ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

রিমোট নিয়ন্ত্রিত প্লেন উড়িয়ে তাক লাগাল হাওরের স্কুলছাত্র আনিসুল

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২৪
রিমোট নিয়ন্ত্রিত প্লেন উড়িয়ে তাক লাগাল হাওরের স্কুলছাত্র আনিসুল নিজের বানানো ছোট্ট প্লেন উড়িয়ে দিচ্ছে কিশোর আনিসুল হক।

সিলেট: রিমোট কন্ট্রোলড (নিয়ন্ত্রিত) প্লেন বা উড়োজাহাজ তৈরি করে আকাশে উড়িয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সুনামগঞ্জের হাওর পাড়ের স্কুলছাত্র আনিসুল হক। পাঁচ ফুট লম্বা ও সাড়ে ৬ ইঞ্চি চওড়া এক কেজি ৮০০ গ্রাম ওজনের ছোট্ট প্লেনটি আকাশে ওড়ার পর থেকে উচ্ছ্বাসে ভাসছেন আনিসুলের এলাকার বাসিন্দারা।

জানা গেছে, এর আগে একাধিকবার প্লেন ওড়ানোর চেষ্টা করে আনিসুল। কিন্তু সেসব চেষ্টা বিফল হয়। তবে তাতে হাল ছাড়েনি এই কিশোর। শেষ পর্যন্ত গত ৩ জানুয়ারি সফলভাবে আকাশে ওড়ে আনিসুলের রিমোট কন্ট্রোলড প্লেন।  

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার ৩নং দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের হাঁপানিয়া গ্রামের বাসিন্দা আনিসুলের এমন সাফল্যের খবর ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। অনেকে তার তৈরি ছোট্ট প্লেনটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন।

তার সাফল্যে আনন্দিত পরিবার-পরিজন ও এলাকাবাসী। প্রতিভাবান এই কিশোরের ভূয়সী প্রশংসায় মেতেছেন জেলার শিক্ষানুরাগী থেকে শুরু করে সচেতন মহলের সবাই।  

হাঁপানিয়া গ্রামের আহাদ মিয়ার ছেলে আনিসুল স্থানীয় হাজী এম এ জাহের উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

স্থানীয়রা জানান, দরিদ্র পরিবারের সন্তান হলেও আনিসুল তার প্রতিভার ঝলক দেখিয়েছে। আর্থিক সংকট থাকলেও প্রবল ইচ্ছা তাকে দমাতে পারেনি। তার প্রচেষ্টা অবশেষে সফল হয়েছে। আকাশে উড়েছে আনিসুলের তৈরি প্লেন।

স্থানীয় বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, নিতান্তই দরিদ্র পরিবারের সন্তান আনিসুল। সরকারিভাবে সহযোগিতা করলে এই মেধাবী শিক্ষার্থী তার মেধা খাটিয়ে প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভবিষ্যতে ভালো কিছু করতে পারবে। দেশের উন্নয়নে নিজেকে কাজে লাগাতে পারবে।

আনিসুল হক বলে, ‘২০২৩ সালে কর্কশিট দিয়ে প্লেন তৈরি শুরু করছিলাম। কিন্তু সফল হতে পারিনি। এরপর চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি এই ছোট্ট প্লেনটি তৈরি করে আকাশে ওড়ানোর চেষ্টা করি। প্লেনটি দেড় বছর সময় লেগেছে আকাশে ওড়াতে। তৃতীয়বারের চেষ্টায় আকাশে উড়িয়েছি। এতে খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। টাকার যোগান দিয়েছেন আমার বড় ভাইয়েরা। ’

ইউউটিউবের ভিডিও থেকে দেখে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে জানিয়ে আনিসুল হক বলে, ‘ঢাকায় গিয়েছিলাম জিনিসপত্র দেখতে। পরে টাকা জোগাড় করে অনলাইনে নিজ বাড়িতে জিনিস পত্র আনি। ’

আনিসুল হক জানায়, তার আবিষ্কৃত ছোট্ট প্লেনটির ওজন এক কেজি ৮০০ গ্রাম, লম্বা ৫ ফুট এবং চওড়া সাড়ে ৬ ইঞ্চি। প্লেনটিতে দুটি ব্রাশলেস ডিসি মোটর ব্যবহার করা হয়েছে। মোটরের স্পিড নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আরও দুটি এএসসি ৩০ এমপিয়ার ইলেকট্রিক সারভো মোটর যোগ করা হয়। সংযোজন করা হয়েছে একটি প্লাইস্কাই রিমোট। প্লেনটি এক কিলোমিটারের বেশি রেঞ্জ পর্যন্ত আকাশে উড়তে পারে। তবে প্রযুক্তি ব্যবহার করলে রেঞ্জ আরও বাড়ানো সম্ভব।

ক্ষুদে উদ্ভাবক আনিসুল হকের দাবি, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমেরিকা ও চীনের মত উন্নত প্রযুক্তির মনুষ্যবিহীন প্লেন, ড্রোন ও যান বানাতে পারবে সে।

নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়েও আনিসুল হক পড়াশোনার পাশাপাশি উদ্ভাবনী কাজ করেছে, যা সত্যিই প্রশংসার বলে মনে করেন তার বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

এম এ জাহের উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম মোর্শেদ বলেন, সে মেধাবী ছেলে। সে একটি প্লেন বানিয়েছে। আমিও তাকে সব সময় সাহস দিয়েছি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ আবিষ্কার দেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। হাওর এলাকা থেকে আরও মেধাবী শিক্ষার্থী এ ধরনের উদ্ভাবনে সাহস পাবে। ।

আনিসুল হক বড় ভাই মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, তার মধ্যে এই উদ্ভাবনী কার্যক্রম দেখে যখন যা প্রয়োজন আমরা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমরা গরিব, এখন সরকারি সহায়তা পেলে সে আরও ভালো কিছু করতে পারবে আশা করি।

আনিসুল হকের মা জাহানারা বেগম বলেন, আমার ছয় ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে আনিসুল সবার ছোট। সে ছোট থেকে বিভিন্ন কর্কশিট দিয়ে প্লেন বানানোর চেষ্টা করে। তার এই উৎসাহ দেখে সাহস দেই, যেন তার ইচ্ছা বাস্তবে রূপ নেয়। এ উদ্ভাবনে আমরা অভিভূত। এ উদ্ভাবন যাতে দেশের কাজে লাগে, সেজন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার খুব প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২৪
এনইউ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।