ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

বিশ্বজুড়ে সাইবার হামলা: কতটুকু প্রস্তুত বাংলাদেশ?

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১০ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৭
বিশ্বজুড়ে সাইবার হামলা: কতটুকু প্রস্তুত বাংলাদেশ? প্রতীকী ছবি

ঢাকা: প্রায় গোটা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিলো হ্যাকার চক্র। তাদের সাইবার হামলার শিকার হলো ৯৯টি দেশ। আক্রান্ত দেশের স্বাস্থ্য ও টেলিকম খাতসহ ব্যবসায়িক অঙ্গগুলোতে আক্রমণের ফলে সেবা বিঘ্নিত হয়। তবে বড় ধরনের আক্রমণের শিকার হয়নি বাংলাদেশ।

সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি খাতগুলো আক্রমণের হাত থেকে বেঁচে গেছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এই যাত্রায় রক্ষা পেলেও ডিজিটাল বাংলাদেশের সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন তারা।

 
 
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাইবার আক্রমণের হাত থেকে রক্ষায় নিয়মিত প্রশিক্ষণ, পাসওয়ার্ড সুরক্ষিত রাখা, আপডেট সফটওয়্যার ব্যবহার করা ও পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার পরিহার করতে হবে। পাশাপাশি কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সিস্টেম পরিচালনার জন্য একটি নীতিমালা দরকার এবং সর্বাপরি বাড়াতে হবে সচেতনতা।  
 
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হামলা হলেও বাংলাদেশের জাতীয় ডেটা সেন্টারসহ সরকারি ওয়েবসাইটগুলো নিরাপদে রয়েছে বলে জানিয়েছে ন্যাশনাল ডেটা সেন্টার।
 
ডেটা সেন্টারের পরিচালক তারেক বরকতউল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, আক্রান্ত দেশগুলোতে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে সাইবার হামলা হয়েছে।  
 
তিনি বলেন, আমাদের সরকারি সেবায় অপারেটিং সিস্টেমে উইন্ডোজের পরিবর্তে ইউনিক লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হচ্ছে।  
 
কিছু ক্ষেত্রে আক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে ন্যাশনাল ডেটা সেন্টারের পরিচালক বলেন, উইন্ডোজ ইউজার যারা তারা আপডেট বন্ধ ও পাইরেটেড সিস্টেম ব্যবহার করেছিল।  
 
ন্যাশনাল ডেটা সেন্টারের পরিচালক তারেক বরকতউল্লাহ বলেন, গোটা বিশ্বে আক্রমণে ব্যবহার করা এ ধরনের ম্যালওয়ার (ভাইরাস) থেকে রক্ষা পেতে এবং সক্ষমতা তৈরি করতে লিনাক্সের দিকে যেতে হবে। লিনাক্স ব্যবহারে আমাদের সক্ষমতা তৈরি হবে এবং নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে। আর উইন্ডোজ ব্যবহার করলে আপডেট অপশন চালু রাখতে হবে।
   
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিনিয়ত সাইবার আক্রমণ আসবে। হামলা মোকাবেলায় আমাদের শিখতে হবে, প্রশিক্ষণ নিতে হবে।  
 
সাইবার আক্রমণ রোধে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট পরিচালনার জন্য একটি নীতিমালা করার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, সিস্টেম যেন আক্রমণ না হয় সেজন্য সচেতন থাকতে হবে।  
 
শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার, একজনের কম্পিউটার অন্যজনকে ব্যবহার করতে না দেওয়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে বলেও মনে করেন বুয়েটের এই অধ্যাপক।
 
সাইবার আক্রমণ বিষয়ে বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একটি শক্তিশালী টিম রয়েছে জানিয়ে ড. কায়কোবাদ প্রয়োজনে ওই টিমকে কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন সরকারকে।

বড় কোনো আক্রমণের শিকার না হলেও বাংলাদেশ ছোট ছোট কিছু আক্রমণের শিকার হয়েছে বলে জানান আইসিটি প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাট হোমের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা সুমন আহমেদ সাবির।
 
তিনি বলেন, আমাদের প্রতিনিয়ত প্রযুক্তি-নির্ভরতা বাড়ছে। সেজন্যই সাইবার হামলা মোকাবেলায় প্রস্তুতি থাকতে হবে। এজন্য একটি ন্যূনতম স্ট্যান্ডার্ড থাকা উচিত।  
 
পাশাপাশি যারা আইপি (ইন্টারনেট প্রোভাইডার) নিয়ে কাজ করেন তাদের গ্রাহকদের প্রতিনিয়ত সফটওয়্যার আপডেট থাকতে হবে।  
 
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, দিন দিন সাইবার হামলার হার বাড়ছে। যেভাবে হামলা হচ্ছে তাতে আমরা খুব একটা ভাল অবস্থানে আছি বলে মনে হয় না।  
 
তিনি বলেন, আমাদের গ্রাহকরা পাসওয়ার্ড নিয়ে সচেতন নন। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোও সহসা পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে না।  
 
সাইবার হামলার বিষয়টি মাথায় রেখে সচেতনতা বাড়াতে গ্রাহকদের সতর্ক করে নিরাপত্তা কমিটি থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে আইএসপিএবি সাধারণ সম্পাদক বলেন, সচেতনতা তৈরিতে সরকার থেকে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।  
 
সচেতনতা ও প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশি বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন নেই দাবি করে তিনি বলেন, আমাদের দেশেই অনেক বিশেষজ্ঞ আছে। তাদের মেধা ব্যবহার করতে হবে।  
 
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ উন্নত সারির দেশগুলো সাইবার আক্রমণের শিকার হওয়ার বিষয়ে প্রযুক্তিবিদ মোস্তফা জব্বার বাংলানিউজকে বলেন, তাদের তুলনায় আমরা অনেক বেশি অরক্ষিত। আমাদের ব্যাংকের সিস্টেম হ্যাক হয়, বুথ হ্যাক হয়, সফটওয়্যার হ্যাক হয়।  
 
সারা বিশ্বে এই সাইবার হামলা বাংলাদেশের জন্য বড় সতর্কতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আক্রান্ত হলে তা মোকাবেলার জন্য পর্যাপ্ত সচেতনতা নেই।  
 
সাইবার হামলা মোকাবেলায় বিশেষ সতর্কতা থাকা উচিত জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে এ বিষয়ে দিক-নির্দেশনা থাকতে হবে।  
 
দেশের প্রযুক্তি খাতের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসে (বেসিস) সভাপতি মোস্তফা জব্বার আরও বলেন, সাইবার হামলা মোকাবেলায় বিশেষজ্ঞের অভাব আছে বলে মনে হয় না। আমরা বেসিসের পক্ষ থেকে সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত। আমরা চাই সাইবার জগতে নিরাপত্তায় ঢাকা থাক বাংলাদেশ।  
 
বাংলাদেশ সময়: ২১০৬ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৭
এমআইএইচ/এইচএ/

আরও পড়ুন
** ৯৯ দেশে একযোগে সাইবার হামলা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।