং, ছবি খোঁজা এবং আবহাওয়া বার্তার মতো বিষয়গুলো ভয়েস কমান্ড দিয়ে পরিচালনা করতে পারবেন।
এমন কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন কোনো ভার্চুয়াল সহকারী নেই হোয়াটসঅ্যাপে।

স্মার্ট রিপ্লে ফিচার 
অ্যাপ্লিকেশনটিতে রয়েছে আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে যেকোনো প্রশ্নের স্মার্ট রিপ্লে দেওয়ার সুবিধা। কোনো বন্ধু বার্তা পাঠালে সেটির উত্তর কী হতে পারে এমন সাজেশন প্রদর্শিত হয় ফিচারটিতে। তাতে ক্লিক করলেই রিপ্লে চলে যাবে। ব্যবহারকারীকে কষ্ট করে টাইপ করতে হবে না। এই ফিচারটিও হোয়াটসঅ্যাপে নেই।

প্রাইভেট মোড
অনেক সময় মোবাইল হারিয়ে যায় অন্য কারও হাতে পড়ে। তখন গোপন বা ব্যক্তিগত কোনো বার্তা লকস্ক্রিনে প্রদর্শিত হয়ে গেলে বিপাকে পড়তে হয়। এটি এড়াতে গুগল অ্যালোতে রয়েছে প্রাইভেট মোড। বার্তা আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে এই মুডে বার্তা এলে তা লক স্ক্রিনে প্রদর্শিত হবে না।

ছবি বোঝার ক্ষমতা 
কেউ কোনো ছবি পাঠালে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছবিটি কিসের তা বলে দেবে অ্যালো। যদি কোনো ছবি দেখে ব্যবহাকারী বুঝতে না পারেন তাহলে অ্যালো ব্যবহার করে গুগল সহকারীকে পাঠালেই তা জেনে নেওয়া যাবে। যা হোয়াটসঅ্যাপে অনুপস্থিত।

তথ্যের সুরক্ষা
হোয়াটসঅ্যাপের মতো 'এন্ড-টু-এন্ড' এনক্রিপশন রাখা হয়নি এতে। এর পরিবর্তে 'ইনকগনিটো' মোড রয়েছে অ্যাপটিতে। এই মোডে মেসেজটি কতো সময় পর মুছে যাবে সেটি ঠিক করে দেওয়া যাবে।

হুইসপার শাউট
কোনো বিষয়ে চরম রেগে আছেন কারও ওপর, টেক্সটে সেটি প্রকাশ করা যাবে এতে। ধরেন কোনো একটি কথা উচ্চ বা নিচু স্বরে বলতে চান— সম্ভব এই ফিচারের মাধ্যমে। সেক্ষেত্রে টেক্সট ছোট হওয়া মানে হুইসপার মানে ফিসফিস কথা এবং টেক্সট ছোট হওয়া মানে শাউট। এটিও নেই হোয়াটসঅ্যাপে।  

এবার আসা যাক অডিও-ভিডিও কলিং নিয়ে অ্যালোর সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপের তুলনামূলক বিচারে।  

মেসেজিং দিয়ে শুরু করলেও হোয়াটসঅ্যাপ ধীরে ধীরে অডিও এবং ভিডিও কলিং যোগ করে। এ দু’টি বিষয় এতোদিন সরাসরি অ্যালো-তে ছিলো না। চলতি মাসেই অ্যালো-তে যোগ করেছে গুগল।

অডিও-ভিডিও কলিংয়ের জন্য গুগল ডুয়ো নামে আলাদা একটি অ্যাপ রয়েছে। একই রকম সুবিধা রয়েছে গুগল হ্যাংআউটেও। তবে হ্যাংআউটের চেয়ে অল্প সময়ের মধ্যে ডুয়ো বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।  

অ্যালো ব্যবহারকারীদের জন্য সম্প্রতি ভিডিও কলিংয়ের জন্য ‘ডুয়ো’ যোগ করেছে গুগল। অর্থাৎ ব্যবহারকারীদের অডিও-ভিডিও কল করতে হবে ডুয়োর মাধ্যমে। অ্যালোর মেসেজিং বারে থাকা ডুয়ো আইকনটি ক্লিক করলেই অডিও-ভিডিও কল করা যাবে। এজন্য একটি শর্ত, যাকে কল করবেন তার মোবাইলেও ডুয়ো ইনস্টল থাকতে হবে।  

স্মার্টফোনে অ্যালো-ডুয়ো থাকাকে গুগল বলছে, দুই পায়েই জুতো থাকার মতো।  

ডুয়োর আরও একটি সুবিধা হলো, দুর্বল ইন্টারনেটেও পরিষ্কার-ঝকঝকে অডিও-ভিডিও কল করা যায়। যেটি অ্যালো-তে যোগ হওয়ায় হয়েছে সোনায় সোহাগা।  

জনতা জনার্দন, অর্থাৎ ব্যবহারকারীরাই সব। তারাই বলবে কে এগিয়ে!

তবে প্রযুক্তিপ্রেমীদের বক্তব্য, ফিচার সুবিধা বিবেচনায় হোয়াটসঅ্যাপের চেয়ে অনেক এগিয়ে অ্যালো।  

এখন দেখার বিষয়, কে জেতে— জনপ্রিয়তা নাকি কার্যকারিতা!

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৭
এসএনএস

     
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।