ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

কলকাতায় ফের লাখ লাখ রুপি উদ্ধার, চলছে ইডির তল্লাশি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২, ২০২২
কলকাতায় ফের লাখ লাখ রুপি উদ্ধার, চলছে ইডির তল্লাশি

কলকাতা: কলকাতায় আবারও লাখ লাখ রুপি উদ্ধার করলো পুলিশ। তবে এখনও টাকার পরিমাণ জানা যায়নি।

গোনার কাজ শুরু হয়েছে।

মঙ্গলবার (২ আগস্ট) কলকাতা পুলিশের সদর দফতর লালবাজারের ঠিক উল্টোদিকে বিকানের বিল্ডিংয়ে তল্লাশি চালিয়ে লাখ লাখ রুপি উদ্ধার করেছে পশ্চিমবঙ্গের ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টর (সিআইডি) গোয়েন্দারা।

গত শনিবার (৩০ জুলাই) কলকাতা থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে হাওড়ায় জেলার রানিহাটি থেকে সন্ধ্যায় ৪৯ লাখ রুপি উদ্ধার করেছিল পুলিশ। নাম জড়ায় ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের তিন কংগ্রেস বিধায়কের। ওই রাতেই তাদের গ্রেফতারের পর তদন্তে নেমে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে সিআইডির হাতে। তাদের গতিবিধি নিয়ে আগাগোড়াই পুলিশের সন্দেহ ছিল।

গ্রেফতার বিধায়করা জানিয়েছিলেন, ঝাড়খণ্ডের আদিবাসীদের শাড়ি কিনতেই সেই টাকা বড়বাজার নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। কিন্তু ঝাড়খণ্ড থেকে গৌহাটি হয়ে কেন কলকাতায় এসছিলেন? উত্তরে অসঙ্গতি পেতেই তদন্তে নামে সিআইডি।

গত শনিবার দুপুরে ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামের পেছনে কলকাতার সদর স্ট্রিটের একটি হোটেলে উঠেছিলেন তিন বিধায়ক। সেই হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, হোটেলের রেজিস্টারে নাম না লিখেই কিছুক্ষণের জন্য রুম নিয়েছিলেন তারা। স্থানীয় সময় ৩.৮ মিনিটে হোটেল ওয়ালসনের ১০৬ নম্বর রুমে ওঠেন তিন কংগ্রেস বিধায়ক। ঠিক ৬ মিনিট পর বেরিয়ে যান তারা।

সিআইডির অনুমান, টাকা নিতেই ওই হোটেলে গিয়েছিলেন তিন বিধায়ক। দ্রুত টাকা নিয়ে গাড়ি করে বেরিয়ে যান তারা। তাদের সঙ্গে থাকা একজন স্কুটার নিয়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে যান। সেই গাড়িই হাওড়ার রানিহাটিতে আটক করে পুলিশ। গাড়ি থেকে উদ্ধার হয় ৪৯ লাখ রুপি।

স্কুটার আরোহীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (২ আগস্ট) কলকাতা পুলিশের সদর দফরের ঠিক উল্টোদিকের একটি বাড়িতে টাকার উৎস পেতে তল্লাশি শুরু করেন সিআইডির কার্তারা। শেয়ার ট্রেডার মহেন্দ্র আগরওয়াল নামে এক ব্যবসায়ীর থেকে টাকা নিয়ে বিধায়কদের পৌঁছে দিয়েছিলেন স্কুটার আরোহী। সেই বাড়ি থেকেই এদিন মিলেছে আরও লাখ লাখ রুপি। পলাতক মহেন্দ্র আগরওয়াল।

সিআইডির ধারণা, শেয়ার ব্যসার পাশাপাশি ওই বাড়ি থেকে অবৈধ হুন্ডির ব্যবসা চলতো। সিআইডি ওই আগরওয়ালকে খুঁজছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই অর্থের সাথে রাজনৈতিক যোগও রয়েছে।

এদিকে, শিল্পমন্ত্রী পার্থ-কাণ্ডে জনরোষের বহর বাড়ছে। মঙ্গলবার শিল্পমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে জুতা ছুড়ে মারেন এক নারী। তবে ওই জুতো নিশানা ভ্রষ্ট হয়। পার্থর গাড়িতে লেগে জুতো পড়ে যায়। এদিন ইডির রিমান্ড থেকে বেহালার এক হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর সাময়িক বহিষ্কৃত শিল্পমন্ত্রীকে গাড়িতে তোলা হচ্ছিল। সেই সময় শুভ্রা ঘড়ুই নামে এক নারী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিজের জুতা ছুড়ে মারেন।

পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে লক্ষ্য করে জুতা ছুড়ে মার শুভ্রা বলেন, আত্মীয়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে এসেছিলাম। দেখি ঠাণ্ডা গাড়িতে (এসি গাড়ি) ওনাকে নিয়ে আসা হয়েছে। ওনারা লোকের টাকা মেরে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি করেছেন। কলকাতার একাধিক জায়গায় ফ্ল্যাট কিনেছেন। বড় ঠাণ্ডা গাড়ি করে হাসপাতালে আসছেন! খুব রাগ উঠে গিয়েছিল। ওনাকে গলায় দড়ি লাগিয়ে টানতে টানতে নিয়ে আসা উচিত। আমরা ঠিক মতো ডাক্তার দেখাতে পারছি না। আর উনি ঠাণ্ডা গাড়ি চড়ে চিকিৎসা করাতে এসেছেন। তাই জুতো ছুড়েছি। জুতোটা ওনার টাকে লাগলে খুশি হতাম। হাজার মানুষ চাকরি পায়নি ওদের জন্য।

এদিন ফের পার্থ চট্টোপাধ্যায় দাবি করেছেন যে, উদ্ধার হওয়া বিপুল টাকা তার নয়। সাংবাদিকদের একই প্রশ্নে বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায় হাসপাতালে ঢোকার সময় বললেছেন, এই টাকা আমার নয়। আমার অনুপস্থিতিতে এবং আমার অজান্তে ফ্ল্যাটে টাকা ঢোকানো হয়েছে।

মঙ্গলবা ইডি ফের ৬ জায়গায় তল্লশি অভিযান চালাচ্ছে। দুটি ডায়েরি উদ্ধার করেছে। তাতে কোথায় কোথায় টাকা আসত-যেত তার তথ্য মিলছে। লেক ভিউ, পণ্ডিতিয়ার রোড ২ আবাসন, পাটুলিতে অর্পিতার একটি পার্লার, বরানগর, মাদুরদহে ২টি বাসা মিলিয়ে ৬ জায়গায় ইডির তল্লাশি অভিযান চলছে।

এখনও অবধি পার্থ কাণ্ডে টালিগঞ্জ এবং বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাট থেকে ৫৫ কোটি ৪৩ লাখ রুপি, ছয় কেজি স্বর্ণের গহনা ও বার, মিলেছে প্রচুর সম্পত্তির দলিলও। এরপর থেকে প্রকাশ্যে আসছে একের পর এক সম্পত্তির খবর। বাড়ি, ফ্ল্যাট, জমি, গাড়ির যে তালিকা এখনও পর্যন্ত উঠে এসেছে, তার বাজারমূল্য ১০০ কোটি রুপির কম নয় বলে, ইডির ধারণা। পাওয়া গেছে একাধিক ভুয়া কোম্পানি। অর্পিতার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৮ কোটি রুপি পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০২২
ভিএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।