ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

বছর শেষে বঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন, কোন্দল থামছে না শাসকদলে

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০২২
বছর শেষে বঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন, কোন্দল থামছে না শাসকদলে

কলকাতা: বছর পেরোলেই পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন। গ্রামস্তরের এই ভোট অনেটাই নির্ধারণ করবে ২০২৪ সালে ভারতের লোকসভা নির্বাচনে মমতার ভূমিকা।

একইভাবে পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফল, বড় নির্নায়ক ভূমিকা রাখবে রাজ্য বিজেপির জন্য। কারণ, নদীমাতৃক পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক ক্ষমতায়ণের বড় শক্তি গ্রামবাংলাবাসী। আর সে কারণে বাংলার প্রতিটা রাজনৈতিক দল পঞ্চায়েত ভোটের জন্য শক্তি সঞ্চয় করছে।

গত পঞ্চায়েত ভোটের নিরিখে একচ্ছত্র আধিপত্য দেখিয়েছে শাসক দল তৃলমূল কংগ্রেস। বিরোধীদের অভিযোগ শাসক দল ভোট করতে দেয়নি। এমনকী, বেশিরভাগ পঞ্চায়েতে শাসকের চোখরাঙানির কারণে প্রার্থীই দিতে পারেনি বিরোধীরা। এমন অভিযোগ জমা পড়েছিল অসংখ্য। তারমধ্যে বর্তমান মমতার সরকার একের পর এক দুর্নীতিতে বিদ্ধ। বিভিন্ন কেচ্ছা-কেলেঙ্কারী শাসকদলের বিরুদ্ধে প্রতিদিন সামনে আসছে। যে কারণে, আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

তৃনমুলের তরফে প্রকাশ্যে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, দল কলকাতা থেকে সব নজর রাখছে। যাদের নামের সাথে দুর্নীতি জড়িত আছে তাদের টিকিট দেওয়া হবে না। এমনকী, কথায় লাগাম টানতেও বলা হয়েছে। কিন্তু, কে শোনে কার কথা। যেমন, উত্তর ২৪ পরগণার বনঁগা জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস তথা বাগদার তৃণমূল বিধায়ক সম্প্রতি বলেছেন, কলকাতার ঠাণ্ডাঘরে বসে নেতাদের কথায় পঞ্চায়ের ভোটের প্রার্থী নির্বাচন হবে না। প্রার্থী ঠিক করবেন স্থানীয়রা। বিজয়া সম্মেলনে এক অনুষ্ঠানে বিশ্বজিৎ দাস আরও বলেন, কর্মীরা সুখ-দুঃখের সাথী হিসাবে যাকে প্রার্থী বাছাই করবে দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব তাতেই মান্যতা দিতে হবে। ঠাণ্ডা ঘরে বসে কেউ প্রার্থী বাছাই করলে মানব না।

সম্প্রতি আর এক অনুষ্ঠানে অভিনেত্রী সায়ন্তিকা ব্যানর্জী বলেন, মুসলমানরা যেমন সন্তানদের মির্জাফর নাম রাখেন না। আমি বলে যাচ্ছি, একইভাবে শুভেন্দুর নাম আপনার সন্তানদের দেবেন না। যদিও ২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাঁকুড়া জেলায় শাসকদলের প্রার্থী হয়েও বিজেপির কাছে পরাজিত হয়েছিলেন সায়ন্তিকা। তা সত্বেও মুখ্যমন্ত্রী কথায় তৃণমূল মহিলা সমিতিতে বড় দায়িত্বে আছেন। আর এক এমপি সদস্য সৌগত রায়, পার্থর গ্রেফতারির পর বলেছিলেন, শাসকদলের বিরুদ্ধে বিরোধীরা কোনো কথা বললে, তাদের চামড়া দিয়ে মানুষ জুতো বানাবে। অথচ মমতা - অভিষেক বারেবারে না করলেও এনাদের মুখ থেকে বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী বা বিরোধী দল নিয়ে কটু কথা থামছেই না।

এদিকে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা যখন একের পর এক দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন সেই সময় কর্মী-সমর্থকদের সতর্ক হওয়ার বার্তা দিলেন উত্তর ২৪ পরগণার বারাসতের বিধায়ক তথা অভিনেতা চিরঞ্জিত চক্রবর্তী। অপর একটি বিজয়া সম্মিলনীতে বলেছেন, চালে দু-চারটে কাঁকর থাকতেই পারে। কিন্তু তা বলে ভাত খাব না এমনটা নয়। সবার ওপর নজর রাখছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। তাতে সব খুঁত, বিচারধারা, লোভ ধরা পড়ে যাচ্ছে।

এরপরই বারাসাতের বিধায়ক আরো বলেন, তাছাড়া আমাদের হাতে একটা লাঠি আছে, সেটি হচ্ছে ‘সিআইডি’,  আর কেন্দ্রের দুটো রিভলবার আছে। একটা ‘ইডি’, অন্যটি ‘সিবিআই’। ফলে লাঠি দিয়ে রিভালবারের বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব নয়। তাই সংযত হোন। তবে কে এই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং সংযত হওয়া সাবধানবানী কাদের উদ্দেশ্যে করে চিরঞ্জিত বলেছেন, তা তিনি স্পষ্ট করেনি। কারণ, দলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইডি, সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে যারা মুখ খুলেছেন তারা হলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক।

ফলে চিরঞ্জিতের এই মন্তব্য নিয়ে শোরগোল পড়তেই পাল্টা বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, কে, কাকে কি বলছেন, কে কার পাশে আছেন তারাই জানেন। আমার মনে হয় না কেউ কাউকে দেখছে। তাদের দলে যে তরজা চলছে তাতে দলের আর কিছু আছে বলে মনে হয় না।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০২২
ভিএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।