ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প

হাজারীবাগে নিশ্চল ট্যানারি মেশিন

অন্তু মুজাহিদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫১ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০১৭
হাজারীবাগে নিশ্চল ট্যানারি মেশিন হাজারীবাগে নিশ্চল ট্যানারি মেশিন/ছবি: সুমন শেখ

ঢাকা: কর্মব্যস্ততা হারিয়ে প্রাণচাঞ্চল্যহীন হয়ে পড়েছে চামড়া শিল্পনগরী হাজারীবাগ। বন্ধ হয়ে যাওয়া ট্যানারি কারখানার প্রবেশ মুখে আছে দারোয়ান, নিশ্চল-নিস্তব্ধ চামড়া পক্রিয়াকরণে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি।

বেশকিছু কারখানা হাজারীবাগ থেকে চামড়া শিল্পনগরী সাভারে স্থানান্তরিত হলেও সেখানে গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করে আসছেন ট্যানারি মালিকরা।

সোমবার (৩ জুলাই) হাজারীবাগ ট্যানারি এলাকার এমবি ট্যানারি, বে ট্যানারিজ লিমিটেড, সরদার লেদার কর্পোরেশনসহ বেশ কয়েকটি ট্যানারি কারখানা ঘুরে দেখা মেশিনগুলো অকেজো হয়ে পড়ে আছে।

এমবি ট্যানারির শ্রমিক রমজান বাংলানিউজকে বলেন, হাজারীবাগ এলাকার সব ট্যানারি কারখানা বন্ধ রয়েছে, কোনো কার্যক্রম নেই। কারখানার মালিকরা সাভারে ট্যানারি নিয়ে গেলেও অধিকাংশ মেশিন এখনো এখানে পড়ে আছে।

রমজান আরও জানান, সাভারে এখন যেটা হচ্ছে সেটা হলো, চামড়াকে প্রাথমিকভাবে ব্লু  করা। এই ব্লু  করার ফলে চামড়া ৪/৫ বছর ভালো থাকে। চামড়া ৭/৮ ধাপে প্রস্তুত হয়। সাভারে হচ্ছে একটা ধাপ।

কারখানার ভিতর নিয়ে রমজান ‘ব্লু’ চামড়ার স্ত‍ূপ দেখিয়ে জানান, ব্লু -এর পর আরও ৭টি ধাপে চামড়া প্রসেস হয়। গ্যাস, পানি ও বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় চামড়া প্রসেস করা যায়নি। এমনকি গ্যাস-বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ নিরবচ্ছিন্ন না হওয়ায় সাভারেও নেওয়া যাচ্ছে না।

ঘন বসতিপূর্ণ এলাকায় পরিবেশ দূষণরোধ ও বুড়িগঙ্গা নদীকে রক্ষায় হাজারীবাগ থেকে ট্যানারিকে সরিয়ে নিতে ২০১৩ সালে একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এই প্রকল্পের আওতায় হাজারীবাগ এলাকার ১৫৪টি ট্যানারিকে সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে স্থানান্তরিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

এই উদ্যোগের ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও ট্যানারি শিল্প স্থানান্তরিত করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে কারখানা সরানোর আলটিমেটাম দেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। ট্যানারি মালিকদের অবহেলার কারণে সেখানেও ব্যর্থ হয় মন্ত্রণালয়। অবশেষে, ৬ মার্চ হাজারীবাগের সব ট্যানারি কারখানা বন্ধ এবং বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্টের নির্দেশনায়, ৬ এপ্রিলের মধ্যে অভিযান শেষ করে ১০ এপ্রিলের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা বলা হয়। এরই প্রেক্ষিতে, পরিবেশ অধিদপ্তর ৮ এপ্রিল হাজারীবাগ ট্যানারিতে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ও টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্নের অভিযান পরিচালনা করে। পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে অভিযানে অংশ নেন ঢাকা ওয়াসা, তিতাস গ্যাস এবং বিদ্যুৎ সরাবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ডেসকো ও ডেসার কর্মকর্তারা।

এর ফলে অবসান ঘটে হাজারীবাগে দীর্ঘ ৬৭ বছর ধরে চলে আসা ট্যানারি শিল্পের। তবে এই ট্যানারি শিল্পের সূত্রপাত ঘটেছিল নারায়ণগঞ্জে ১৯৪৭ সালে। দেশ ভাগের পর সেই ট্যানারির নাম ছিল ‘ঢাকা ট্যানারি’। তিন বছর কার্যক্রম চলার পর ১৯৫০ সালে ঢাকা ট্যানারি হাজারীবাগে স্থানান্তরিত হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০১৭
এএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।