ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প

দেশি তাঁতশিল্প টিকিয়ে রেখেছেন ‘তাঁতকল গ্রামের’ শিল্পীরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭
দেশি তাঁতশিল্প টিকিয়ে রেখেছেন ‘তাঁতকল গ্রামের’ শিল্পীরা তাঁতকলে কাপড় বুনছেন কলেজ শিক্ষার্থী শাহনাজ শিল্পী। ছবি: বাংলানিউজ

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ): জীবনযুদ্ধে পারিবারিক তাঁত বুননের পেশাকেই বেছে নিয়েছেন কলেজ শিক্ষার্থী শাহনাজ শিল্পী (১৮)। লেখাপড়ার পাশাপাশি রাত-দিন হাতেবোনা তাঁতকলে কাপড় বুনছেন তিনি।

তিন বোন, এক ভাইসহ বাবা-মায়ের বড় পরিবারে তার এ সহযোগিতা সচ্ছলতাও এনেছে কিছুটা।

দেশি তাঁতের শাড়ি, জামদানি ও চাদরের কদর এখনও রয়েছে।

তবে কালের বিবর্তনে অনেকটাই হারিয়ে গেছে হাতেবোনা তাঁতকলগুলো।

তারপরও তাঁতশিল্পের ঐতিহ্য এখনও টিকিয়ে রেখেছেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার মুড়াপাড়া ইউনিয়নের মাছিমপুরের তাঁতশিল্পী-কারিগর-ব্যবসায়ীরা। তাদেরই একজন এলাকার হারুন অর রশিদের মেয়ে শাহনাজ শিল্পী। তিনি স্থানীয় মুড়াপাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের এইচএসসি ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী।

সরকারিভাবে বিনা সুদে পুঁজির ব্যবস্থা থাকলে তাঁতকল ও কাপড়ের উৎপাদন বাড়িয়ে দেশি তাঁতবস্ত্রকে আরও জনপ্রিয় করতে পারবেন বলে মনে করছেন শাহনাজ শিল্পীসহ এখানকার ৩০টি তাঁতশিল্পী পরিবারের সদস্যরা।      

সরেজমিনে মাছিমপুরে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামটির বাসিন্দাদের প্রধান পেশা তাঁত বুনন। ৩০টি পরিবারের প্রত্যেকের বাড়িতেই ২টি থেকে ১০টি করে তাঁতকল রয়েছে। সব মিলিয়ে শতাধিক কল থাকায় এটি ‘তাঁতকল গ্রাম’ নামেই বেশি পরিচিত। পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও বেতনভূক্ত তাঁতশ্রমিকরা কলগুলো চালিয়ে শাড়ি, জামদানি ও চাদর উৎপাদন করেন। সেগুলো ভুলতার গাউছিয়া, নরসিংদীর বাবুরহাট, তারাব জামদানিপল্লী ও ডেমরা পাইকারি বাজারে বিক্রি করেন তারা। এরপর ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে।
 
তাঁত ব্যবসায়ী মজিবুর, আমজাদ, হবিবুর ও খোকন মিয়াসহ আরো অনেকেই জানান, দেশি তাঁতবস্ত্রের বাজার মন্দা হওয়ায় ৯০ শতাংশ তাঁতই বন্ধের পথে। কেউ কেউ এ ব্যবসা গুটিয়ে অন্য ব্যবসায় ঝুঁকছেন। ফলে উপজেলার প্রায় ৫ হাজার তাঁতশিল্পীর বেকার হয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে নানা সমস্যা-সংকটেও কাপড় তৈরি করে কোনোমতে এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখছেন তাদের মতো কয়েকজন।

তাঁত ব্যবসায়ী আব্দুল মতিন মিয়া বলেন, তাঁতশিল্পের উন্নয়নে ১৯৮৩ সাল থেকে ব্যাংকঋণ সুবিধা দিয়ে আসছে সরকার। কিন্তু লোকসানে পড়ায় অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন অনেকে। এসব দেশি তাঁত ব্যবসায়ী এখনও ঋণের বোঝা নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

কলেজ শিক্ষার্থী শাহনাজ শিল্পী বাংলানিউজকে জানান, বাবা হারুন অর রশিদ ও মা রুমা বেগম তাঁত বুনন ও কৃষিকাজ করে অতিকষ্টে বড় বোন হ্যাপিকে বিয়ে দিয়েছেন। এখন তাকেসহ ছোট বোন নাজমীন ও একমাত্র ভাই সোহাগকে লেখাপড়া করিয়ে আসছেন। নিজেদের পড়ার খরচ যোগাতে ও বাবা-মাকে সহযোগিতা করতেই ছোট বোনকে নিয়ে পারিবারিক তাঁত বুননের পেশাতেই নেমেছেন তিনি।

পরিবারটি জানায়, তাদের হাতেবোনা তাঁতকল থেকে দিনে ২ থেকে ৪টি কাপড় তৈরি হয়। ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা ব্যয় করে বোনা এক একটি কাপড় ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারেন। এ থেকে তাদের মাসিক আয় প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা।

ভবিষ্যতে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্নপূরণে এগিয়ে চলা শিল্পী আরও বলেন, ছোট থেকে বাবার কাছেই এ কাজ শিখেছেন তারা ভাই-বোনেরা। সংসারের হাল ধরতে এ পেশায় নেমে কিছুটা সচ্ছলতাও পেয়েছেন। তবে সরকারিভাবে বিনা সুদে পুঁজির ব্যবস্থা থাকলে তাঁতকল আরো বাড়াতে পারতেন।  

লেখক, কলামিস্ট ও গবেষক লায়ন মীর আব্দুল আলীম বলেন, বাপ-দাদার আমলের দেশি তাঁতশিল্পকে এখনও ধরে রেখেছেন অনেকে। সরকার যদি তাদেরকে সহজ শর্তে ঋণসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও সহযোগিতা দেয়, তাহলে দেশি শিল্প আবারও উঠে দাড়াবে। শাহনাজ শিল্পীর মতো অনেক শিক্ষার্থী দেশি তাঁতশিল্পকে টিকিয়ে রেখে বাবা-মাকে সহযোগিতা করে আসছেন। তারাই আগামী প্রজন্মের জন্য মডেল হয়ে থাকবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।