ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

কৃষিখাতে ইন্টারনেট অব থিংস: স্মার্ট ফার্মিং - ২

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৩ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৭
কৃষিখাতে ইন্টারনেট অব থিংস: স্মার্ট ফার্মিং - ২ কৃষিখাতে ইন্টারনেট

কৃষিক্ষেত্র দেশের অন্যতম বৃহৎ কর্মসংস্থান খাত। ২০১৬ সাল পর্যন্ত আমাদের দেশের শ্রমিকদের ৪৭% কৃষিকাজে নিয়োজিত ছিলেন এবং জিডিপিতে এই খাত ১৬ শতাংশ অবদান রেখেছে। ২০০৯ সালে দেশের কৃষিখাত থেকে জিডিপি ছিল প্রায় ৭৭২ কোটি টাকা, যা ২০১৬ সালে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৯৯২ কোটি টাকা।

কৃষিক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করেছে গোটা বিশ্ব। বিশ্বব্যাংকের একটি রিপোর্ট অনুসারে বাংলাদেশের দারিদ্র ২০০০ সালে ৪৯.২% ছিল যা কমে ২০১০ সালে ৩১.৫% তে নেমে আসে।

এই উন্নয়নে বড় অবদান রেখেছে দেশের কৃষিক্ষেত্রের সফলতা। তবে এই উন্নয়নের পদযাত্রায় সম্ভাবনার সাথে সাথে চ্যালেঞ্জও মোকাবেলা করতে হবে। জনসংখ্যা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ এদের মাঝে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে কৃষি জমির পরিমাণ যেমন কমছে, তেমনই খাবারের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের দেশে অধিক প্রভাব ফেলে, যার ফলে বন্যা, খরা এবং লবণাক্ততার মত সমস্যা দেখা যায়। এই সমস্যাগুলো আমাদের কৃষিক্ষেত্রের সাথে সাথে দেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নেও বাধা হয়ে দাঁড়াবে। তাই বাংলাদেশের অন্যতম বড় এই খাতে প্রয়োজন ইন্টারনেট অব থিংসের মত টেকসই এবং উন্নত প্রযুক্তি।
ইন্টারনেট অব থিংসের ফলে কৃষকরা তাদের কৃষিজমি, ফসল এবং পরিবেশ সম্পর্কে নতুনভাবে তথ্য গ্রহণ করতে পারবে। ইন্টারনেট অব থিংস (IoT) এর সাথে কৃষির সমন্বয় ঘটিয়ে ফলন বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়েও ফসল বা খামারের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমানো সম্ভব। কৃষকরা ইন্টারনেট অব থিংসের স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহার করে তাদের কৃষি জমির সেচ ব্যবস্থা আধুনিক করে ফেলতে পারবে –ফসলের চাহিদা অনুযায়ী সঠিক পরিমাণ পানি এবং সার সরবরাহ করা হবে। পরিবেশের পরিবর্তন আগে থেকেই কৃষকরা স্মার্ট ডিভাইসের মাধ্যমে জানতে পারবেন, যার ফলে তারা ঝড়, বন্যা বা খরার মত দুর্যোগ আসার আগেই যতটুকু সম্ভব ফসল রক্ষা করতে পারবেন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, মালয়েশিয়া, চীন এবং ভারতের মত দেশগুলো কৃষিক্ষেত্রে ইন্টারনেট অব থিংসের মত অত্যাধুনিক প্রযুক্তির গুরুত্ব বুঝতে পেরে এর ব্যবহার শুরু করে দিয়েছে। ইন্টারনেট অব থিংসের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক শস্য পর্যবেক্ষণে রাখা যায়

ইন্টারনেট অব থিংস ব্যবহার করে উন্নত দেশগুলো তাদের কৃষিক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন এনেছে। কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত কিছু স্মার্ট ডিভাইস নিয়ে আলোচনা করা হলো -

ওপেনআইওটি’স ফেনোনেট প্রজেক্ট (OPENIOT’S PHENONET PROJECT): এই প্রজেক্টে বিভিন্ন জাতের গমের মূল্যায়ন করা হয়। মাটির তাপমাত্রা, বাতাসের আদ্রতা এবং তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য সেন্সর ব্যবহার করা হয়। এই সেন্সরগুলো থেকে প্রাপ্ত ডাটা দিয়ে কৃষকরা ফসল সংগ্রহ করার জন্য সঠিক সময় বুঝতে পারবেন, উদ্ভিদের স্বাস্থ্য উন্নত করতে পারবেন, সেচ পরিকল্পনা করতে পারবেন এবং খরার মত দুর্যোগের খবর আগে থেকেই জানতে পারবেন।

শুধু তাই নয়, উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা কয়েক বছরের ডাটা বিশ্লেষণ করে আরো উন্নত প্রজাতির গম উৎপাদন করতে সক্ষম হবেন যা থেকে অধিক ফলন পাওয়া যাবে।

ক্লাজ ইকুইপমেন্ট (CLAAS’S EQUIPMENT): কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্র তৈরি করার জন্য বিশ্ববিখ্যাত জার্মান কোম্পানি ক্লাজ (CLAAS) । কৃষকরা ক্লাজের ইন্টারনেট অব থিংস সমন্বিত যন্ত্রপাতি অটোপাইলটে ব্যবহার করতে পারবেন, উৎপাদন বৃদ্ধি এবং শস্যের ক্ষতি কমিয়ে আনার জন্য বিভিন্ন পরামর্শ পাবেন এবং যন্ত্রের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারবেন। ক্লাজের সাথে একজোট হয়ে কাজ করছে 365FarmNet এবং তারা এমন স্মার্ট ডিভাইস তৈরি করছেন যা কৃষকদের মোবাইল দ্বারা পরিচালিত হবে। কৃষিকাজে ব্যবহৃত ক্লাজের স্মার্ট ফোরেজ হার্ভেস্টার

ক্লিনগ্রো (CleanGrow): আয়ারল্যান্ড ভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠান কার্বন ন্যানোটিউবভিত্তিক এক ধরনের সেন্সর তৈরি করেছেন যার মাধ্যমে জমির ফসলের মাঝে উপস্থিত পুষ্টি গুণ এক মিনিটের মধ্যেই জানা সম্ভব। কৃষকরা সেই ফলাফল মোবাইলের মাধ্যমে দেখতে পারবেন।
    ক্লিনগ্রো এর সেন্সর যার মাধ্যমে শস্যের পুষ্টিগুন জানা যায় মোবাইলে
ইন্টারনেট অব থিংস ডিভাইস তৈরি করার জন্য বেশ কিছু ওপেন-সোর্স প্লাটফর্ম রয়েছে। এদের মাঝে Kaa, Thinger, Thingsboard, OpenIoT অন্যতম। এসকল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে এমন ডিভাইস তৈরি করা যায় যার মাধ্যমে মাটি এবং ফসলের সার্বক্ষণিক মনিটরিং ব্যবস্থা থেকে শুরু করে গবাদি পশুর যত্ন নেওয়া, বিদ্যুৎ ও পানির খরচ কমানোর ব্যবস্থা তৈরি করা, দূর থেকে ফসল এবং কৃষিকাজে নিয়োজিত যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ করাসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করা সম্ভব।

ড. সাজ্জাদ হোসেনপ্রফেসর ড. সাজ্জাদ হোসেন: ডিপার্টমেন্ট অব কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ সহযোগিতায়: মোঃ শাকিফ ফেরদৌস এবং খায়রুন নাহার


বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।