ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

কলকাতায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০২২
কলকাতায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন কলকাতায় শুরু হয়েছে ৪র্থ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব

কলকাতা: করোনা মহামারির কারণে টানা দুই বছর পর বন্ধ থাকার পর কলকাতার প্রাণকেন্দ্র নন্দনে শুরু হলো ৪র্থ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব। পাঁচ দিনব্যাপী এই উৎসবের শুভ সূচনা হয়েছে শনিবার (২৯ অক্টোবর)।

বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এই চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি ও পর্যটন দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সারোয়ার কমল, পরিচালক গৌতম ঘোষ, কলকাতাস্থ বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস ও প্রেস সচিব রঞ্জন সেন। বিনোদন জগতের তারকাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জয়া আহসান, চঞ্চল চৌধুরী, অনির্বাণ চক্রবর্তী।



অনুষ্ঠানে পরিচালক গৌতম ঘোষ আক্ষেপের সুরে বলেন, দুই দেশের ব্যবসা হচ্ছে। এপাড় থেকে পেঁয়াজ রসুন যাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে পণ্য আসছে। তাহলে সিনেমা আদান-প্রদানে বাধাটা কোথায়? হয় এখানে এসে বাংলাদেশিদের কাজ করতে হচ্ছে না হয় বাংলাকে যেতে হচ্ছে বাংলাদেশে। সরাসরি তৈরি সিনেমা আদান-প্রদানের সমস্যাটা কোথায়? আমি এই নিয়ে দুই দেশেই কথা বলেছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না।

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, দুই বাংলায় একই পাখির কলতান শুনি, একই নদী, একই জলবায়ুতে বেড়ে উঠেছি। সুতরাং বেড়াজাল বা রাজনৈতিক সীমারেখায় আমাদের বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে আটকে রাখা যায় না। সবার ওপর যেটা সত্য সেটা হলো, আমরা সবাই বাঙালি। বাঙালি মানেই আবেগ আছে। ঠিক একইভাবে কলকাতার ওপর আমাদের আবেগ আছে। এ শহর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শহর। সত্যজিত রায়, জগদীশ চন্দ্রের শহর। এ শহর আমাদেরও। এ শহরে আবেগের। বাংলাদেশের শিল্পীদের আপনারা আপন করে নিয়েছেন। আমরা আপন করেছি বাংলার শিল্পীদের অর্থাৎ শিল্পীদের কোনো বেড়াজাল নেই। একইভাবে চলচ্চিত্র শিল্পীদের সীমানা নেই। যেমন আমার সামনে জয়া আহসান বসে আছেন।



তিনি আরও বলেন, কলকাতায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করেছি। এর কারণ, বাঙালির শিল্প-সংস্কৃতি যেন কাঁটাতারে আবদ্ধ না হয়ে যায়। আমি মনে করি, আমাদের বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পী এবং কলকাতার চলচ্চিত্র শিল্পী, আমরা যদি যৌথভাবে কাজ করতে পারি তাহলে বিশ্বে একদিন বাংলা ছবি অন্য একটা জায়গা করে নিতে পারবে। এর জন্য যৌথভাবে কাজ করা প্রয়োজন। এখন দুই দেশের মধ্যে যৌথ প্রযোজনার সিনেমা দুই দেশেই দেখানো সম্ভব। আমি মনে করি বিষয়টি আরও সহজ করা দরকার।

বাবুল সুপ্রিয়ো বলেন, করোনার পর এটাই প্রথম বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব। বাইরে যে উচ্ছাস, তাতে প্রমাণ হচ্ছে বাঙালি শিল্প-সাহিত্য ও চলচ্চিত্র কোনোদিন আলাদা করে দেখে না।

এ বছর ৩৭টি বাংলাদেশি সিনেমা নিয়ে চতুর্থ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব সাজানো হয়েছে। এসব ছবি দেখানো হচ্ছে কলকাতার নন্দনের ১, ২ ও ৩ নম্বর প্রক্ষাগৃহে। শনিবার চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হয়ে শেষ হবে আগামী ২ নভেম্বর। প্রতিদিন স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে প্রেক্ষাগৃহগুলো।



উৎসবের প্রথমদিনে প্রদর্শিত হয়েছে—‘হাসিনা এ ডটারস টেল’, ‘হাওয়া’, ‘পরান’ এবং ‘চিরঞ্জীবী মুজিব’। তবে কলকাতাবাসী এখন হাওয়ায় ভাসছে। চাহিদা থাকার জন্য এ দিন দুবার দেখানো হয় ‘হাওয়া’ সিনেমাটি। স্থানীয় সময় বেলা ১২টায় প্রথম প্রদর্শনীতে দর্শক আসন ভরে যাওয়ায় মেঝেতে বসে ‘হাওয়া’ সিনেমা দেখেন অনেকেই। ১২টায় যারা লাইন দিয়ে হলে প্রবেশ করতে পারেননি তারা ছয় ঘণ্টা লাইন দিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার শো দেখে ফেরেন।

হাতেগোনা কয়েকটি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ছাড়া বাংলাদেশের সিনেমার স্বাদ মেলে না কলকাতাবাসীর। তাই উৎসবের এই সময়টার জন্যই অপেক্ষা করেন তারা।

এবার উৎসবের পাঁচদিনে (২৯ অক্টোবর-২ নভম্বর) যে ৩৭টি বাংলাদেশি সিনেমা দেখানো হবে—গুনীন, হৃদিতা, বিউটি সার্কাস, হাওয়া, পরাণ, পায়ের তলায় মাটি নাই, পাপ পুণ্য, কালবেলা, চন্দ্রাবতী কথা, চিরঞ্জীব মুজিব, রেহানা মরিয়ম নূর, নোনা জলের কাব্য, রাত জাগা ফুল, লাল মোরগের ঝুঁটি, গোর, গলুই, গণ্ডি, বিশ্ব সুন্দরী, রুপসা নদীর বাঁকে, শাটল ট্রেন, মনের মত মানুষ পাইলাম না, ন-ডরাই, কমলা রকেট, গহীন বালুচর এবং ৪৯ বাতাস।

প্রামাণ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে থাকছে—‘হাসিনা এ ডটারস টেল’, ‘বদ্ধভূমিতে একদিন’, ‘একটি দেশের জন্য গান’ এবং ‘মধুমতি পারের মানুষটি: শেখ মুজিবুর রহমান’।

স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে থাকছে আটটি ছবি। সেগুলো হলো—ধড়, ময়না, ট্রানজিট, কোথায় পাব তারে, ফেরা, নারী জীবন, কাগজ খেলা এবং আড়ং।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০২২
ভিএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।